রাজবাড়ীর সাংস্কৃতিক অঙ্গনে প্রাণ ফেরাল মঞ্চনাটক

রাজবাড়ী থিয়েটারের মঞ্চে ফেরার মাধ্যমে জেলায় অনেক দিন ধরে ঝিমিয়ে পড়া সাংস্কৃতিক অঙ্গন প্রাণ ফিরে পেয়েছে।

রাজবাড়ী প্রতিনিধিশামিম রেজা, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 May 2022, 10:24 AM
Updated : 25 May 2022, 10:24 AM

প্রায় দুই যুগ বিরতি দিয়ে জেলার পুরনো এই নাট্য সংগঠনটি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ করে মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’। জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে নাটকটি দেখতে আসেন সাধারণ দর্শক, শিক্ষার্থী, স্থানীয় রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তাসহ অনেকে।

রাজবাড়ী সরকারি বালিক উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী জেসিয়া ইসলাম দীর্ঘদিনে একটি স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছেন বলে জানান।

জেসিয়ার ভাষ্য, “কবর নাটকটি বইয়ে পড়েছি। মঞ্চে দেখার ইচ্ছা ছিল। রাজবাড়ীতেই সেই ইচ্ছা পূরণ হবে ভাবিনি। লাইটিং, মেকআপ, পোশাক—সবই ভাল লেগেছে। আর সবার অভিনয় আমার কাছে দারুণ লেগেছে।”

রাজবাড়ীতে নিয়মিত নাটক মঞ্চস্থ করার দাবি জানান জেসিয়া।

এই প্রথম মঞ্চনাটক দেখলেন রাজবাড়ী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মেজবাহ আহসান।

মেজবাহ বলেন, “ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত এই নাটকটি বইয়ে পড়েছি। প্রথমবার মঞ্চে দেখার সুযোগ হল। খুবই ভাল লেগেছে।”

নাটক দেখতে হাজির হয়েছিলেন রাজবাড়ী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা ফকির আব্দুল জব্বার।

জব্বারের ভাষায়, “দীর্ঘদিন পর রাজবাড়ী থিয়েটার ফিরে এসেছে। নাটকটি খুবই ভাল লেগেছে। যারা অভিনয় করেছে তারা সুন্দরভাবে নাটকের চরিত্রগুলো ফুটিয়ে তুলেছেন। আশা করি রাজবাড়ী থিয়েটার তাদের এই ধারা অব্যাহত রাখবে।”

শিল্পচর্চায় রাজবাড়ীকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যশা ব্যক্ত করেন স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মী কবি নেহাল আহমেদ। তিনি রাজবাড়ী থিয়েটারকে ধন্যবাদ জানান।

নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন রাজবাড়ী থিয়েটারের সদস্যসচিব ফয়েজুল হক কল্লোল। কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন বিনয় কুমার সাহা। গার্ড চরিত্রে ছিলেন রাজবাড়ী থিয়েটারের আহ্বায়ক বাবলা চৌধুরী, হাফিজ চরিত্রে কাজী মিজানুর রহমান পলাশ, মুর্দা ফকির চরিত্রে সৌমিত্র শীল চন্দন, মা চরিত্রে স্মৃতি ইসলাম, ছাত্র চরিত্রে রবিউল আওয়াল, আনিসুর রহমান, এহসান অভিনয় করেন। আর কেরানি চরিত্রে অভিনয় করেন রিপন চক্রবর্তী।

বাবলা বলেন, “আমরা এভাবে সাড়া পাব ভাবতে পারি নাই। সবাই এত উচ্ছ্বসিত ছিল যে, মনে হচ্ছিল নাটককে কেন্দ্র করেই জেলায় আজ উৎসব হচ্ছে। সবার এই ভালবাসা আমাদের মঞ্চে টেনে নিয়ে আসবে।

“তবে পরিতাপের বিষয় হচ্ছে ঝিমিয়ে পড়া নাট্যঙ্গকে বাঁচাতে কোনো অনুদান নেই। আমাদেরকে একটা নাটক মঞ্চস্থ করার জন্য অনেকের দ্বারে দ্বারে যেতে হয়। যেটি নাট্যকর্মী হিসাবে অপমানেরও বটে।”

সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ঝিমিয়ে পড়া অবস্থা কাঠিয়ে উঠে আবারও সচল করতে কাজ করে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন ফয়েজুল হক কল্লোল।

কল্লোল বলেন, এখন থেকে নিয়মিত নাটক মঞ্চস্থ করার চেষ্টা করবেন তারা, যাতে নতুন প্রজন্ম মঞ্চনাটকের প্রতি আগ্রহী হয়।

“এই ধারা যদি বেগবান করা যায় তাহলে হয়ত যারা টিভি, ইউটিউবে আসক্ত তারা মঞ্চনাটক দেখতে আসবে।”