সিঙ্গাপুর পাঠানোর কথায় তুলল চট্টগ্রামের বিমানে

ভাতিজাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানোর কথা বলে ‘চার লাখ টাকা নিয়ে’ চট্টগ্রামের বিমানে তুলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক নারী ও তার ছেলের বিরুদ্ধে।

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 May 2022, 05:54 PM
Updated : 15 May 2022, 05:54 PM

আলেয়া বেগম নামের এই নারী ভোলার বোরহান উদ্দিন উপজেলার কুদবা ইউনিয়নের কুদবা গ্রামের পশু চিকিৎসক বশির আহমেদের স্ত্রী। তার বাবার বাড়ি লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চরমার্টিন ইউনিয়নের বটগাছতলা এলাকায়।

প্রতারণার শিকার মো. জুয়েল কমলনগর উপজেলার চরমার্টিন ইউনিয়নের বটগাছতলার শহীজল মাঝির ছেলে। শহীজল মাঝির বোন আলেয়া বেগম।

গত ২৯ এপ্রিল আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে বাদীর ছেলে মো. জুয়েলকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি চট্টগ্রামগামী বিমানে তুলে দেন।

এই অভিযোগে গত সোমবার [৯ মে] জুয়েলের বাবা শহীজল মাঝি বাদী হয়ে আলেয়া ও তার ছেলে আওলাদ হোসেনসহ ৬ জনের নামে লক্ষ্মীপুরেরেএকটি আদালতে মামলা করেছেন।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন আওলাদের স্ত্রী আয়েশা আক্তার, শ্যালক সানী, দুলাভাই শামীম হোসেন।

বাদীর আইনজীবী মুনসুর আহমেদ দুলাল জানিয়েছেন, আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), নোয়াখালী কার্যালয়কে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, গত ২৯ এপ্রিল সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়ার কথা বলে জুয়েলকে ঢাকা-চট্টগ্রামের বিমানের একটি টিকিট ধরিয়ে দেওয়া হয়। চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে নেমে প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারেন জুয়েল। এরপর থেকে আলেয়া বেগম, তার ছেলে আওলাদ হোসেনসহ আসামিরা আত্মগোপনে রয়েছেন।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, ৩০ বছর পর শ্বশুরবাড়ি ভোলা থেকে আলেয়া বেগম ৬ মাস আগে চরমার্টিনে ভাই শহীজলের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। আলেয়া আসার কিছুদিন পর তার ছেলে আওলাদ হোসেনও বেড়াতে আসেন। তখন আলেয়ার ভাই শহীজল জানতে পারেন, আওলাদ পারিবারিক কলহের জের ধরে স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন। এরপর বোনের কথায় শহীজল পাত্রী দেখে লক্ষ্মীপুরেই তাকে দ্বিতীয় বিয়ে করান।

অভিযোগে বলা হয়, এক পর্যায়ে আলেয়া জানান আওলাদের প্রথম শ্বশুর তাকে সিঙ্গাপুরে একটি ভিসা দিয়েছে। ২-৩ দিনের মধ্যেই তাকে সিঙ্গাপুর যেতে হবে। তা না হলে ভিসা বাদ হয়ে যাবে। এজন্য দ্বিতীয় শ্বশুরদের কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা নিয়ে দিতে হবে। শ্বশুরপক্ষ থেকে টাকা নেওয়ার পরদিনই বিদায় নিয়ে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে আওলাদ মামার বাড়ি থেকে বের হয়।

একদিন পর শহীজলদের ফোনে কল দিয়ে আওলাদ সিঙ্গাপুর পৌঁছেছেন বলে জানান। এ সময় মামাতো ভাই জুয়েলকেও সিঙ্গাপুর নেওয়ার জন্য বলেন। এতে আলেয়া তার ভাই শহীজলের কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা দাবি করেন। এরপর এটি ৯ লাখ টাকায় সমঝোতা হয়। এর মধ্যে শহীজলকে ৫ লাখ টাকা দিতে বলে। বাকি টাকা আলেয়া নিজে দেবে বলে জানান।

অনলাইনে বিদেশি ফোন নম্বরের মতো নম্বর দিয়ে প্রায়ই শহীজলের কাছে ফোন দিতেন আওলাদ। এতে শহীজল মাঝি এনজিও, তার তিন মেয়ে জামাইয়ের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ৪ লাখ টাকা সংগ্রহ করেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, টাকা জোগাড়ের একদিন পরই ২৯ এপ্রিল সিঙ্গাপুরের ফ্লাইট আছে বলে জানান আসামি আলেয়া। ওইদিন সকালে নগদ চার লাখ টাকাসহ বোন আর ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় শাহজালাল বিমানবন্দরে রওনা হন শহীজল মাঝি। বিমানবন্দরে যাওয়ার পর তার বোন এক ব্যক্তিকে টাকা দিতে বলেন। ৪ লাখ টাকা দেওয়ার পরপরই বাদীর ছেলে জুয়েলকে বিমানের টিকিট দিয়ে বিমানে উঠতে বলা হয়।

অভিযোগে বলা হয়, জুয়েল বিমানবন্দরের ভেতর দুইটি গেট অতিক্রম করার পর ফুফাতো ভাই আওলাদের দেখা পান। তখন আওলাদ তাকে ভয় দেখিয়ে বিমানে ওঠান। এর ঘণ্টাখানেক পর বিমান চট্টগ্রাম পৌঁছে। চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে তাকে একটি হোটেল কক্ষে নিয়ে অস্ত্র দেখিয়ে মেরে ফেলার ভয় দেখানো হয় যাতে এ ঘটনা কাউকে না জানান।