‘বাপ জন্মেও ভাববার পাই নাই দালান ঘরে ঘুম পারমু’

“বাপ জন্মেও ভাববার পাইনাই দালান ঘরে ঘুম পারমু। ঘরের ছড়ানি প্যালাম; তাও বিশ্বাস হবানছে না; মনে হবাচ্ছে ব্যানা খোয়াব দেখপানছি।”

জিয়া শাহীন বগুড়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 April 2022, 06:07 PM
Updated : 26 April 2022, 06:07 PM

অতীতে ঝড়-বৃষ্টিতে রাত জেগে কাটানো স্মৃতি মনে করে যমুনার ভঙনে গৃহহীন স্বপ্না বেগম বেগম কথাগুলো বলছিলেন।

এবারের ঈদুল ফিতরে বগুড়ায় ঈদ উপহার হিসেবে ঘর পেয়ে তার এই অভিব্যক্তি। তার মতো আরও অনেকেই এমন অনুভূতি প্রকাশ করেছেন।  

মঙ্গলবার সকাল ১১টায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সারা দেশের মত বগুড়ার ধুনট উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামের উপকারভোগীদেরও জমির দলিল এবং ঘরের চাবি হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

চাবি হস্তান্তরের আগে সেখানে ঘর পাওয়া লোকজনসহ আশপাশের গ্রামের লোকও এসেছিল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঘর পাওয়া লোকদের কথাবলা শোনার জন্য।

দেখা গেছে চুনিয়াপাড়ায় ঘর পাওয়া দরিদ্র লোকদের অধিকাংশই যমুনার ভাঙনে গৃহহীন হওয়া মানুষ। তাদের অনেকেই ২৫-৩০ বছর গৃহহীন হয়ে যমুনার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধে বসবাস করতেন।

ঘর পেয়ে আনন্দ অনুভূতিতে শাহ আলী বলেন, “বাড়ি আছিল সারিয়াকান্দী উপজেলার আওলাকান্দী গ্রামে। যমুনা ১২ বার জায়গা-জমি, ঘর নিয়া গ্যাছে। আছিলাম বান্ধের উপর। শ্যাশ বয়সে খাবার যাই খাই ঘুম পাইরা আরাম পামু। খোদা হাসিনারে অনেকদিন ব্যাচা আখো।”

হাওয়া বেগমের বাড়ি ছিল শহড়াবাড়ী গ্রামে। যমুনার ভাঙনে গৃহহীন হয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন শিমুলবাড়ী গ্রামে অন্যের জায়গায়। এক ঘরে ঠাসাঠাসি করে থাকতেন পরিবারের পাঁচ সদস্য নিয়ে।

ঘর পেয়ে হাওয়া বেগম বলেন, “ভাঙা ঘরে থাকছি। বৃষ্টি আলেই পানি পড়ে। ঘরে কুত্তা আসে ভাঙা বেড়া দিয়া। কী কমু, ঘর দেখ্যা মন ভইরা গেছে। জুয়ান  ম্যাছোল [মেয়ে] নিয়া ভাঙা ঘরে ভয়ে আছিলাম। আর চিন্তা নাই।”

স্থানীয় সংসদ সদস্য হাবিবর রহমান বলেন, অসহয় মানুষের পাশে শেখ হাসিনা আছেন; এটা তার প্রমাণ। শেখ হাসিনার উন্নয়ন মানে সুখী বাংলাদেশ। 

বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. জিয়াউল হক বলেন, ‘মুজিববর্ষ উপলক্ষে তৃতীয় পর্যায়ে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য নির্মিত ঘরগুলো এবারের ঈদ উপহার হিসেবে হস্তান্তর করা হলো। 

ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার মোহন্ত বলেন, “দুঃখী মানুষের মুখে প্রধানমন্ত্রীর হাসি ফোটানোর গল্পের এক প্লট গৃহহীনদের গৃহ দেওয়া। প্রতিটি ঘর যেন টেকসই হয়, সে কারণে দিনরাত আমি মাঠে থেকে নির্মাণ কাজ শেষ করেছি। প্রকৃত গৃহহীনদের ঘর দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে যমুনার ভাঙনে গৃহহীন হয়ে পড়া অসহয় মানুষদের।  অনিয়মের কোনো সুযোগ রাখিনি।”

জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী মঙ্গলবার [২৬ এপ্রিল] প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে ৩২ হাজার ৯০৪টি গৃহ হস্তান্তর কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করেন। এ পর্যায়ে বগুড়ার ১২টি উপজেলায় ৯৩০টি পরিবারের মাঝে ঘর প্রদান করা হয়।

১২টি উপজেলার মধ্যে সারিকান্দিতে ১৮০, ধুনটে ১৫০, শিবগঞ্জে ৬৬, সোনাতলায় ৩৫, কাহালুতে ৫৪, শেরপুরে ১০০, গাবতলীতে ৬৫, বগুড়া সদরে ৬৯, শাজাহানপুরে ৩২, নন্দীগ্রামে ১২৮, আদমদীঘি ১৫ এবং দুপচাঁচিয়ায় ৩৬টি ঘর ভূমিহীন পরিবার পাবে।

বগুড়া জেলায় ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মধ্যে ১ম ও ২য় পর্যায়ে ২৩০৯টি পরিবারকে ঘর দেওয়া হয়। আর ৩য় পর্যায়ে ৯৩০টি ঘর দেয়া হলো।

ধুনটের চুনিয়াপাড়ায় ঘর বিতরণে বগুড়া- ৫ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবর রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার মোহন্ত, ধুনট পৌরসভার মেয়র এজিএম বাদশাসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।