বান্দরবানে ‘প্রথম’ মারমা-বাংলা অভিধানের মোড়ক উন্মোচন

বান্দরবানে ‘প্রথম’ মারমা-বাংলা অভিধান বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। বইয়ের লেখক শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর জুয়েল বড়ুয়া।

বান্দরবান প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 April 2022, 04:22 PM
Updated : 9 April 2022, 04:22 PM

জেলা শহরে মধ্যমপাড়ায় মাস্টার গেস্ট হাউস মিলনায়তনে শুক্রবার সকালে এ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন বান্দরবান ডনবস্কো উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ও মারমা ভাষার লেখক-গবেষক ক্য শৈ প্রু খোকা।

মোড়ক উন্মোচনকালে তিনি বলেন, “মারমা সমাজের কেউ এখনও নিজেদের মারমা ভাষায় অভিধান রচনা করতে পারেনি। কিন্তু নিজের মাতৃভাষা মারমা না হয়েও এমন একজন প্রথম মারমা-বাংলা ভাষায় অভিধান রচনা করেছেন, যেটি দৃষ্টান্তমূলক একটা উদাহরণ হয়ে থাকবে।

“মারমা সমাজে যারা বাংলা ভাষায় শিক্ষিত কিন্তু নিজের মাতৃষাভায় পড়তে জানে না, তাদের জন্য বইটি ভালো সহায়ক হবে। অভিধানটি মারমাভাষী ছাড়াও অনেকর উপকারে আসবে।”

অভিধানটি রচয়িতা জুয়েল বড়ুয়া চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায় আব্দুর রহমান সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। ২০১৭ সাল থেকে জুয়েল বড়ুয়া নিজ উদ্যোগে মারমা ভাষার বর্ণমালা ও ভাষাশিক্ষা চর্চা করে আসছেন বলে তিনি জানান।

জুয়েল বলেন, মারমা ভাষায় বিভিন্ন লেখা ও বইপত্র থাকলেও এটিই প্রথম মারমা সম্প্রদায়ের মারমা থেকে বাংলা উভয় ভাষায় লেখা প্রকাশিত প্রথম অভিধান। এ অভিধানটির মোট সংখ্যা ৩৭০ পৃষ্ঠা।

মোড়ক উন্মোচন আলোচনা সভায় জুয়েল বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীতে দুই বছর বিদ্যালয় বন্ধ থাকার সময় তিনি এর পাণ্ডুলিপি তৈরি করেন। সম্পাদনার কাজে মারমা ভাষা ও বর্ণমালা জানেন এমন পাঁচজনের সহযোগিতা নেন। গত মাসে বইটি প্রকাশ করা হয়।

“প্রকাশিত অভিধান বইয়ে শব্দগত অর্থ ও বাংলা অনুবাদে কিছু ভুলক্রুটি থাকতে পারে। মারমা, রাখাইন ও বার্মিজ বর্ণমালা একই রকম হওয়ায় উচ্চারণ দিক দিয়ে কিছু মিশ্রণ হতে পারে। এগুলো মারমা ভাষার বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নিয়ে পরবর্তী সংস্করণে সংশোধন করা হবে।”

জুয়েল বলেন, ২০১৭ সালে বান্দরবানের রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার সময় সেখানখার বৌদ্ধবিহার পরিচালিত ‘উসারা পাঠাগারে’ মারমা ভাষা শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিয়ে প্রায় দেড় বছর মারমা বর্ণমালা, ভাষা ও উচ্চারণ আয়ত্ত করেন তিনি।

“এরপর মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন থেকে অভিধান বই সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু দেখা যায়, সব উচ্চারণ বার্মিজদেরই আদলে। পরবর্তীতে আরাকান থেকে আরাকান-ফালৌং অভিধান বই সংগ্রহ করে দেখি, সেখানে মারমাদের উচ্চারণ প্রায় পাওয়া যায়। তখন এ বইয়ের ওপর ভিত্তি করে অভিধান রচনার কাজে হাত দিই। এর বাইরে তিন পার্বত্য জেলা ও কক্সবাজারের কিছু এলাকা ঘুরে মারমাদের শব্দ ও উচ্চারণ সংগ্রহ করি।”

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রথম মারমা ভাষার চলচ্চিত্র ‘গিরিকন্যা-তংস্মাসে’র প্রযোজক মং উষাথোয়াই মারমা বলেন, বাংলাদেশে তিন পার্বত্য জেলা, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য ও মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে বসবাসরত মারমা জনগোষ্ঠীর সবাই মারমা ভাষা বললেও এলাকা ও অঞ্চলভেদে উচ্চারণ আলাদা। কিন্তু কোন এলাকার মারমা ভাষা প্রমিত ভাষা হবে সেটা এখনও ঠিক করা যায়নি। তবে প্রথম মারমা-বাংলা ভাষার অভিধান হিসেবে এ বইটি সবারই কাজে লাগবে।

বান্দরবান জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান থোয়াইংচপ্রু, জেলা দুনীর্তি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অংচমং মারমা, অনন্যা কল্যাণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ডনাইপ্রু নেলী, জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা উচিংমং মারমা, শিক্ষক শৈটিংপ্রু মারমা ও উথোয়াই য়াইং রাখাইন অনুষ্ঠানে ছিলেন।