প্রকৌশলীকে মারধরের অভিযোগ যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে

মারধর ও সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগে পটুয়াখালীতে এক যুবলীগ নেতা ও এক ঠিকাদারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

পটুয়াখালী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 April 2022, 06:41 PM
Updated : 3 April 2022, 06:41 PM

এলজিইডির সদর উপজেলা প্রকৌশলী মো. আজিজুর রহমানের অভিযোগ, রোববার দুপুরে সদর উপজেলা পরিষদ ভবনে তার কক্ষেই তাকে মারধর করা হয়েছে।

মামলার আসামি হলেন জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ সোহেল ও উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের স্বামী ঠিকাদার মো. জামাল হোসেন।

পটুয়াখালী সদর থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সরকারি কাজে বাধাদান ও মারধরের ঘটনায় উপজেলা প্রকৌশলী বাদী হয়ে দুজনের নামে একটি মামলা দায়ের করেছেন উপজেলা প্রকৌশলী।

অভিযোগে আজিজুর রহমান বলেন, তার কক্ষে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দুই আসামি তাকে মারধর করেন। ওই সময় তার ডাক-চিৎকারে দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এগিয়ে এসে রুমের দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করেন।

খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, এলজিইডির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীসহ জেলা দপ্তরের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান বলে তিনি জানান।

আজিজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনি এখানে যোগদান করার আগে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন নির্মাণের জন্য দরপত্র আহবান করা হয়েছে। দুটি দরপত্রই দশ ভাগ উচ্চদরে (অ্যাভাবে) চূড়ান্ত করে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, “কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের দাখিলকৃত দরপত্রে নিম্নদর থাকা সত্ত্বেও দশ ভাগ উচ্চ দরে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে; তাই ওই কাজের বিল দিতে মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পেতে হবে। না হলে আমি ফান্ড (টাকা) পাব না, বিলও দিতে পারব না।”

তিনি আরও বলেন, “আমি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য অনুমতির প্রয়োজন আছে বলায় উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান ও তার সাথে থাকা জামাল হোসেন আমাকে মারধর করেছেন। এ ঘটনায় সন্ধ্যায় দুজনের নামে মামলা করার জন্য থানায় অভিযোগ দিয়ে এসেছি।”

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের [এলজিইডি] পটুয়াখালী জোনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি যতটুকু শুনেছি এবং আমাকে উপজেলা প্রকৌশলী যা বলেছেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং অনাকাঙ্ক্ষিত।

এ ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি সে পাক আমরা সেটা চাই।

“বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে; ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাদের যেভাবে নির্দেশনা দিবে সেভাবে আমরা কাজ করব।”

এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম সরোয়ার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তেমন কিছুই হয়নি। বাস ভবনের টেন্ডার নিয়ে একটু ঝামেলা হয়েছে। প্রকৌশলী কাজ বাতিলের জন্য আমাকে চিঠি দিয়েছে। আমি প্রকৌশলীকে বলেছি তাদের সাথে সমন্বয় করে কাজ করতে। কাজ বাতিল হলে ঠিকাদারদের একটু মাথা গরম তো হবেই। পরে সকলকে নিয়ে মিলিয়ে দিয়েছি।”

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাত আরা নাহিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চিৎকার চেঁচামেচি শুনে আমি উপজেলা প্রকৌশলীর রুমে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি দুপক্ষের মধ্যে ঝগড়া-ঝাটি হচ্ছে। পরে উভয়ে উভয়কে দোষারোপ করছেন। তবে উপজেলা প্রকৌশলী বলেছেন তাকে মারধর করা হয়েছে। আর ভাইস চেয়ারম্যান তা আস্বীকার করেছেন। তবে ঘটনার তদন্ত করার পর আপনাদের বলতে পারব। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক স্যার আবগত আছেন।”

উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও সদ্য অনুমোদিত কমিটির জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সোহেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তেমন কিছু না, ডাকাডাকি এই। কাজ বাতিল নিয়ে এই আরকি।”

তার ভাষ্য, “আমাদের দুইটা ওয়ার্ক অর্ডার (কার্যাদেশ) দিয়েছিল, তা বাতিল করার চিঠি দিয়েছে। ওইটা নিয়ে জিজ্ঞাসা করায় চিল্লাচিল্লি করে কলিং বেল চাপ দিয়ে তার কর্মচারীদের ডেকে আনে। পরে নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা চেয়ারম্যান এসে বলে তোমরা নিচে নাম। আমরা নিচে নেমে আসি।”