সন্ধ্যা নামতেই মশার ঝাঁক চড়াও হতে থাকে। বাইরে থাকা যেমন কঠিন তেমনি ঘরের ভেতর বসবাসও অসহনীয় হয়ে পড়েছে। কয়েল জ্বালিয়েও নিস্তার নেই।
নগরীর কামাল কাচনা বোতলাপাড়ার বাসিন্দা আমির হেসেন বলেন, “মশারি ছাড়া থাকার উপায় নেই। বাচ্চাদের অনেক কষ্ট হয়। বাসাবাড়ি, কোচিং, পর্যটনকেন্দ্র সব জায়গাতেই মশার উপদ্রব। এমনকি খাওয়ার মধ্যেও মশা ঢুকে যায়। আমরা অতিষ্ঠ হয়ে গেছি।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ভাই, আমরা মশার অত্যাচারে অতিষ্ট। দিনের বেলায়ও মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হয়। মশারির ভেতরেই খাওয়া-দাওয়া সেরে নিতে হয়। না হলে মশার কামড়ে অবস্থা খারাপ। মশার অত্যাচারে রান্নাবান্নার কাজ করতেও সমস্যা হয়।”
মশার এসব উপদ্রব নিয়ে নগরবাসীর অভিযোগ নতুন নয়। শহরজুড়ে ময়লা-আবর্জনা-ড্রেন বছরের পর বছর সংস্কার না হওয়ায় ময়লা-পচা পানি আর ঝোপঝাড়-জঙ্গলে পরিণত হয়েছে এগুলো। তবে নগরীর পূর্ব থেকে পশ্চিমে বয়ে যাওয়া দীর্ঘ ১৬ কিলোমিটার খালটি ‘কাল’ হয়েছে নগরবাসীর জন্য।
ধাপ কাকোলনিলেন এলাকার বাসিন্দা কোহিনুর আকতার কেয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ”মাগরিবের আজানের পরে তো আর মশারির মধ্যে যাওয়া যায় না। সংসারের অনেক কাজ থাকে কিন্তু মশার উপদ্রব যে পরিমাণ তাতে কয়েল জ্বালিয়ে সমাধান হয় না। গত বছর সিটি করপোরেশন থেকে ফগার মেশিন দিয়ে ওষুধ ব্যবহার করেছে কিন্তু এ বছর এখনও এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেওয়াই হয়নি।”
রংপুর সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাহমুদুর রহমান টিটু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হঠাৎ করেই নগরীতে মশার উৎপাত বেড়েছে। সেহেতু সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত সকল ওয়ার্ডে মশা নিধনের কার্ক্রম চালু করা হয়েছে।
কথিত আছে, ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মায়ের মৃত্যুর পর রাজা জানকি বল্লভ রায় ১৮৯০ সালে নগরীর পূর্ব-পশ্বিম বয়ে যাওয়া শ্যামাসুন্দরী খালটি খনন করেছিলেন মশার উপদ্রব থেকে প্রজাদের রক্ষা করার জন্য। সংস্কারের অভাবে শত বছরের খালটিই মশার প্রজননের অন্যতম স্থানে পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, “আমি মনে করি, সকাল-সন্ধ্যায় যেন মশা কামড়াতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ ডেঙ্গু মশা সকাল-সন্ধ্যায় বেশি বের হয়।”
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন রংপুর মহানগর কমিটির সভাপতি ফখরুল আনাম বেন্জু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রংপুর নগরীতে যেভাবে মশার উৎপাত বেড়েছে, যদি এখনই ব্যবস্থা নেওয়া না যায় তাহলে মশাবাহিত রোগ বেড়ে যাবে। আমি মনে করি, রংপুর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মশা নিধনের কার্যক্রম পরিচালনা করা এখনি দরকার। তা নাহলে ভয়াবহ রূপ নিবে মশা।”
মশার এসব উপদ্রব বাড়ার পরেও নিধন কার্যক্রম এখনও শুরু করতে না পারার কথা স্বীকার করেন সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা।
শিগগরিই মশা নিধন কার্যক্রম শুরু হওয়ার আশ্বাস দিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আগামী সপ্তাহে মশক নিধন সপ্তাহ পালন করব।”
এ সময় সিটি করপোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ডে একযোগে এই কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে জানান তিনি।