পায়রায় প্রধানমন্ত্রীর আগমন, উচ্ছ্বসিত এলাকাবাসী চায় বিমানবন্দর

পটুয়াখালীতে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগামনকে ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। এলাকায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ ইতোপূর্বের নানা উন্নয়নে উচ্ছ্বসিত স্থানীয়রা এবার বিমানবন্দরের দাবি নিয়ে আসছেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে।

পটুয়াখালী প্রতিনিধিসঞ্জয় কুমার দাস, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 March 2022, 04:56 PM
Updated : 20 March 2022, 04:56 PM

প্রধানমন্ত্রী সশরীরে উপস্থিত থেকে কলাপাড়া উপজেলার ধানখালীতে নির্মিত পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধন করবেন সোমবার।

পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। উদ্বোধনের পর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের অভ্যন্তরে আয়োজিত সংক্ষিপ্ত সুধী সমাবেশে অংশ নেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী পটুয়াখালী এলেই উন্নয়নের জন্য কিছু না কিছু দিয়ে যান বলে এবারও তারা নতুন কিছু পাওয়ার প্রত্যাশায় রয়েছেন।

জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলমগীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের প্রিয় নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘ দুই বছর করোনা মহামারীর কারণে সশরীরে কোথাও গিয়ে সভা করেননি। তাই এত লম্বা সময় পরে পটুয়াখালীতে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের শুভ উদ্বোধন উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর আগমনে সর্বস্তরের নেতা-কর্মী সর্বোপরী সাধারণ মানুষের মাঝে খুশি ও প্রাপ্তির প্রত্যাশার জোয়ার বইছে।”

প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে দলীয়ভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “পটুয়াখালীতে মেগা প্রকল্প – যেমন পায়রা বন্দর, সাবমেরিন ল্যান্ডিং স্টেশন, তাপবিদ্যুত কেন্দ্রসহ বহু উন্নয়ন করেছেন আমাদের প্রিয় নেত্রী।

আমরা আপনাদের (সাংবাদিকদের) মাধ্যমে পটুয়াখালীতে একটি বিমানবন্দর স্থাপনের দাবি করছি।”

তিনি বলেন, পটুয়াখালী শহর সংলগ্ন লাউকাঠী নদীর ওপারে অবস্থিত কৃষি বিমান অবতরণ কেন্দ্রটি সংস্কার করে বিমানবন্দর নির্মাণ করতে খরচ কম হবে। এটি বিমানবন্দরে রূপ দিলে সরকারের খরচ হবে দুইশ কোটি টাকা। আর একটি নতুন বিমানবন্দর করতে খচর হবে এক হাজার কোটি টাকা।

“তাই আমরা দাবি করছি কৃষি বিমান অবতরণ কেন্দ্রটি পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দরের ঘোষণা আসুক প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে।”

পটুয়াখালী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মো. গিয়াস উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আমরা খুবই আনন্দিত; এবং গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে। আমাদের দক্ষিণাঞ্চলে যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো হচ্ছে তার মধ্যে একটি ইতিমধ্যে উৎপাদনে চলে গেছে। আরও একটি উৎপাদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এই করোনাভাইরাস উপেক্ষা করে প্রধানমন্ত্রীর দক্ষিণাঞ্চলে আসার অপেক্ষায় আমরা দিন গুনছি।”

তিনি বলেন, শেখ হাসিনা এলেই দক্ষিণাঞ্চলের জন্য উন্নয়নের বার্তা বয়ে আনেন। এলাকার উন্নয়নে মেগা প্রকল্পগুলো এলাকা ছাড়িয়ে দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখে।

পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, যে কর্মসূচি রয়েছে তাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের শুভ উদ্বোধন করবেন এবং সুধীজনদের সাথে মতবিনিময় করবেন। পাশাপাশি নির্বাচনের যে ইশতেহার রয়েছে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া, সে ক্ষেত্রে সারা দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণাও করবেন।

“সুধী সমাবেশে মন্ত্রিপরিষদের বিশ এর অধিক সম্মানিত সদস্য ও ত্রিশ জনের অধিক সচিব স্যারেরা আসবেন। পাশাপাশি বিদেশি মেহমানরাও উপস্থিত থাকবেন।”

প্রধানমন্ত্রীর আগমনের সব ধরনের প্রস্তুতি চলমান রয়েছে, যা প্রায় শেষ পর্যায়ে বলে তিনি জানান।

২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত ১৩০ পরিবারের জন্য নির্মিত আবাসন প্রকল্প ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ উদ্বোধন করেছিলেন। সে সময় প্রধানমন্ত্রী ওই ১৩০ পরিবারের মাঝে বাড়ির চাবি হস্তান্তর করেন। এর আগে ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় নির্মাণাধীন পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদুৎ কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন।

পটুয়াখালীর কলপাড়া পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যৎ কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক শাহ আবদুল মাওলা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ২০২০ সালের ১৫ মে পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১ম ইউনিটের ৬৬০ মেগাওয়াট উৎপাদন শুরু করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়েছে। বাকি ৬৬০ মেগাওয়াট ওই বছরের ডিসেম্বরে প্রস্তুত হয়ে দুটি ইউনিটে মোট ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা লাভ করে।

তবে সঞ্চালন লাইন নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় এখন ৬৬০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট চালু রাখা হয়েছে।

সঞ্চালন লাইনের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক আশা করেন, এ বছরের ডিসেম্বর নাগাদ জাতীয় গ্রিডে ১৩২০ মেগাওয়াটের পুরটাই সরবরাহ করা যাবে।

প্রকল্প পরিচালকিআরও জানান, বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ বিনিয়োগে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) এর মালিকানায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ‘পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র’ নামে নির্মাণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের দুইটি অংশ। প্রতিটি অংশে ১৩২০ মেগাওয়াট করে মোট ২৬৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে।

এর মধ্যে প্রথম অংশের ১৩২০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটি দুই ইউনিটে ৬৬০ মেগাওয়াট করে নির্মিত হয়েছে। এই অংশের দুটি ইউনিটের কাজ শেষ হয়েছে।

দ্বিতীয় অংশের ১৩২০ মেগাওয়াট কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে, যা ২০২৪ সালের ডিসেম্বর নাগাদ শেষ হবে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।

তখন জাতীয় গ্রিডে পায়রা থেকে মোট ২৬৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হবে বলেও জানান শাহ্ আবদুল মাওলা।