‘দফায় দফায় তিন কোটি টাকা নিয়ে আবার চালাকি করলেন স্বামী’

দফায় দফায় তিন কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নেওয়ার পর মৌলভীবাজারের এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন; স্ত্রীর প্রাইভেট কারটি হস্তগত করার জন্য নতুন চালাকিতে জড়িয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

মৌলভীবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Feb 2022, 04:05 PM
Updated : 11 Feb 2022, 07:02 PM

জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রেসক্লাবে শুক্রবার বেলা ২টায় সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন শ্রীমঙ্গল পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান এম এ মোছাব্বিরের নাতি রেজওয়ানা চৌধুরী নিরমা।

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ থানার বৃদেবস্থান গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে শফিউল্লাহ ওরফে উজ্জ্বলের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করা হয়।

রেজওয়ানা লিখিত বক্তব্যে বলেন, “২০০৭ সালে বিয়ের পর থেকে শফিউল্লাহ নানা ছলে আমার ও আমার মায়ের প্রায় সব সম্পত্তি আত্মসাৎ করেছেন। সন্তানের কথা চিন্তা করে তার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি আমি।

“কিন্তু সে আমার মায়ের নামের ও আমার নিজের নামের এফডিআর ভাঙ্গিয়ে, এমনকি জমি বেচে বিভিন্ন সময় প্রায় তিন কোটি টাকা নিয়েছে।”

শফিউল্লাহ কখন কীভাবে টাকা নিয়েছেন সে সম্পর্কে রেজওয়ানা বলেন, “শফিউল্লাহর ভাই পুলিশে চাকরি করতেন। তিনি বরখাস্ত হন। তার চাকরি ঠিক রাখার জন্য ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের টাকা নেন শফিউল্লাহ। এরপর তার বাবা (আমার শ্বশুর) অসুস্থ হলে আবার বড় অঙ্কের টাকা নিয়ে ভারতে গিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। গাড়ি কেনার জন্যও বড় অংকের টাকা নেয় শফিউল্লাহ। পরে কেমিক্যালের ব্যবসা করার জন্য আবার অনেক টাকা নেয়। ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকারও বেশি নিয়েছে শফিউল্লাহ।

”আমার বাবার দেওয়া প্রায় ১৩০ শতক জমি পর্যায়ক্রমে বিক্রি করে আরও প্রায় এক কোটি টাকা দিই তাকে। তাকে টাকা দিতে দিতে আমার ও আমার মায়ের সমস্ত সম্পদই প্রায় শেষ।”

গত বছর ১৪ ডিসেম্বর আরেকটি জমি বিক্রি করার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তখন তাকে গাড়ি কেনার সব টাকা আমি দেই। এবং জায়গা বিক্রি করে তাকে ১১ লাখ টাকা দিই। টাকা ও গাড়ি নিয়ে শফিউল্লা নির্বাচন করার কথা বলে ঈশ্বরগঞ্জ চলে যায়। ১০ থেকে ১২ দিন পর আবার টাকা নিতে আসে। ছেলের ভবিষতের কথা চিন্তা করে তাকে নতুন করে আর টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করি। তাতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে আমার গায়ে হাত তুললে আমি আহত হই।”

তখন তিনি ৯৯৯-এ কল দিয়ে সাহায্য চাইলে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে জানিয়ে তিনি বলেন, শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেওয়ার পর তিনি শ্রীমঙ্গল থানায় মামলা করেন।

“তখন শফিউল্লাহ আমাদের বাসা থেকে চলে যায়। যাওয়ার সময় গাড়ি নিয়ে যেতে চাইলে আমি রাজি না হওয়ায় গাড়ি রেখেই চলে যায়। এই পর্যায়ে আমরা তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা ভাবি।”

পরে তিনি আদালতের মাধ্যমে তাকে ডিভোর্স দেন বলে জানান।

রেজওয়ানা অভিযোগ করেন, “শফিউল্লাহ আমার কাছ থেকে গাড়িটি নেওয়ার জন্য চালাকি শুরু করে। তার ভাই আমান উল্লাকে দিয়ে ঢাকার ভাটারা থানায় গাড়ি চুরির মিথ্যা মামলা করান। সেই মামলায় আমাদের পরিচিত শ্রীমঙ্গল নুর ফুডসের ম্যানেজার মো. সাইফুল ইসলামকে জড়ানো হয়।

“আর পুলিশ গাড়ি চুরির মিথ্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করে। তাছাড়া মামলার বাদী (শফিউল্লাহর ভাই আমান উল্লা) গাড়ির মালিকও না। যাকে মামলায় জড়িয়ে জেলে পাঠানো হয়েছে তার এ বিষয়ে কিছুই জানার কথা না।”

তিনি বলেন, “যথন ঢাকা থেকে গাড়ি চুরি হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে তখন সাইফুল ইসলাম শ্রীমঙ্গলে নুর ফুডসের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছিলেন, যা সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গেছে। মিথ্যা মামলায় তদন্ত না করে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করল।”

তাদের সম্পত্তির উৎস সম্পর্কেও রেজওয়ানা সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের ধারণা দেন।

তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, “আমি বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। আমার বাবা মোদারেস আহমেদ চৌধুরী জাতিসংঘে চাকরি করতেন। তার মৃত্যুর পর শুধু ব্যাংকের নমিনি হিসেবেই আমি প্রায় দেড় কোটি টাকা পাই। তাছাড়া আমার মায়ের সম্পতি ছিল। উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি অন্যান্য সম্পত্তি।”

স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর থেকে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন জানিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে রেজওয়ানার মা ফরিদা এফএ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

ফরিদা বলেন, ”আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। এই স্বাধীন দেশের পুলিশ তদন্ত না করে কাউকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করবে এটা ভাবতেও পারিনি।

”মেয়ে ও নাতির দিকে তাকিয়ে একজন মাদকাসক্তকে কোটি কোটি টাকা দিয়েছি। আমরা কি এর হাত থেকে রক্ষা পেতে পারি না?”

নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় শফিউল্লাহকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন শ্রীমঙ্গল থানার এসআই আসাদ।

তিনি বলেন, “আসামিকে গ্রেপ্তারে ঢাকায়ও অভিযান চালানো হচ্ছে।”

গাড়ির বিষয়ে তিনি বলেন, “এটা ঢাকার ভাটারা থানার মামলা।”

ভাটারা থানার এসআই হাফিজ বলেন, “শ্রীমঙ্গল থানার পুলিশকে নিয়ে চুরির অভিযোগ ওঠা গাড়িটি রেজওয়ানা চৌধুরীর মায়ের বাড়ির সামনে থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় মামলার এজহারে উল্লেখ করা একজন আসামিকেও আটক করা হয়েছে। তবে ন্যায় বিচারের স্বার্থে তদন্ত করে দ্রুত সঠিক প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।”

অভিযোগ বিষয়ে শফিউল্লাহর একাধিক মোবাইল ফোনে কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

শফিউল্লাহর ভাই আমান উল্লাকে ফোন করে সাংবাদিক পরিচয় দিতেই তিনি লাইন বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন।