পিরোজপুরের ঐতিহ্যবাহী চিতই পিঠা উৎসব

পিরোজপুরের নাজিরপুরে উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যে ঐতিহ্যবাহী চিতই পিঠা উৎসব শেষ হয়েছে।

মো. হাসিবুল ইসলাম হাসান, পিরোজপুর  প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Feb 2022, 02:45 PM
Updated : 1 Feb 2022, 02:45 PM

সোমবার সন্ধ্যায় শুরু হওয়া অনুষ্ঠান রাতব্যাপী চলে; মঙ্গলবার সকাল ১০টায় শেষ হয়।

উৎসবে ১০৮টি চুলায় চিতই পিঠা তৈরি হয়। প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে হাজারো উৎসাহী মানুষ উৎসবে যোগ দিয়েছে।   

নাজিরপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের কুমারখালী বাজার সংলগ্ন দেবলাল চক্রবর্তীর বাড়ির কালী মন্দিরে প্রতি বছর এ উৎসব হয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ওই মন্দিরের ভক্তসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লোকজন মাঘ মাসের অমাবশ্যা তিথিতে চিতই উৎসবে যোগ দেন।

কালী মন্দিরের পুরোহিতের দায়িত্বে থাকা দেবলাল চক্রবর্তী জানান, প্রায় একশ বছর আগে থেকে তাদের পূর্বপুরুষ হরষিত আনন্দ চক্রবর্তী এ মেলার আয়োজন করেন। এখানে প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভক্তরা আসেন। তারা তাদের মনোবাসনা পূরণের জন্য এখানে মানত করেন। আর মনোবাসনা পূর্ণ হলে এখানে এসে চিতই উৎসবে যোগ দেন।

তিনি জানান, সন্ধ্যা ৭টায় বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এ অনুষ্ঠান শুরু হয়; আর রাতব্যাপী ও পরের দিন সকাল ১০টা পর্যন্ত এ অনুষ্ঠান চলে। পরে সকালে খিচুড়ি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তা শেষ হয়। ১০৮টি চুলায় চিতই পিঠা (কাঁচি খোচা পিঠা) তৈরী হয়। একটি মাঠে মাটি দিয়ে সারি করে তৈরি ওইসব চুলায় মাটির তৈরি সাজে চালের গুড়ার ওই পিঠা তৈরিতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নারী ভক্তরা।

এ উৎসবকে স্থানীয়ভাবে চিতই উৎসব বলে, জানান দেবলাল।

অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার স্কুল শিক্ষিকা তিথি বিশ্বাস জানান, তিনি ছোট বেলা থেকে তার বাবা-মার সঙ্গে প্রতি বছরের মাঘ মাসের এ পিঠা উৎসবে এখানে আসেন। এখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নারী-পুরুষ অংশ নেন। এদের কেউ কেউ তাদের মনোবাসনা পূরণের জন্যও এখানে যোগ দেন।

বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার সন্তোষপুর গ্রামের পংকজ কান্তি বলেন, তার বিয়ের প্রায় ১৫ বছরেও কোনো সন্তান হচ্ছিল না। এখানে মানত করলে ‘শ্রষ্টার কৃপায়’ পুত্র সন্তান হয়। তাই এ সন্তান নিয়ে এখানে এসেছেন তিনি।

নাজিরপুরের স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. জুলহাস উদ্দিন সান্টু বলেন, “এখানে এ উৎসব একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসবে পরিণত হয়েছে। শত বছরের এ উৎসব সম্পর্কে আমরা আমাদের পূর্বপুরুষের কাছ থেকে  জেনেছি। এ উৎসবে আমরা স্থানীয়রা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে থাকি।”