২০১১ সালের নির্বাচনে পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি কেন্দ্রে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ হলেও এবারই প্রথম এ সিটির ২৭টি ওয়ার্ডের ১৯২টি কেন্দ্রের এক হাজার ৩৩৩টি বুথে একযোগে ইভিএমে ভোট হচ্ছে।
রোববার সকালে ভোটর শুরুর পরপরই নগরীর ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের দেওভোগের শিশুবাগ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে আসেন মোহাম্মদ আলী।
নিজের বুথের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি এখানে এসেছি সাড়ে ৮টায়, এখন সাড়ে ১০টা। কয়েকটি লাইন দ্রুত এগোচ্ছে; আমাদের এই লাইনটা স্লো।”
অন্তত ৪৫ মিনিট ধরে পাশের আরেকটি লাইনে রয়েছেন বিনয় নামে চল্লিশোর্ধ্ব এক ভোটার। জাকির হোসেন নামে আরেকজন ভোট দেওয়ার জন্য আধ ঘণ্টা ধরে অপেক্ষায় থাকার কথা বললেন।
এ ছাড়া কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, পছন্দের প্রার্থীকে দ্রুত ইভিএমে ভোট দেওয়ার জন্যে মুখিয়ে রয়েছেন ভোটাররা। কিন্তু কতক্ষণে ভোট দিতে পারবেন, সেই ধারণা তারা করতে পারছেন না।
প্রতিটি ভোট সম্পন্ন করতে মিনিটখানেক লাগার কথা। সেখানে বিলম্বের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য করা গেছে।
শিশুবাগ কেন্দ্রের একজন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা জানান, প্রথম দুই ঘণ্টায় আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে বিভ্রাট হয়েছে দুই জনের। তবে শেষ পর্যন্ত ভোটের ব্যবস্থা করা গেছে।
এ কেন্দ্রের একটি ভোটকক্ষে ৪১৪ জন ভোট রয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত মাত্র ৪৮ জন ভোট দিয়েছেন।
এই কেন্দ্রেই ভোট দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী। ভোটের পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে ভোটদানে ধীর গতির খবর পাওয়ার কথা বলেছেন তিনি।
আইভী বলেন, “খবর পাচ্ছি স্লো ভোট হচ্ছে। ৫, ১৭, ১৮, ২০ ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচুর মানুষ ভোট দেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন।
“এ ছাড়া ৭ নম্বর ওয়ার্ডে কদমতলিতে একটি ভোটকেন্দ্রে ইভিএম মেশিন নষ্ট হওয়ার খবর পেয়েছি। পরে তারা জানিয়েছে, ঠিক করছে।”
তবে ব্যবস্থাপনায় সমস্যার অভিযোগও করলেন কোনো কোনো ভোটার। কাজীপাড়া থেকে ভোট দিতে বার একাডেমি কেন্দ্রে এসেছিলেন ফারজানা আক্তার মায়া। কয়েক ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকেও ভোট দিতে পারেননি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “কোনো মিল নাই। একজন বলে এই ভবন, আরেকজন বলে ওই ভবন। কই যামু এখন। এখন না ভোট দিয়া যাইগা।”
অসুস্থ চাচীকে নিয়ে একই কেন্দ্রে ভোট দিতে এসেছিলেন মনোয়ারা বেগম। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমরা রোগী নিয়ে আসছি। রোগী নিয়ে আইসা বসাই রাখছি। একবার উপর থেইকা নিচে , নিচ থেইকা উপরে। এইটা কিছু হইল। এইটা ভোটের কোনো শঙ্খলা হইল?”
মেয়র পদে সাতজন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৪৮ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন নারায়ণগঞ্জ সিটির তৃতীয় এই নির্বাচনে। তাতে প্রত্যেক ভোটারকে তিনটি ভোট দিতে হচ্ছে।
দুপুর পর্যন্ত কোনো কোনো বুথে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ভোট নেওয়া হয়েছে জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, “কোনো কোনো বুথে নারী ও বয়ষ্কদের কারণে কিছুটা ধীরগতি হচ্ছে।”
দুপুর ১২টার দিকে আর্দশ স্কুল কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ডিসি। তিনি বলেন, পুলিশ সুপার ও ম্যাজিস্টেটকে সঙ্গে নিয়ে বেশ কয়েকটি কেন্দ্র তিনি ঘুরে দেখেছেন। কিছু কিছু বুথে একটু দেরি হলেও শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে মানুষ ভোট দিচ্ছে।
“এখন পর্যন্ত কোনো মেশিন বিকল হওয়ার খবর আসেনি। আমাদের প্রত্যাশা দিনের শেষ অবধি সুশৃঙ্খলভাবে এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।”