জয়পুরহাটে ছয় মাসে ১২৪টি ট্রান্সফরমার চুরি

জয়পুরহাটের পাঁচটি উপজেলায় গত ছয় মাসে জমির সেচের ১২৪টি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে।

জয়পুরহাট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Jan 2022, 06:06 AM
Updated : 13 Jan 2022, 06:51 AM

গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে চুরি হওয়া এসব ট্রান্সফরমারগুলোর একটিও উদ্ধার না হওয়ায় বিপাকে পরেছেন সেচ পাম্প মালিক ও কৃষককেরা। এ সব ঘটনায় থানায় অভিযোগ করেও প্রতিকার পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা।

জয়পুরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সিনিয়ার জেনারেল ম্যানেজার এনামুল হক প্রামাণিক বলেন, কৃষি জমিতে সেচ কাজের জন্য জেলার পাঁচটি উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের ১ হাজার ৮৭৫টি গভীর, ৩ হাজার ৪৯৩টি অগভীর ও ২টি এলএলপি নলকূপ রয়েছে। আর বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ’র) ৩৫৯টি গভীর নলকূপ রয়েছে।

জেলায় এসব বিদ্যুৎ চালিত মোট ৫ হাজার ৩৭০টি নলকূপের জন্য প্রায় ৮ হাজার ট্রান্সফরমার রয়েছে। এসব ট্রান্সফরমাগুলোর মধ্যে গত ২০২১ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে চুরি হয়েছে ১২৪টি, এর মধ্যে পল্লী বিদ্যুতের ১০৩ ও বিএমডিএ’র ২১টি।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএর) নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল ইসলাম বলেন, “ট্রান্সফরমার রক্ষণাবেক্ষনের জন্য সেচ পাম্প অপারেটরদের প্রতি ঘণ্টার জন্য ১০ টাকা কমিশন দেওয়া হয়। তারপরও চুরি ঠেকানো যায়নি। প্রতিটি ট্রান্সফরমার চুরি হওয়ার পর সেচ পাম্প মালিকদের মাধ্যমে বাধ্যতামূলক থানায় অভিযোগ করা হয়। তারপরও চুরি হওয়া ট্রান্সফরমার উদ্ধার বা জড়িতদের কেউ ধরা পড়েনি।

“সেচ পাম্পগুলোর ট্রান্সফরমারগুলো উদ্ধার না হওয়ায় সেচ পাম্প মালিকদের আবার কিনতে হয়েছে। এসব ঘটনায় জড়িতরা আইনের আওতায় না আসায় আবারও তারা চুরির আতঙ্কে রয়েছেন।”

চুরি প্রতিরোধে প্রতিটি সেচ পাম্প মালিক ও কৃষকদের নিজেদের পাহারা দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে উপজেলার তেঘর দণ্ডপানি গ্রামের জাহিদুল ইসলামের তিনটি, ক্ষেতলাল উপজেলার বড়তারা গ্রামের মাহফুজার রহমানের তিনটি, মামুদপুর-দেওগ্রামের মিলন মণ্ডলের তিনটি, আক্কেলপুর উপজেলার পূর্ন্য গোপীনাথপুর গ্রামের শফিকুল ইসলামের একটি, কালাই উপজেলার মোলামগাড়িহাট গ্রামের মজিবর রহমানের তিনটি ও পাঁচবিবি উপজেলার ভূইডোবা গ্রামের এনামুল হকের তিনটি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে।

ভুক্তভোগী এসব সেচ পাম্প মালিকরা বলছেন, একটি ট্রান্সফরমারের ভেতর ১২ থেকে ২০ কেজি তামার তার থাকে। প্রতি কেজি তামার তারের দাম ১ হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার টাকা। মূলত এই তামার জন্যই ট্রান্সফরমার চুরি হয়।

তাদের অভিযোগ, ট্রান্সফরমার চুরির বিয়ষটি থানায় লিখিত অভিযোগ করে জানানোর পরও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎ সঞ্চালন অবস্থায় বৈদুতিক খুঁটি থেকে ট্রান্সফরমার চুরি করা সহজ নয়। বিদ্যুৎ বিভাগের কিছু অসাধু কর্মচারী এতে জড়িত রয়েছে।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার আমদই-মীরগ্রাম এলাকার সেচ পাম্প মালিক হাফিজুর রহমান বলেন, “আমার সেচ পাম্পের তিনটি ট্রান্সফরমার চুরি হওয়ায় আলুসহ অন্যান্য ফসলি জমিতে পানির সঙ্কট দেখা দেয়। এতে কৃষকরা চরম বিপাকে পরেছিল বলে আমি ধার-কর্য করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে ৯৩ হাজার টাকা জমা দিয়ে ট্র্রান্সফরমারগুলো সংযোগ করে কৃষকদের জমিতে পানি দিয়ে ফসল রক্ষা করেছি।”

কালাই উপজেলার মোলামগাড়িহাটের মজিবর রহমান বলেন, “গত ২৬ অক্টোম্বর আমার সেচ পাম্পের তিনটি ট্রান্সফরমার চুরি হয়। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগের কাগজ দেখিয়ে পল্লী বিদ্যুত অফিস থেকে প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ করে নতুন ট্রান্সফরমার সংযোগ দিয়ে কৃষকের ফসল রক্ষা করছি। ট্রান্সফরমার চুরি বন্ধে পুলিশসহ প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।”

এসব অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জয়পুরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম বলেন, “ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনায় শুধু সাধারণ ডায়েরি বা অভিযোগ করা হয়। ফলে স্বাভাবিক কারণে বিষয়টি কম গুরুত্ব পায়। এতে জড়িতরাও পার পেয়ে যাচ্ছে।”