মাদারীপুরে নির্মাণকাজ শেষ না করেই বিল উত্তোলন

মাদারীপুরে একটি বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ শেষ না করেই অধিকাংশ বিল উত্তোলন করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

মাদারীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Dec 2021, 12:24 PM
Updated : 15 Dec 2021, 12:24 PM

কালকিনি উপজেলার (বর্তমানে নবগঠিত ডাসার উপজেলার অংশ) ডাসার ইউনিয়নের পশ্চিম কমলাপুর সরকরি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৪ সালে স্কুলটি সরকারি করা হয়।

নবগঠিত ডাসার উপজেলার পশ্চিম কমলাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওবায়দুল হক বলেন, “ঠিকাদার আবুল খায়ের স্কুলভবনটির কাজ তিন বছর ধরে ফেলে রেখেছেন।

“এলজিইডিতে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, নির্মাণকাজ শেষ না করেই তিনি কাজের প্রায় ৪১ লাখ টাকা উত্তোলন করে ফেলেছেন। এখন ভবন নির্মাণ করে দিতে ঠিকাদার নানা ধরনের টালবাহানা করছেন।”

সহকারী প্রধান শিক্ষক হানিফ মাতুব্বর বলেন, “কয়েক বছর ধরে ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়ে তিন কক্ষের একটি ছোট টিনের ঘর নির্মাণ করে ক্লাস নিচ্ছি। ভবনটি নির্মাণ করা হলে এত কষ্ট করতে হতো না।”

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি কাজী আনোয়ার হোসেন বলেন, “কালকিনির ইউএনও অফিস থেকে শুরু করে জেলার এলজিইডি অফিসসহ প্রায় সব জায়গাতেই প্রধান শিক্ষককে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করেছি। কিন্তু কিছুতেই কোনো কাজ হচ্ছে না।”

এ বিষয়ে মেসার্স মাজেদা ট্রেডার্সের সত্ত্বাধিকারী মো. আবুল খায়ের বলেন, “ভবনটির বেশিরভাগ কাজই করে রেখেছি। আমার পার্টনারের সঙ্গে একটু ঝামেলার কারণে কাজটি ফেলে রাখা হয়েছে। বাকি কাজ শীঘ্রই শুরু করব।

“ভবন নির্মাণের ৫৯ লাখ টাকার মধ্যে ১৮ লাখ টাকার মত বিল বকেয়া রয়েছে।”

নির্মাণকাজ শেষ না করার আগেই কেন এত টাকা বিল দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে কালকিনি উপজেলা প্রকৌশলী রেজাউল করিম কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

তিনি বলেন, ‘স্কুলটির কাজ শেষ করার উদ্যোগ নিয়েছি। শীঘ্রই শিক্ষার্থীরা নতুন ভবনে ক্লাস করতে পারবে।”

স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সোহানা আক্তার বলে, “আমাগো টিনের ঘরের ক্লাসরুম অনেক ছোট। আমাদের গরমের সময় অনেক গরম লাগে। ক্লাস করতে আমাদের খুব কষ্ট হয়। আমাদের দালানের কাজ শেষ হইলে আমরা দালানে ক্লাস করতে পারতাম।”

একই ধরনের কথা বললো মারিয়া কিপ্তি ও তাওহীদ হাওলদার নামের শিক্ষার্থীরা।

কালকিনি উপজেলা এলজিইডি কার্যালয় ও স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জানা গেছে, ভবনটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের ১৩ জুন, যা ২০১৯ সালের ১৩ জুন তারিখের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের কাছ থেকে মাদারীপুরের স্থানীয় ঠিকাদার সৈয়দ তুহিন হাসান কাজটি কিনে নেন। তুহিন হাসান কাজটি শুরু করতে না পারলে তার কাছ থেকে মেসার্স মাজেদা ট্রেডার্সের আবুল খায়ের তৃতীয় দফায় কাজটি কিনে নেন। পরবর্তীতে ঠিকাদার আবুল খায়ের ২০১৯ সালে স্কুল ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করেন।

ভবনটির একতলার ছাদ ঢালাই দেওয়ার পরে পুরো ভবনের নির্মাণ কাজ ফেলে রাখা হয়, যা এখনও সেভাবেই আছে।