কুয়েট শিক্ষকের মৃত্যু: লাঞ্ছনার অভিযোগ, তদন্তে কমিটি

ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মীর সাক্ষাতের পর খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) অধ্যাপক মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে লাঞ্ছনার অভিযোগ আসায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের মুখে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

খুলনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Dec 2021, 05:32 PM
Updated : 1 Dec 2021, 05:57 PM

মঙ্গলবার দুপুরে ক্যাম্পাসের বাসায় শৌচাগারে অচেতন হয়ে পড়ার পর অধ্যাপক সেলিমকে হাসপাতালে নেওয়া হয়; সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ওই দিন বাসায় ফেরার আগে তাকে ছাত্রলীগের একটি অংশ লাঞ্ছিত করেছিল বলে অভিযোগ উঠেছে; যদিও ওই অংশের ছাত্রলীগ নেতা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

অধ্যাপক ড. মো. সেলিম কুয়েটের ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক এবং লালন শাহ হলের প্রভোস্ট ছিলেন।

অধ্যাপক সেলিমের মৃত্যুর পর একটি ভিডিও গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। সেখানে তাকে অনুসরণ করে কয়েকজন ছাত্রকে তার কক্ষে যেতে দেখা গেছে।

সেখানে অধ্যাপক সেলিমকে লাঞ্ছনা করা হয়ে থাকতে পারে সন্দেহ তুলে এই ঘটনার বিচার দাবিতে বুধবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন একদল শিক্ষার্থী।

শিক্ষক সমিতিও বুধবার দুপুরে এক সভায় এই ঘটনা তদন্ত করে ‘দোষীদের’ বিচার দাবি করেছে।

এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে।

প্রশাসনিক ভবনের নিচে অবস্থান নেওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, কুয়েট ছাত্রলীগের বেশ কয়েকটি উপদল রয়েছে। এর একটি রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানের নিয়ন্ত্রণে।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলের ডিসেম্বর মাসের ডাইনিং ম্যানেজার নির্বাচন নিয়ে সেজান অনুসারী ছাত্রদের বিরুদ্ধে নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রভাবিত করার প্রচেষ্টার অভিযোগ ওঠে।

সেজান সমর্থকদের প্যানেলের সদস্যরা ওই হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক সেলিমকে হুমকি দিয়ে আসছিলেন বলেও শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন।

অধ্যাপক মো. সেলিম হোসেন

সিসিটিভি ফুটেজের বরাত দিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সেজানের নেতৃত্বে একদল ছাত্র ক্যাম্পাসের রাস্তায় অধ্যাপক সেলিমকে জেরা করেন। পরে তাকে অনুসরণ করে তড়িৎ প্রকৌশল ভবনে তার কক্ষে যায়। তারা আধা ঘণ্টার মতো অধ্যাপক সেলিমের সঙ্গে ছিলেন এবং পরে অধ্যাপক সেলিম বের হয়ে বাসার দিকে যান।

অধ্যাপক সেলিমের কক্ষে ওই ছাত্ররা তাকে লাঞ্ছিত করে থাকতে পারেন, যা তাকে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয় বলে বিক্ষোভরত এই শিক্ষার্থীদের অভিযোগ।

পরিবারের সদস্যদের কাছে জানা গেছে, দুপুর আড়াইটার দিকে বাসায় ফিরে অধ্যাপক সেলিম শৌচাগারে ঢোকেন। কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ পরও বের না হওয়ায় দরজা ভেঙে তাকে বের করে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রতীক চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্বার বাংলার পাদদেশে প্রতিবাদ সভা এবং কালো ব্যাজ ধারনের সিদ্ধান্ত হয়েছে সমিতির দুপুরের সভায়।

তিনি বলেন, “যতক্ষণ সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার না হয় এবং তাদের স্থায়ীভাবে ক্যাম্পাস থেকে বহিষ্কার করা না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত শিক্ষকরা একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবেন বলে শিক্ষক সমিতির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে।”

এছাড়া সভায় ওই শিক্ষকের মৃত্যুর ঘটনায় দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও সুপারিশ করা হয় বলে তিনি জানান।

এদিকে ছাত্রলীগ নেতা সেজান অভিযোগ করেছেন, একটি পক্ষ অধ্যাপক সেলিমের মৃত্যুকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, অধ্যাপক সেলিম প্রায় নয় মাস আগে লালন শাহ হলের দায়িত্ব পান। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারীতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে এর আগে তাদের দেখা হয়নি। সেজন্য অধ্যাপক সেলিমের ‘আমন্ত্রণে’ তিনি তার কক্ষে কথা বলতে গিয়েছিলেন।

নাহিয়ান ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে যাননি উল্লেখ করে বলেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রকল্যাণ কমিটির সদস্য সচিব। সে হিসেবেই সেখানে গিয়েছিলেন। সেখানে তাদের মধ্যে ‘স্বাভাবিক কথাবার্তা’ হয়েছে।

কুয়েট ছাত্র কল্যাণ পরিষদের পরিচালক ইসমাইল সাইফুল্লাহ বলেন, এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের প্রতিবেদন সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কুয়েটের জনসংযোগ কর্মকর্তা মনোজ কুমার মজুমদার জানিয়েছেন, ড. রজিবুল আহসানকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দ্রুত তাদের রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।