ঠাকুরগাঁওয়ে ৫ স্কুলছাত্রী কোভিড আক্রান্ত, ক্লাস বন্ধ

ঠাকুরগাঁও সদরে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির পাঁচ শিক্ষার্থী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর ওই দুই শ্রেণির ক্লাস বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ।

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Sept 2021, 12:33 PM
Updated : 23 Sept 2021, 02:35 PM

বাহাদুরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছা. ফারহানা পারভীন একথা জানান।

উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের কলোনি এলাকায় অবস্থিত বাহাদুরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীদের করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয় মঙ্গলবার।

এদের মধ্যে দুই জন চতুর্থ শ্রেণির ও তিন জন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। তাদের বয়স ১০ থেকে ১২ বছরের মধ্যে। তারা ঠাকুরগাঁও সরকারি শিশু পরিবার সদস্য।

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মোছা. ফারহানা পারভীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৪২৬ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। এর মধ্যে চতুর্থ শ্রেণিতে রয়েছে ৮৪ জন ও পঞ্চম শ্রেণিতে রয়েছে ৭৬ জন ছাত্র-ছাত্রী। করোনার ভাইরাসের কারণে ১৭ মাস বিদ্যালয় বন্ধ ছিল।

তিনি জানান, গত ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল খোলা হয়। সূচি অনুযায়ী প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস নেওয়া হয়। বিদ্যালয়ে প্রবেশের সময় প্রত্যেক শিক্ষার্থীর শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করার পর শিক্ষার্থীদের ক্লাসে নেওয়া হয়।

গত বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) করোনায় আক্রান্ত চতুর্থ শ্রেণির ২ জন ও পঞ্চম শ্রেণির ৩ জন ছাত্রী ক্লাসে উপস্থিত ছিল এবং সেদিন তাদের মধ্যে করোনার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি বলে ফারহানা জানান।

ফারহানা আরও বলেন, মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) সরকারি শিশু পরিবার বালিকা কর্তৃপক্ষ জানায় তাদের স্কুলপড়ুয়া চতুর্থ শ্রেণির দুইজন ও পঞ্চম শ্রেণির তিনজন ছাত্রী জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত হয়েছে।

“সেদিনি তাদের করোনা পরীক্ষার নমুনা দেওয়া হয়। বুধবার আমরা জানতে পারি তারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছে।”

তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মৌখিক নির্দেশে আপাতত চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির পাঠদান বন্ধ করা হয়েছে; তবে প্রথম শ্রেণি থেকে তৃতীয় শ্রেণির পাঠদান কার্যক্রম সচল রয়েছে।

ঠাকুরগাঁও সরকারি শিশু পরিবার বালিকার উপ-তত্ত্বাবধায়ক মোছা. রিক্তা বানু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) শহরের হাজীপাড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ুয়া এক জন ছাত্রী জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে আরও অনেকের পাশাপাশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া ৫ জন ছাত্রী জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত হয়।

তিনি জানান, গত সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত শিশু পরিবারের ২৫ জন ছাত্রীর নমুনা পরীক্ষার জন্য ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া ৫ জনসহ মোট ১৩ জন ছাত্রীর শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়। আক্রান্ত সবাই তাদের শিশু পরিবারের সদস্য।

রিক্তা বানু বলেন, “আক্রান্ত ১৩ জন ছাত্রীকে আমরা আলাদাভাবে রেখেছি। তাদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে তারা ভালো আছে।”

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসের সহকারী শিক্ষা অফিসার মমতাজ ফেরদৌস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাহাদুরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ জন ছাত্রী করোনায় আক্রান্ত হয়েছে বলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এরপর বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়। পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে আগামী এক সপ্তাহের জন্য ওই বিদ্যালয়ের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস বন্ধ করে রাখা হয়েছে।

ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার রকিবুল আলম চয়ন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সরকারি শিশু পরিবার বালিকার ১৩ জন ছাত্রীর শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের আলাদাভাবে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। এর পাশাপাশি আক্রান্তের দিন থেকেই তাদের শারীরিক অবস্থা পর্যক্ষেণ করা হচ্ছে। তারা বর্তমানে সুস্থ আছে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উপজেলার প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বজায় রেখে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। আমরা সব বিদ্যালয় সার্বক্ষণিক তদারকি করছি। স্কুলে আসা শিক্ষার্থীদের শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করা হচ্ছে। যদি কোনো শিক্ষার্থীর করোনার লক্ষণ দেখা যায় তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে তার নমুনা পরীক্ষা করছি।”

যেসব বিদ্যালয়ের শ্রেণির শিক্ষার্থীরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছে তাৎক্ষণিক সেসব শ্রেণির ক্লাস বন্ধ রাখা হয়েছে এবং তাদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।