তারা আর আশ্রয়হীন নয়

সারা দেশের মতো বগুড়ারও অনেক আশ্রয়হীন মানুষ প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণে ঘর পেয়েছে। এখন তাদের নিজের ঘর হয়েছে; বেড়িবাঁধে কিংবা অন্যের বাড়িতে আশ্রয়ে থাকতে হচ্ছে না।

জিয়া শাহীন বগুড়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Sept 2021, 06:15 PM
Updated : 8 Sept 2021, 06:15 PM

সারিয়াকান্দী আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঠাঁই পেয়েছেন চরপাড়ার ফেন্সী খাতুন; ধুনটের গোসাইবাড়ীর চুনিয়াপাড়ার আশ্রয়ণে ঘর পেয়েছেন শহড়াবাড়ীর সামছুদ্দীন; শেরপুরের আশ্রয়ণে আশ্রয় হয়েছে দশ বছর অন্যের বাড়িতে আশ্রয়ে থাকা ছাবেদ আলীর।

মুজিব শতবার্ষিকীতে জেলার ২৩০৯টি পরিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারে ঘর পেয়েছে।  

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিসের তথ্যমতে, জেলার ১২টি উপজেলায় দুই ধাপে ২৩০৯টি ঘর প্রদান করা হয়েছে। আরও ঘর নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। 

সরেজমিনে জানা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পে অনেকে ঘর পেলেও সোনাতলা, সারিয়াকান্দী ও ধুনট উপজেলার ৪৫ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে বহু গৃহহীন মানুষ খুপরি ঘর করে মানবতার জীবনযাপন করছে। প্রধানমন্ত্রীর উপহার লাল-সবুজ রংয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে এখন অবস্থান করছে ভূমিহীন অসহয় মানুষরা। সংখ্যায় কম হলেও তাদের বেশিরভাগই অন্যের আশ্রয়ে কিংবা যমুনার ভাঙনে গৃহহীন হয়ে পড়া মানুষ।

বগুড়া সদর, শেরপুর, শাহজাহানপুরে কিছু ঘর, শৌচাগারের পাশে মাটিতে ফাটল এবং জলাবদ্ধতা দেখা দিলেও তা প্রশাসনের উদ্যোগে বসযোগ্য করার উপযোগী করে তোলা হয়েছে।

ধুনটের চুনিয়াপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে কিছু ঘর বরাদ্দ হলেও সেই ঘর তালাবন্ধ দেখা যায়।

ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সন্জয় কুমার মহন্ত বলেন, বরাদ্দ পাওয়ার পর ঘরে না ওঠায় একটি ঘর বাতিল করে অন্য এক অসহয় পরিবারকে দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলে নীতিমালা অনুযাযী ঘরের বরাদ্দ বাতিল করে উপযুক্ত লোককে দেওয়া হবে। 

তিনি আরও বলেন, যমুনার ভাঙনে হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। ঘর বণ্টনে তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। প্রতিবন্ধী, বৃদ্ধ, বৃদ্ধা, অসহয় যারা ঘর পেয়েছে তাদের চোখের দিকে তাকালে দেখা যায় আনন্দের বন্যা বইছে।

শেরপুরে উপজেলার আশ্রয়ণ প্রকল্পে অনেকেই থাকছে না কেন ইউএনও ময়নুল হোসেনকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “খোঁজ নিয়ে এমন অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের ঘর বাতিল করে অন্যদের দেওয়া হবে।

ঘর নির্মাণের জন্য খালের পাড় ঝুঁকিপূর্ণ স্থান; এই বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, “সরকারি খাস জায়গায় করতে হবে। উঁচু জায়গায় জমি কিনে ঘর বানানোর বরাদ্দ নেই। তাই কোথাও এমন জায়গায় হতে পারে। তবে অন্য প্রকল্প উঁচু জায়গায় করা হয়েছে।”

সারিয়াকান্দী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল মিয়া বলেন, তালিকা প্রণয়নে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহায়তা নেওয়া হয়। যদি প্রকৃত ভূমিহীন বাদ পড়ে -- স্বচ্ছল ব্যক্তির নামে বরাদ্দ হয়ে থাকে -- তাহলে অবশ্যই বাতিল করা হবে।

“যমুনা ভাঙন এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নেওয়া গৃহহীনদের এ ধরনের প্রকল্পের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা জরুরি হলেও খাস জমি প্রাপ্তির উপর তা নির্ভর করছে।” 

সারিয়াকান্দী উপজেলার কুতুবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল মজিদ বলেন, গৃহহীন মানুষের সংখ্যা এই উপজেলায় সবচেয়ে বেশি। কেউ কেউ যমুনার ভাঙনে ৫০ বছর হলো উদ্বাস্তু। কেউ-বা ৫০ বছর, কেউ-বা ৩০ বছর, কেউ-বা ২০ বছর হলো যমুনার ভাঙনে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রিত। খুবই প্রয়োজন এসব মানুষের থাকার একটি ঘর।

ধুনট উপজেলার গোসাইবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ বজলুর রশীদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘর উপহার গরিব মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। যমুনার ভাঙনে ধুনটের ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের প্রায় ১০ গ্রামের মানুষ গৃহহারা। তারা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে, কিংবা অন্যের আশ্রয়ে কোনোভাবে থাকছে। ঝড়, বৃষ্টিতে খুবই কষ্টে থাকে। প্রধানমন্ত্রীর এই উপহার ঘর যদি অধিক পরিমাণে যমুনা ভাঙন এলাকায় করা হয় তাহলে এসব মানুষের দীর্ঘদিনের কষ্ট ঘুচবে।

বগুড়া জেলা প্রশাসন মো. জিয়াউল হক বলেন, “আশ্রয়ণের ঘরগুলো ঘুরে দেখেছি। সেখানে ঘর পেয়ে গরীব মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে। প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছে কোনো মানুষই যেন গৃহহীন না থাকে -- সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। ঘর নির্মাণে যেন আগামীতে কোনো ত্রুটি না থাকে সে কারণে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হবে।”

যমুনার ভাঙনে হাজার হাজার গৃহহীনদের ঘর নির্মাণে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে কিনা প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক বলেন, “খাস জমি ছাড়া তো ঘর বানানো যাবে না। যদি খাস জমি পাওয়া যায় তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা করা হবে।”