বুধবার রাতে ওই সংঘর্ষের পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের কয়েকটি স্থানে আড়াআড়ি বাস ও সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ি রেখে ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে।
রাতের ওই ঘটনায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সিটি কর্পোরেশনের কর্মচারী, পুলিশ, আনসারসহ অন্তত ২৩ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকনও আছেন আহতদের মধ্যে।
নগরীর প্রধান দুটি বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদ ও রূপাতলী থেকে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে জানিয়ে রূপাতলী পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আহম্মেদ শাহরিয়ার বাবু বলেন, “বিনা উসকানিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর আনসার ও পুলিশ বাহিনীর হামলার সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত কোনো যানবাহন চলবে না।”
সকাল ৮টার পর বরিশাল নৌবন্দর থেকেও লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে জানিয়ে বিআইডিব্লিউটিএ এর বন্দর কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “কোনো কারণ না জানিয়েই মালিকপক্ষ লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।”
সে সময় তারা চলে গেলেও পরে দলবল নিয়ে তারা ইউএনওর বাসভনের সামনে ফিরে আসে। তখনই বাসভবনের নিরাপত্তায় থাকা আনসার সদস্যদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাঁধে। পরে পুলিশও সেখানে যায়।
ভোররাত পর্যন্ত দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ চলার পর পুলিশ, জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
বরিশাল মহানগর পুলিশের কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনের সামনে উত্তেজনার খবর পেয়ে পুলিশ রাতে সেখানে যায়।
“পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে যেটা করণীয় তাই করেছে পুলিশ। যারা আইন শৃঙ্খলার অবনতি করতে চেয়েছে, তাদের লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়েছে।”
কী ঘটেছিল জানতে চাইলে ইউএনও মুনিবুর রহমান বলেন, রাত সাড়ে ৯টার দিকে মোটর সাইকেল নিয়ে ১০/১৫ জন যুবক উপজেলা চত্বরে ‘ঘোরাফেরা করছিল’।
“আনসার সদস্যদের কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পেরে তাদেরকে সকালে আসতে বলি। কিন্তু রাজিব খান নামে এক যুবক নিজেকে জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পরিচয় দিয়ে বাসার মধ্যে ঢুকে যায় এবং রাতেই উপজেলা চত্বরে থাকা ব্যানার খুলে নিতে চায়। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তাদেরকে আনসার সদস্যদের সহায়তায় চত্বরের বাইরে বের করে দেওয়া হয়।
“রাত সাড়ে ১০টার দিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী পরিচয় দিয়ে ৬০ থেকে ৭০ জন আবার এসে আমার সরকারি বাসভবনের সামনে হট্টগোল শুরু করে। তাদের মধ্যে একজন নিজেকে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ বাবু, আরেকজন জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত পরিচয় দেন। আমি বাসার গেইটের সামনে এগিয়ে গেল তারা আমাকে ঘিরে ধরে। এসময় আনসার সদস্যরা গুলি ছোড়ে।”
ইউএনও বলেন, তার বৃদ্ধ বাবা-মা কোভিডে আক্রান্ত। বারান্দা থেকে তার ‘হেনস্তা হওয়ার ঘটনা’ তারা দেখেছেন।
“দ্বিতীয়বার তারা আসার খবর পেয়ে ইউএনও স্যার গেটের বাইরে যান। এসময় তারা স্যারকে ঘিরে ফেলে। স্যার আমাকে হুকুম দিলে আমি ফায়ার করি।”
এই গণ্ডগোলের খবর পেয়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহও রাতে ঘটনাস্থলে যান।
তিনি বলেন, “উপজেলা চত্বর এলাকায় অনেক অপ্রয়োজনীয় ব্যানার রয়েছে। সেগুলো অপসারণ করছিল আমাদের উচ্ছেদ শাখার কর্মীরা। এ সময় ইউএনও তাদের বাধা দেয় এবং এক পর্যায়ে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ খবর শুনে পরিস্থিতি সামাল দিতে আমি সেখানে যাই।”
এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ।
জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, “বিষয়টি তদন্ত করে বের করা হবে। অন্যায়ের সাথে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল ইসলাম বাদল বলেন, “অগাস্ট মাসে আমরা প্রত্যয় করেছি শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে বরিশালবাসীর সেবা নিশ্চিত করব। কিন্তু এই সময়ে এমন একটি ঘটনা দুঃখজনক। এটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম জানান, রাতের সংঘর্ষের পর মোট ২৩ জনকে তার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
“তাদের মধ্যে মনির হোসেন নামে মাথায় ছররা গুলিবিদ্ধ একজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বাকি ২২ জন এখানে ভর্তি আছে।”