বৃহস্পতিবার দুপুরে এই ২২টি গরু ৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় নিলামে বিক্রি করা হয়। রাজশাহী নগরীর হরগ্রাম এলাকার রুবেল ইসলাম গরুগুলো নিলামে ক্রয় করেছেন।
তবে ওই চার কৃষকের দাবি, চেকপোস্টে ‘টাকা না দেওয়ায়’ তাদের ‘পালিত’ এই গরুগুলোর অর্ধেক মূল্যে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।
গরুগুলো ফেরত পেতে শুক্রবার সকালে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এই চার কৃষক।
তারা হলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বাঙ্গাবাড়ী ইউনিয়নের বেগুনবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা সেলিম, সাদিকুল ইসলাম, রহিম ও মইদুল। এদের মধ্যে সাদিকুল ইসলাম বাঙ্গাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য।
গরুগুলোর মালিকানা প্রমাণে তারা গোমস্তাপুরের বাঙ্গাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মালিকানা ছাড়পত্র ও প্রত্যায়নপত্রও নিয়েছেন বলে জানান।
তাদের ভাষ্য, গরুগুলোর মধ্যে সেলিমের আটটি, সাদিকুল ইসলামের পাঁচটি, রহিমের পাঁচটি ও মইদুলের চারটি।
সাদিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর তারা বাড়িতে দেশি জাতের গরু লালন-পালন করে কোরবানির ঈদের আগে বিক্রি করেন। এবার তিনি পাঁচটি গরু বাড়িতে লালন-পালন করেছেন। বেশি দামের আশায় তার চারজন মিলে একটি ট্রাক ভাড়া করে গরুগুলো চট্টগ্রাম নিয়ে যাচ্ছিলেন। আশা ছিল ২২টি গরুর কম-বেশি ২০ লাখ টাকা হবে।
তিনি বলেন, বুধবার দুপুর ১টার দিকে রাজাবাড়ি বিজিবি চেক পোস্টে তাদের ট্রাক থামিয়ে গরুগুলোর কাগজপত্র দেখতে চাওয়া হয়। তারা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মালিকানা ছাড়পত্র ও চেয়ারম্যানের প্রত্যায়নপত্র দেখান।
ওই ব্যক্তি তখন ক্ষিপ্ত হয়ে গালাগাল শুরু করেন এবং এক পর্যায়ে গরুসহ ট্রাক নিয়ে রাজশাহী শহরে পাঠিয়ে দেন বলে সাদিকুল ইসলামের ভাষ্য।
“পরে সেগুলো কাস্টমস অফিসে পাঠিয়ে দেয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে সেগুলো নিলামে বিক্রি করা হয়।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাঙ্গাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাদেরুল ইসলাম বলেন, “ওই চারজনই কৃষক। তারা গরুগুলো বাড়িতে লালন-পালন করেছেন। সেগুলো দেশি জাতের গরু।
“খবর পেয়ে আমি নিজে রাজশাহী গিয়ে বিজিবি ও কাস্টমস কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু তারা আমার কথা বিশ্বাস করেননি। পাচার করে আনা ভারতীয় গরু বলে সেগুলো ৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় নিলামে বিক্রি করে দিয়েছে। কিন্তু গরুগুলোর বাজার মূল্য ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা হবে।”
অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে বিজিবি-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাব্বির আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রাজাবাড়ি চেকপোস্ট বিজিবি ও কস্টমস যৌথভাবে চেকপোস্ট চালায়। তাৎক্ষণিকভাবে ওই গরুগুলোর কাগজপত্র দেখাতে না পারায় সেগুলো কাস্টমসে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে কাস্টমসের ভাষ্য জানতে শুক্রবার একাধিকবার ফোন করে এবং এসএমএস পাঠিয়েও রাজশাহীর কাস্টমস কমিশনার লুৎফর রহমানের সাড়া মেলেনি।
কাস্টমস পরিদর্শক শাহরিয়ার হাসান সজীব বলেন, “বিজিবি ও কাস্টমস সদস্যরা গুদামে গরু দেওয়ার সময় বলেছিলেন, কোনো মালিক পাওয়া যায়নি। ট্রাক থামানো হলে ভারতীয় গরু বলে ফেলে সবাই পালিয়ে যায়।”
তিনি বলেন, “জব্দ তালিকায় বিজিবি উল্লেখ করেছে, প্রতিটি গরুর দাম আনুমানিক ৮০ হাজার টাকা। নিলামে ১১ লাখ টাকা চেয়েছিলাম। তবে ৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।”
এই বিষয়ে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিলকে কয়েকবার ফোন করলেও রিসিভ না করায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।