গাংনীর শিশু আবির হত্যা: দুই বন্ধুর স্বীকারোক্তি আদালতে

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র আবির হোসেন হত্যায় তার দুই বন্ধু আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।

মেহেরপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 July 2021, 10:26 AM
Updated : 1 July 2021, 10:26 AM

বুধবার মেহেরপুরের বিচারকি হাকিমের খাস কামরায় এই দুই শিশু ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয় বলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও গাংনী থানার ওসি বজলুর রহমান জানান।

গাংনীর মিনাপাড়া গ্রামের ৫ম শ্রেণির ছাত্র আবির হোসেন (১১) গত রোববার খুন হয়। সে গাংনী মিনাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, গত শনিবার দুপুরের খাবার খেয়ে বন্ধুদের কাছে যাচ্ছে বলে মায়ের মোবাইল ফোন নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। ওইদিন সন্ধ্যার পর আবিরের বাবা মালয়েশিয়া প্রবাসী আসাদুল হককে ফোন দিয়ে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ চায় এবং বলে দ্রুত মুক্তিপণের টাকা না দিলে আবিরকে হত্যা করা হবে।

মামলায় বলা হয়, এই ফোন পেয়ে আসাদুল হক বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের জানান। এরপর গ্রামের লোকজনের সঙ্গে নিয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন পরিবারের সদস্যরা।

মামলার বরাতে গাংনী থানার ওসি বজলুর রহমান জানান, রোববার সকালে পুলিশ এই ঘটনায় আবিরের ঘনিষ্ট দুই বন্ধুকে [শিশু হওয়ায় নাম প্রকাশ করা হলো না] আটক করে।

“তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যে পুলিশ ওই গ্রামের একটি পাট খেতের ভিতর থেকে আবিরের মরদেহ উদ্ধার করে।”

সোমবার আবিরের মা রোজিনা খাতুন তার একমাত্র সন্তান হত্যার বিচার চেয়ে গাংনী থানায় মামলা করেন।

ওসি আরও বলেন, ফ্রি ফায়ার গেম সংক্রান্ত বিরোধের জেরে আবিরকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে বন্ধুরা। হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে গ্রেপ্তার দুই বন্ধু পুলিশকে এবং আদালতকে জানিয়েছে তারা তিন জন পরস্পর আত্মীয়। এক সঙ্গে আড্ডা দিত, খেলাধুলা করত।

“মোবাইল ফোনে সাধারণ গেম খেলতে গিয়ে তারা ‘ফ্রি-ফায়ার’ ও ‘পাবজি’ গেমে আসক্ত হয়। কয়েক সপ্তাহ আগে আটক দুই মিশুর একজনের কাছ থেকে তার ফ্রি-ফায়ার গেমের আইডি পাসওয়ার্ড চেয়ে নেয় আবির। পরে আবির ফ্রি-ফায়ার গেমের একাউন্ট আইডি ও পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে নিজেই ব্যবহার শুরু করে।”

ওসি বলেন, ওই একাউন্টে টাকা ছিল দাবি করে আবিরের ওই বন্ধু। বন্ধুটি আবিরের কাছ থেকে একাউন্ট ফেরৎ চাইলে আবির দেয়নি। একাউন্টের সেই টাকা আবির নষ্ট করে ফেলে বলে তার অভিযোগ।

“এই নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ঘটনার দিন তারা আবিরকে পাটখেতে ডেকে নিয়ে প্রথমে মারধর করে। পরে দুই বন্ধুর একজনের প্যান্ট থেকে বেল্ট খুলে আবিরে গলায় ফাঁস লাগিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এরপর আবিরের কাছে থাকা মোবাইল ফোন থেকে তার বাবার কাছে হিন্দি ভাষায় এক লাখ টাকা চাঁদা চায়।”

ওসি জানান, গ্রেপ্তারকৃত দুই জনেরই বয়স ১৪-১৫ হওয়ায় আদালতের নির্দেশে তাদের বুধবার যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।