রোববার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় উপজেলা থেকে পাঠানো ৪৩টি নমুনা পরীক্ষায় ২৯ জনের করোনাভাইরাস পজিটিভ এসেছে। শনাক্তের হার ৬৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
এনিয়ে এখন পর্যন্ত এ উপজেলায় ৬৫০ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। বেনাপোলে রোগীর সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইউসুফ আলী।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনম সেন্টারে গত এক সপ্তাহের আরটিপিসিআর পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যাদের শরীরে এই সময়ে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, তাদের মধ্যে শার্শার প্রায় অর্ধশত গ্রামের বাসিন্দারা রয়েছেন।
যশোর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত এক সপ্তাহে শার্শা উপজেলার ৩ জন মারা গেছেন। উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে আরও ৩ জনের।
উপজেলার মাটিপুকুর গ্রামের সাগর বিশ্বাসের ছেলে আলমগীর হোসেন (৩৬), নাভারণ এলাকার হাবীবুর রহমানের স্ত্রী আঞ্জুয়ারা বেগম (৫৫) ও গোগার বাদল চৌধুরীর স্ত্রী সবিতা রানী (৬০) মারা গেছেন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে।
প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে অনেকেরই ৮ থেকে ১০ দিন সর্দি-কাশি-জ্বর-গলাব্যথার মত উপসর্গ থাকলেও তারা কোভিড পরীক্ষা করাতে অনীহা দেখাচ্ছেন। ফলে শনাক্তের প্রকৃত সংখ্যাও জানা যাচ্ছে না।
যশোরে বাগআচড়া সাত মাইলের রুবা ক্লিনিক প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক ডা. আহসান হাবিব রানা বলেন, “এখন সারা দিন যত রোগী পাচ্ছি. তার ৯০ শতাংশই জ্বরের রোগী। সর্দি-জ্বর, শ্বাসকষ্ট বা গলাব্যথার মত উপসর্গ নিয়ে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক রোগী আসছে। যাদের বেশিরভাগের মধ্যে করোনাভাইরাসের উপসর্গ থাকছে। অধিকাংশ আসছেন দক্ষিণ শার্শার বিভিন্ন গ্রাম থেকে। এ অঞ্চলের অনেক বাড়িতিই করোনাভাইরাসের উপসর্গের রোগী রয়েছে।”
সংক্রমণ ঠেকাতে উপজেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জনপ্রতিনিধিরা কঠোর অবস্থানে থাকলেও মাঠ পর্যায়ে প্রভাব না পড়ায় কঠোর বিধিনিষেধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সিরাজুল হক মঞ্জু।
শার্শার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর আলিফ রেজা জানিয়েছেন, জেলা কোভিড প্রতিরোধ কমিটির সিদ্ধান্তে ১৫ জুন থেকে সাত দিনের জন্য বেনাপোল বাজার ও শার্শা সদর ইউনিয়নকে উচ্চ ঝুঁকির এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে কঠোর বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে।
এসব এলাকায় ঘরের বাইরে এবং জনসম্মুক্ষে সকলকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। মোটরসাইকেলে একজন ও ইজিবাইকে দুইজনের বেশি যাত্রী বহন করা যাবে না।
বিকাল ৫টার পর সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে। হোটেল রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়া যাবে না এবং চায়ের দোকানে বেঞ্চ, কেরামবোর্ড ও টেলিভিশন রাখা যাবে না।
বেনাপোল ও নাভারনে দোকানপাট, শপিংমল, বিপণীবিতাণ বন্ধ রাখার কথা থাকলেও সরেজমিনে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। বাগআচড়া এলাকায় বিধিনিষেধ মানছে না সাধারণ মানুষ।
পাশের উপজেলা সাতক্ষীরার কলারোয়ায় কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকায় সেখানকার লোকজন কাজকর্ম করতে আসছেন বাগআচড়া বাজারে। গ্রামের বাজারগুলোতে রাত ১০টা পর্যন্ত দোকানপাট খোলা রাখতে দেখা গেছে।
বাগআচড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইলিয়াছ কবির বকুল বলেন, “করোনা সংক্রমণের অন্যতম হটস্পট এখন বাগআচড়া। আমরা আতঙ্কিত। বাগআচড়া সাতমাইলে রয়েছে পশুহাট ও বাগআচড়া বাগুড়িতে বসে আমের হাট।
তিনি জানান, এখান থেকে দূরপাল্লার বাসসহ আন্তঃজেলা বাস ছাড়ছে। সাতক্ষীরার মানুষ ভেতরের রাস্তা দিয়ে বাগআচড়ায় যাতায়াত করছে।
বাগআচড়ায় ইতোমধ্যে ১৬ জন কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন। পরীক্ষা হলে এ সংখ্যা আরো বেড়ে যাবে বলে মনে করেন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান।