ফেরিতে ভিড়ের চাপে ৫ জনের মৃত্যু

বিধিনিষেধের মধ্যে ঈদযাত্রার পথে শিমুলিয়া থেকে গাদাগাদি করে ফেরিতে বাংলাবাজারে আসার পথে পাঁচ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ২০ জন।

মাদারীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 May 2021, 09:58 AM
Updated : 12 May 2021, 05:47 PM

মাদারীপুরের শিবচরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, বুধবার দুপুরে দুই ঘণ্টার ব্যবধানে দুটি ফেরিতে ভিড়ের চাপে ওই প্রাণহানি ঘটে।  

নিহতদের মধ্যে তিন জন হলেন শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কলিকাপ্রসাদ এলাকার মো. গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মো. আনচুর মাদবর (১৫), মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার আল আমীন ব্যাপারীর স্ত্রী নিপা বেগম (৪০) ও বরিশালের মুলাদি উপজেলার চরকালিখানের এছহাক আকনের ছেলে নরুদ্দিন আকন (৪৬)।

দুজনের নাম পরিচয় জানা যায়নি।

আহতদের মধ্যে ১২ জনকে কাঁঠালবাড়িতে অস্থায়ী ক্যাম্প করে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তিন জনকে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং বাকিদের পাঁচ্চর রয়েল হাসপাতালে পাঠানো হয়।

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে দূরপাল্লার গণপরিবহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় গত কয়েকদিন ধরে ঈদযাত্রায় দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর মানুষ প্রচণ্ড গাদাগাদি করে ফেরি পার হচ্ছে।

শুধু অ্যাম্বুলেন্সও জরুরি পণ্যবাহী গাড়ির জন্য ফেরি চলাচলের কথা থাকলেও হাজার হাজার মানুষ মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া থেকে ফেরিতে উঠছে মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাটে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।

কয়েকদিন আগে শিমুলিয়া থেকে ছাড়া একটি স্পিডবোট মাদারীপুরের শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটের কাছে একটি বালুবাহী বাল্কহেডকে ধাক্কা দিয়ে পদ্মা নদীতে ডুবে গেলে ২৬ জন নিহত হয়।

বিধিনিষেধের মধ্যে ওই দুর্ঘটনায় নৌপথে অবৈধ চলাচলে দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে বুধবার এই দুর্ঘটনা ঘটল।

আসাদুজ্জামান বলেন, “মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট থেকে বেলা ২টার দিকে বাংলাবাজার ঘাটে আসার সময় রো রো ফেরি এনায়েতপুরিতে ভিড়ের চাপে চারজনের মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে দুজন পুরুষ ও দুজন নারী।

“তার আগে বেলা ১২টার দিকে রো রো ফেরি শাহ পরানে ভিড়ের চাপে অসুস্থ হয়ে মারা যায় এক কিশোর।”

শিবচর থানার ওসি মিরাজ হোসেন জানান, সকাল পৌনে ১১টার দিকে শিমুলিয়া ঘাট থেকে তিন হাজারের মতো যাত্রী নিয়ে রো রো ফেরি শাহ পরান রওনা হয়। বেলা ১২টায় ফেরিটি বাংলাবাজার পৌঁছায়। বাংলাবাজার ফেরিঘাটের ৩ নম্বর পন্টুনে নোঙর করার পরপরই হুড়োহুড়ি করে নামতে শুরু করে যাত্রীরা।

“ওই সময় যাত্রীদের ভিড়ের চাপে কিশোর আনচুর মাদবর মারা যায়।”

আনচুর মাদবর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে।

নিহত তিন জনের পরিচয় মিলেছে; তাদের একজনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি দুজনের নাম পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি।

এদিকে, বিকালে দুর্ঘটনাস্থল বাংলাবাজার ঘাট এলাকায় পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক নজরুল ইসলাম।

তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, “যারা ফেরিতে মারা গেছে তাদের ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা উদ্ধার করেছে। একটি ফেরি থেকে চার জন উদ্ধার করা হয়, যাদের মধ্যে দুজন পুরুষ ও দুজন নারী। এর আগেও আরেকটি ফেরিতে একটি ছেলে মারা গেছে।

“ফেরিতে প্রচণ্ড ভিড়, গরম আর আক্সিজেনের অভাবে তাদের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে; তাদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।”

শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শশাঙ্ক ঘোষ সাংবা‌দিক‌দের বলেন, “এক সাথে অনেকক্ষণ রোদে দাঁড়িয়ে থাকা ও অতিরিক্ত যাত্রীর চাপাচাপির কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।”