বৃষ্টিহীন বৈশাখে আম বাঁচাতে বাগানে বাগানে সেচ দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না বলছেন কৃষকরা। এতে ক্ষতির আশঙ্কায় উৎকণ্ঠা বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
গত বছরের প্রথম চার মাসে ১১৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের নথি রয়েছে কৃষি বিভাগের। শুধু এপ্রিল মাসেই বৃষ্টি হয়েছিল ৭২ মিলিমিটার। অথচ গত অক্টোবরের পর এ জেলায় বৃষ্টির দেখা মেলেনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে সর্বশেষ বৃষ্টি হয়েছিল গত বছরের ৯ অক্টোবর। অক্টোবরে বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছিল ৯৯ মিলিমিটার। এরপর জেলায় আর বৃষ্টি হয়নি।
গত বছর এ জেলায় ৩৩ হাজার ৩৫ হেক্টর জমিতে আড়াই লাখ টন আম উৎপাদন হয়েছিল। এ বছর ৩৪ হাজার ৭৭৮ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে এক হাজার ৭০০ হেক্টর বেশি।
চলতি মৌসুমে ৯৫ শতাংশ গাছে মুকুল আসে। আমের মুকুল দেখে বাম্পার ফলনের আশা করা হয়েছিল।
বুধবার সরেজমিনে এমন কয়েকটি বাগান ঘুরে দেখা যায় একই চিত্র। আম চাষিরাও বলছেন, এবার বাগানে বাগানে ব্যাপক মুকুল এসেছিল। ‘এ পরিমাণ মুকুল গত এক দশকেও আসেনি’।
মুকুল থেকে গুটি হওয়ার পর আমের আকার যখন এক ইঞ্চি বা তার একটু বড় হয়, তখন থেকেই আম ঝরে যাচ্ছে বলছেন চাষিরা। বাধ্য হয়ে বাগানে বাগানে সেচ দিচ্ছেন তারা। যদিও সেচ দিয়ে কোনো লাভ হচ্ছে না বলছেন খামারীরা।
চাষিদের দাবি, কোনো কোনা বাগান থেকে অর্ধেক আম ঝরে পড়েছে এরইমধ্যে। এ অবস্থায় আমের ফলন নিয়ে সংশয়ের মধ্যে রয়েছেন তারা।
বুধবার জেলা শহরের বিভিন্ন বাগানে ঘুরে শিশু-কিশোরদের ঝরে পড়া আম কুড়াতে দেখা গেছে।
তিনি বলেন, এ বাগানে প্রতিদিনই প্রচুর আম ঝরে পড়ছে। অনাবৃষ্টির কারণে বোটা শুকিয়ে যাচ্ছে।
“এছাড়া বৃষ্টির অভাবে আমের স্বাভাবিক বৃদ্ধিও ব্যাহত হচ্ছে। বৃষ্টি না হলে আম ঝরে পড়বে, তাদের আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়তে হবে।”
একই এলাকার আব্দুল কুদ্দুস বাগান লিজ নিয়েছেন ভূতপুকুর এলাকায়। তার বাগানে সাড়ে তিনশ’ গাছ রয়েছে।
তিনি বলেন, “এ মুহূর্তেই বৃষ্টি দরকার নইলে আম টিকবে না। এতগুলো গাছে সেচ দেওয়ায় সম্ভব নয়। বৃষ্টি একমাত্র ভরসা।”
তিনি জানান, এবার মুকুল খুব ভালো হয়েছিল। মুকুল দেখে ভালো ফলনেরও আশা করেছিলেন। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় আমের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
এ জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল আম। আম উৎপাদন ঘিরে বছরের তিন মাসেরও বেশি সময় এ জেলায় চলে ব্যবসা-বাণিজ্য।
আমচাষিদের শঙ্কা, মহামারীর মধ্যে এবার আমের উৎপাদন ব্যাহত হলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে।