তিস্তা নদীতে মাছ না পেয়ে খালি হাতে বাড়ি ফেরার সময় এই কথাগুলো বলছিলেন জেলে রহিদুল ইসলাম।
তিনি আরও বলেন, “নদীত পানি যখন বেশি আছলো তখন মাছও বেশি পাছনো; আর হামার দিনও ভালো কাটছোলো। তিন/চার মাস হামার এই তিস্তার নদীত পানি কম থাকায় একটা মাছও না পাই। বর্তমানে হামরা ছাওয়া-পোয়া নিয়া খুব কষ্টে আছি।”
তিস্তার বিস্তীর্ণ এলাকায় পানি না থাকায় উদ্বেগে আছেন তিস্তা পাড়ের হাজারো জেলে। দিন এনে দিন খাওয়া এসব জেলে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন ।
স্থানীয়রা জানান, তিন মাস পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য স্থানীয় দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা সুদ নিয়ে জীবনযাপন করেন। অনেকে দিনমজুরি, কেউবা জাল সেলাই করে উপার্জনের চেষ্টা করেন।
রংপুরের কাউনিয়া ও গংগাচড়া উপজেলায় তিস্তা নদীতে এখন ঐতিহ্যবাহী বৈরালি মাছ নেই বললেই চলে। ব্যাপক চাহিদা থাকলেও সুস্বাদু এই মাছটি জেলেদের জালে আর আগের মতো ধরা পড়ে না। যেটুকু পাওয়া যায় বাজারে তা বিক্রি হয় অত্যধিক চড়া মূল্যে।
কিছু জেলে সারা দিন দু-এক কেজি করে ছোট-বড় বৈরালি মাছ ধরছেন। মুহূর্তেই সেসব নদীর পাড়েই ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, তিস্তা ব্যারাজের উজানের অংশে সামান্য পানি আছে। ব্যারাজের ভাটিতে একেবারে পানি নেই বললেই চলে। চারদিকে শুধু মরুভূমির মতো চর চোখে পড়ে। ব্যারাজ সংলগ্ন এলাকায় বেশকিছু জায়গাজুড়ে চলছে মৃদু পানির স্রোত। এতেই মাছ ধরার চেষ্টা করছে জেলেরা।
স্থানীয় জেলে রমজান আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তিস্তা নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা মানুষের সংখ্যা ২০ হাজারের কম নয়। পানির মৌসুমে মাছ ধরি যে টাকা ইনকাম করি সেই টাকা এলা তিন/চার মাস ধরি বসি বসি খাই। অনেকে তা-ও পায় না।”
দোয়ানী মৎস্য সমবায় সমিতির সভাপতি রজব আলী বডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বর্তমানে তিস্তা নদীতে পানি না থাকায় পাঁচ শতাধিক জেলে বেকার হয়ে পড়েছেন। তিস্তায় চার মাস পানি না থাকায় বেশিভাগ জেলে কর্মহীন হয়ে পড়েন।
তাই জেলেদের কথা চিন্তা করে সরকারি সাহায্য প্রদানের দাবি জানান তিনি।
রংপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বরুন চন্দ্র বিশ্বাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জেলার নদীগুলোতে তিন থেকে চার মাস পানি না থাকায় জেলেরা কষ্টে দিন কাটান। তাই জেলেদের তালিকা প্রণয়ন হয়ে আছে। আমরা তাদের কথা চিন্তা করে সরকারের কাছে পাঠিয়েছি। সরকার বরাদ্দ দিলে আমরা তাদের দিয়ে দেব।