হল ছাড়ছেন না জাবি শিক্ষার্থীরা, সংবাদ সম্মেলনে নতুন দাবি

নিরাপত্তার দাবিতে তালা ভেঙে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীরা হল ত্যাগে কর্তৃপক্ষের নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করে আগের দাবির সঙ্গে নতুন কয়েকটি যোগ করেছেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Feb 2021, 11:36 AM
Updated : 22 Feb 2021, 01:11 PM

সোমবার দুপুরে ক্যাম্পাসের পরিবহন চত্বরে সংবাদ সম্মেলনে তারা এই ঘোষণা দেন। এর আগে তারা ছয় দফা দাবি দিয়েছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের দাবি পূরণে উদ্যোগী না হলে তারা পরবর্তী কর্মসূচিতে যাবেন বলে হুঁশিয়ার করেছেন সংবাদ সম্মেলনে।

এদিকে, সংবাদ সম্মেলনের আগে মিছিলসহ গিয়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের তালা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করেন; পরে ছাত্রীদের সেখানে রেখে আসেন।

বিকালে শিক্ষকদের মিটিং শেষে বঙ্গমাতা হলে গিয়ে প্রভোস্ট মজিবুর রহমানসহ কয়েকজন শিক্ষক তাদের হলত্যাগ করতে অনুরোধ করেন। কিন্তু ছাত্রীরা হল ছাড়বেন না বলে জানিয়ে দেন।

তিন দিন আগে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন গেরুয়া এলাকায় স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষের পরে নিরাপত্তার দাবিতে শনিবার দিনভর বিক্ষোভ দেখিয়ে তালা ভেঙে হলে ঢুকে পড়েন শিক্ষার্থীরা। রবি ও সোমবার তাদের সঙ্গে যোগ দেন আরও অনেকে।

এদিকে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে সরকারিভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা হল খোলার কোনো ঘোষণা না আসায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সোমবার সকাল ১০টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে নির্দেশ দেয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তা মানেনি।

দুপুর ২টায় পরিবহন চত্বরের সংবাদ সম্মেলনে নতুন দাবি পড়ে শোনান উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী (৪৬ তম ব্যাচ) শারমিন আক্তার সাথী।

নতুন দাবির মধ্যে রয়েছে রোববার মধ্যরাতে হল ছাড়ার জন্য দেওয়া কর্তৃপক্ষের প্রজ্ঞাপন ১২ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার করা। এই প্রজ্ঞাপন তারা প্রত্যাখান করেছেন।

তারা হল না ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন এবং কোনোভাবে হল থেকে বের করার চেষ্টা না করার আহ্বান জানান।

আগামী ২৪ ঘণ্টার মাঝে গেরুয়ার ‘সন্ত্রাসীদের’ চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও এর ইন্ধনদাতাদের খুঁজে বের করে বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।

ক্যাম্পাসের কয়েকজন ছাত্র-শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী এই ঘটনায় সংযুক্ত থাকার কথা বিভিন্ন মাধ্যেম আসার উল্লেখ করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করে এর সত্যতা নিশ্চিতের দাবি জানান তারা।

এছাড়া থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নিয়ে চিহ্নিত ব্যক্তিদের নামে মামলা করলে তারা সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

এই দাবি মেনে না নিলে আগামী ২৪ তারিখ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেন তারা।

শারমিন সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা অনিরাপদ বোধ করছি। ইতিমধ্যে ছেলেরা তাদের হলে অবস্থান করছে। আমরা চাই প্রশাসন সব হল খুলে আমাদের থাকার ব্যবস্থা করে দিবে। আজ একটি হলে প্রবেশ করেছি। হল খুলে না দিলে কীভাবে হল খুলে নিতে হয় সেটা আমরা দেখব।”

এদিকে, আগামী ১৭ মে হল আর ২৪ মে ক্লাস শুরুর ঘোষণা আসায় শিক্ষামন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানালেও ভিন্ন পরিস্থিতির কারণে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদালয়ে তাদের অবস্থান অনড় থাকবে বলেছেন শারমীন আক্তার।

শারমীন সাংবাদিকদের বলেন, "আমরা শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যকে সাধুবাদ জানাই। তবে জাহাঙ্গীরনগরের পরিস্থিতি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো না। এখানকার অনেক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস সংলগ্ন বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছে, যা মোটেই জাবির শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ না। এই ভিন্ন পরিস্থিতি বুঝতে হবে।

"এই প্রেক্ষিতে আমরা হলে অবস্থানের সিদ্ধান্তে এখনও অটল আছি এবং আজকেই পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ছাত্রী হলে শিক্ষার্থীরা উঠবে।”

সরেজমিনে দেখা গেছে, বেলা ১২টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা পরিবহন চত্বরে জড়ো হন। সেখান থেকে সাড়ে ১২টার দিকে মিছিল নিয়ে তারা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের সামনে যান। এরপর শিক্ষার্থীরা বঙ্গমাতা হলের তালা ভাঙেন এবং ভেতরে ছাত্রীরা অবস্থান নেন।

পরে শিক্ষার্থীরা আবার মিছিল নিয়ে পরিবহন চত্বরে ফিরে যান।

আন্দোলনরত অর্থনীতি বিভাগের ৪৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরাও মিছিল নিয়ে পরিবহন চত্বরে যান।

অর্থনীতির এই ব্যাচের শিক্ষার্থী মাহদী হাসান রোকাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা আমাদের ছয় দফা দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব। ৬ দফা দাবি এখনও বহাল আছে। নিরাপত্তার কারণে সব মেয়েদের একটি হলে ওঠার ব্যবস্থা আমরা করেছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকালের জরুরি নোটিশকে আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি।” 

এই ব্যাপারে হল প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি মোতাহার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা এখনও সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আাছ। নতুন করে এখনও কোনো নির্দেশনা আসেনি। ছাত্রীদের বলব তারা যেন হল ছেড়ে দিয়ে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়।”

এদিকে, বিকাল ৪টায় শিক্ষকদের মিটিং শেষে বঙ্গমাতা হলে যান হল প্রভোস্ট মজিবুর রহমানসহ অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ। তারা ছাত্রীদের হলত্যাগ করতে অনুরোধ করলে তারা হল ছাড়বেন না বলে জানান।

এই ব্যাপারে প্রভোস্ট মজিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, তারা বিশ্ববিদ্যালয় আইন দেখে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেবেন।

এই ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম এবং প্রক্টররের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।