ঘাটে পানি কমে যাওয়া এবং নদীতে চর জেগে ওঠায় দুই দফা নৌকা বদল করে ও অনেক ঘুরপথে অধিক সময়ে যাত্রীদের এপার-ওপার করতে হচ্ছে। এতে প্রায় অচল হওয়ার পথে এই দুটি নৌকা ঘাট। তাই ইজারার টাকা ওঠা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন ইজারাদাররা।
এলাকায় ঘাট সংশ্লিষ্ট বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কালিতলা ও ধুনট উপজেলার শহড়াবাড়ী নৌকা ঘাট থেকে জামালপুর ও সিরাজগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকার সঙ্গে পারাপার চলে।
এর মধ্যে রয়েছে যমুনার বিভিন্ন চরাঞ্চল এবং পাশের জামালপুর, সিরাজগঞ্জ জেলার জামতৈল, ধারা বর্ষা, মানিক দাইর, ডাকাত মারা, বোহাইল, মাঝিরা, শংকরপুর, নাটুয়ার পাড়া, তারাকান্দীসহ প্রায় ২০টি চরাঞ্চল।
এছাড়া যমুনার পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ের মানুষের চলাচলেরও প্রধান পথ ওই দুটি নৌকা ঘাট।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যমুনা ফার্টিলাইজারের সার সহজে এবং কম খরচে বগুড়া সহ উরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় পরিবহন হয় এই দুটি ঘাট দিয়ে।
ধুনট উপজেলার সার ডিলার শামীম সরকার বলেন, “যমুনা সারখানার বরাদ্দের সার আমরা নদী পথেই নিয়ে আসি; কারণ এতে খরচ ও সময় দুটিই কম হয়। সামনে ইরি-বোরো চাষ হবে। ঘাট অচল হলে শতাধিক কিলোমিটার ঘুরে ট্রাকে আনতে হবে।”
এই উপজেলার শহড়াবাড়ী নৌ-বন্দরে কথা হলো সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার শংকরপুর চরের যাত্রী মকবুল হোসেনের সঙ্গে।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঘাট থেকে দুই দফা নৌকা বদল করে এবং বালির পথ হেঁটে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে অনেক পথ ঘুড়ে আসতে হলো। চর জেগে ওঠায় এবং ঘাটের পানি কমে যাওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
সরিয়াকান্দি উপজেলার কালিতলা ঘাটে কথা হয় জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলা থেকে আসা আব্দুল মান্নানের সঙ্গে।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মাদারগঞ্জ থেকে ঘোড়ার গাড়িতে কিছু পথ, তারপর বলির পথ হেঁটে এসে জামতৈলে নৌকায় চড়ে অনেক পথ ঘুরে কষ্ট করে এলাম। যমুনায় পানি কমে যাওয়া এবং চর জেগে ওঠায় চলাচল করতে খুবই কষ্ট হচ্ছে।”
সারিয়াকান্দির কালিতলা নৌ-ঘাটের ইজারাদার সাজেদুর রহমান বলেন, যমুনার চরের মানুষের একমাত্র চলাচলের পথ নৌকা। এছাড়া সারসহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য আনা-নেওয়া হয় নৌপথে। এই নৌ-ঘাট থেকে চরাঞ্চলসহ জামালপুর সদর ও মাদারগঞ্জের মানুষ কম খরচে এবং অল্প সময়ে চলাচল করে।
তিনি বলেন, নৌ-চ্যানেলে পানি একেবারই কম। দুয়েকদিনের মধ্যে পানি শুন্য হয়ে পড়বে। তখন প্রায় দুই কিলোমিটার বালির পথ হেঁটে যাত্রীদের নৌকায় উঠতে হবে।
এছাড়া নৌকা চলাচলের উপযোগী করতেও নদীর ড্রেজিং করা উচিত, বলেন তিনি।
ধুনটের শহড়াবাড়ী নৌকা ঘাটের ইজারাদার হযতর আলী বলেন, ১৮ লাখ টাকায় এক বছরের জন্য ইজারা নিয়েছি। ঘাটে পানি কমে যাওয়া এবং চর জেগে ওঠায় দুই দফা নৌকা বদল করে যাত্রীদের পৌঁছে দিতে হচ্ছে।
“অনেক পথ ঘুরে অধিক সময়ে যাত্রী পারাপার করতে হচ্ছে। প্রায় অচল হওয়ার পথে নৌকা ঘাট। এতেও ইজারার টাকা উঠবে কিনা সন্দেহ।”
তিনি আরও বলেন, যমুনার পূর্বপাড়ে যমুনা সার কারখানা। সেখান থেকে নৌকায় কম খরচ এবং কম সময়ে শহড়াবাড়ী ঘাটে আনা হয়। সেখান থেকে ট্রাকযোগে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছানো হয়। এছাড়া খুচরা ব্যবসায়ীরা এই ঘাট দিয়ে সার আনা-নেওয়া করে থাকে। এখন সার পারাপার বন্ধ রয়েছে।
ঘাট সংস্কার ও যাতায়তের উপযোগী করার দাবি জানান তিনি।
বগুড়া জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আসাদুর রহমান দুলু বলেন, ঘাট ইজারা দেওয়ার পর ইজারাদার নিজ দায়িত্বে নৌকা চালাবেন। তবে ঘাটে যাত্রী সেবার জন যাত্রী ছাউনী, শৌচাগার, পানির ব্যবস্থার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।