ডোমারে গ্রাহকসেবা বন্ধ, টেলিফোন বিল হচ্ছে নিয়মিত

নীলফামারীর ডোমার উপজেলায় দীর্ঘ দিন টেলিফোন সেবা বন্ধ থাকলেও কর্তৃপক্ষ নিয়মিত বিল পাঠাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দুই শতাধিক গ্রাহক।

নীলফামারী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Nov 2020, 04:31 AM
Updated : 1 Nov 2020, 05:47 PM

বার বার অভিযোগ করেও কোনো কাজ হয় না বলে অভিযোগ তাদের। তাই সেবা চালু না হওয়া পর্যন্ত তারা প্রতিমাসে বিল বন্ধ রাখার দাবি জানান।

সড়কের কাজ করতে গিয়ে তার কাটা পড়ায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন বলে জানালেও কবে আবার চালু হবে তা বলতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।

এদিকে, নিয়ম না মেনে টেলিফোন লাইন বসানোর কারণে কেবল কাটা পড়েছে বলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ভাষ্য।

ডোমার টেলিফোন এক্সচেঞ্জের অধীনে ২১৭ জন গ্রাহক রয়েছেন বলে জানান বিটিসিএল নীলফামারী কার্যালয়ের কনিষ্ঠ সহকারী ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন।

গ্রাহকদের অভিযোগ, ডোমার টেলিফোন এক্সচেঞ্জ প্রায় এক বছর ধরে বিকল রয়েছে। ফলে তাদের ফোনে কল আসেও না, তারা কোথাও কল করতেও পারেন না। সেবা বন্ধ থাকলেও কর্তৃপক্ষ প্রতি মাসে ন্যূনতম ১৭৩ টাকা বিল পাঠানো বন্ধ রাখেনি। ফলে দিনের পর দিন তাদের ঘাড়ে বিলের বোঝা ভারী হচ্ছে।

ডোমার উপজেলা শহরের কলেজপাড়ার বাসিন্দা কলেজ শিক্ষক আবু ফাত্তা কামাল পাখি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার বাসায় ২৭৫২১৬ নম্বরে একটি টেলিফোন আছে। কম খরচে ঢাকায় আমার বাবার বাসার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য সংযোগটি নিয়েছিলাম। কিন্তু টেলিফোন বিভাগের তার চুরি হওয়ায় আমারটিসহ আশপাশের আরও কয়েকটির সংযোগ ১০ বছর আগে বিচ্ছিন্ন হয়। অসংখ্যবার অভিযোগ করেও কোনো কাজ হয়নি। অথচ প্রতিমাসে বিলের কাগজ আসা থামেনি।”

সেবা চালু না হওয়া পর্যন্ত মাসিক বিল দেওয়া বন্ধ রাখার দাবি জানান এই শিক্ষক।

উপজেলার থানাপাড়ার গ্রাহক ফিরোজ ফারুক বলেন, “বাসায় ৭৫৩০৭ নম্বরে একটি টেলিফোন আছে, কিন্তু এক বছর ধরে কোনো সেবা পাচ্ছি না। স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ জানিয়েছি, কিন্তু কাজ হয়নি। সেবা বন্ধ হলেও প্রতিমাসে ন্যূনতম বিল ১৭৩ টাকা করে যোগ হচ্ছে বিলের বোঝায়।”

সবুজপাড়া গ্রামের গ্রাহক মোজাফ্ফর আলী পেশায় সাংবাদিক। তার বাসায় ৭৫০৮০ নম্বরে একটি টেলিফোন রয়েছে।

তিনি বলেন, “বছরের বারোমাসেই খারাপ থাকে টেলিফোন। অভিযোগ দিলেও কোনো কাজ হয় না। অথচ বিল আসছে প্রতিমাসে। যেহেতু এক্সচেঞ্জ বিকল তাই আমরা কোনো সেবা পাই না। কিন্তু প্রতিমাসে আমাদের বিলের কাগজ দিয়ে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। সেবা দিতে পারবে না তাহলে বিল বন্ধ রাখুক!”

ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা শবনম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত বছরের ডিসেম্বর মাসে আমি এখানে যোগদান করেছি। এরপর থেকে একদিনও টেলিফোনে কাউকে ফোন দিতে পারি নাই। কিন্তু প্রতিমাসে নুন্যতম বিল আসছে। বাধ্য হয়ে বিল নিয়মিত দিচ্ছি।”

ডোমার টেলিফোন এক্সচেঞ্জে গিয়ে দেখা গেছে কার্যালয়ের দৈন্যদশা। অযত্ন আর অবহেলার পড়ে আছে আসবাবপত্রসহ সকল যন্ত্রপাতি। কাজ না থাকায় সেখানে কোনো গ্রাহকের আসাযাওয়া নেই। দুইজন কর্মচারী কর্মরত থাকলেও উপস্থিত ছিলেন অয়্যারম্যান নজরুল ইসলাম।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বার্তাবাহক পদে থাকা মোমেজা খাতুন ব্যক্তিগত কাজে রয়েছেন অফিসের বাইরে।

কতজন গ্রহক রয়েছে এবং কী কারণে গ্রাহকদের টেলিফোন বিকল পড়ে রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম একচেঞ্জটির অধীনে টেলিফোনের সঠিক হিসাব জানাতে পারেননি।

তিনি বলেন, “নীলফামারী থেকে ডোমার পর্যন্ত সড়ক উন্নয়নের কাজের জন্য মূল সংযোগ তার কেটে যাওয়ায় কারণে এক্সচেঞ্জ  বিকল; তাই গ্রহকদের ফোন অচল হয়ে পড়েছে।”

কবে থেকে এক্সচেঞ্জ অচল রয়েছে তার সঠিক দিনক্ষণ জানাতে পারেননি তিনি।

সার্বিক বিষয়য়ে বিটিসিএল নীলফামারী কার্যালয়ের কনিষ্ঠ সহকারী ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নীলফামারী থেকে ডোমার পর্যন্ত মহাসড়কের উন্নয়ন কাজে মাটি খোঁড়াখুঁড়ির কারণে অপটিক্যাল ফাইবার লিংক কেটে গেছে। এই কারণে একচেঞ্জটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় গ্রাহকরা সেবা পাচ্ছেন না গত ছয় মাস ধরে।”

তিনি আরও জানান, একই কারণে এর আগেও অন্তত ১০ বার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে সে সময় রংপুর থেকে টিম এসে মেরামত করেছে।

সংযোগটি ডোমার ডিমলা উপজেলায় গেছে; ফলে সেখানেও ৯৮টি টেলিফোন গ্রাহক সেবা পাচ্ছে না বলে তিনি জানান।

সেবা বন্ধ থাকলেও বিল চলমান থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, “এটি বিটিসিএলের নিয়ম। বিল বন্ধ করার এখতিয়ার আমাদের নেই। গ্রাহকরা সেটি ঊর্ধ্বতন মহলে কথা বলে দেখতে পারেন।”

কবে গ্রাহকের এই ভোগান্তি শেষ হবে তা জানাতে পারেননি এই কর্মকর্তা।

নীলফামারী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ মনজুরুল করিম বলেন, নীলফামারী- ডোমার মহাসড়কটি উন্নয়ন কাজের জন্য ২০১১ সালে জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এরপর ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে উন্নয়ন কাজ শুরু করা হয়। কাজের মেয়াদ রয়েছে ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত।

তিনি বলেন, “জমি অধিগ্রহণ করার পরে টেলিফোন বিভাগ ওই সড়ক দিয়ে কেবল স্থাপন করে। তারা এই বিষয়ে আমাদেরকে অবহিত করেনি। এছাড়া ওই কেবল সড়কের বাউন্ডারি দিয়ে অন্তত চার ফুট মাটির নিচে স্থাপনের কথা। এটি হলে কেবল কাটার কথা নয়। কিন্তু তরা সেটি না করে মাটির দুই ফুট নিচ দিয়ে স্থাপন করেছে। এই কারণে মাটি খোঁড়খুঁড়িতে কেবল কাটা পড়েছে।”

সড়ক ও জনপথ বিভাগের রাস্তার কাজ করার সময় লাইন কাটা পড়লেও তারা দোষ চাপাচ্ছে টেলিফোন কর্তৃপক্ষের ঘাড়ে। কিন্তু গ্রাহকদের সমস্যা সমাধানে কোনেো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। তাই গ্রাহকরা জানে না কবে তাদের এই সমস্যা সমাধান হবে; বন্ধ হবে প্রতিমাসের বিল আসা।