পাবনায় কৃষককে যুবলীগ নেতার নির্যাতনের অভিযোগ

বিলে মাছ ধরায় পাবনায় এক যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে এক কৃষককে অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।

সৈকত আফরোজ আসাদ পাবনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Oct 2020, 01:14 PM
Updated : 28 Oct 2020, 01:14 PM

স্থানীয় কৃষক মাসুদ রানাসহ গ্রামবাসীর আভিযোগ, সাঁথিয়া উপজেলা যুবলীগ সভাপতি আশরাফুল আলম টুটুল কৃষকদেরকে নিজ নিজ জমি থেকেও মাছ ধরতে বাধা দেন। কেউ তা অমান্য করলে নির্যাতন করে তার সাঙ্গপাঙ্গরা।

তবে আশরাফুল আলম টুটুল তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

সম্প্রতি কৃষক মাসুদ রানা তার জমিতে মাছ শিকার করেছেন। তাই গত ১৯ অক্টোবর একদল লোক তাকে তুলে নিয়ে সারারাত নির্যাতন করে পরদিন ফেলে দিয়ে যায়।

এই ব্যাপারে সাঁথিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও পুলিশ মামলা নথিভুক্ত করেনি বলে মাসুদের অভিযোগ।

সরেজমিনে সাঁথিয়ার হাঁড়িয়াকাহন গ্রামের সোনাই বিলে গিয়ে দেখা যায়, বর্ষার পানিতে ডুবে আছে বিল।

স্থানীয়রা জানান, কৃষিপ্রধান এই গ্রামে শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদ আর বর্ষায় পানিতে নিমজ্জিত হলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন গ্রামবাসীরা। তবে গত কয়েক বছর ধরে উপজেলা যুবলীগ সভাপতি আশরাফুল আলম টুটুল বিলটি দখলে নিয়ে কৃষকদের তার কাছে ঘেঁষতে দিচ্ছেন না। নিজ মালিকানার জমিতে মাছ ধরলেও টুটুলের লোকজনের রোষানলে পড়তে হয় তাদের।

হাড়িয়াকাহন গ্রামের কৃষক মনসুর আলী বলেন, বন্যার পানির কারণে গত চার থেকে পাঁচ মাস ধরে তারা নিজেদের জমিতে চাষ করতে পারেননি।

“এখন বন্যার পানি মাঠ থেকে নেমে আসছে, তাই আমরা মাঠে মাছ ধরার জন্য জাল পেতেছিলাম। কিন্তু যুবলীগের লোকেরা জলাশয়টি দখলে নেওয়ার কারণে মাছ ধরতে বাধা দেয়।”

তারা খাওয়ার জন্য তাদের (টুটুলের লোকজন) চোখ এড়িয়ে মাছ ধরলেও বিক্রি করার জন্য মাছ ধরতে পারছেন না বলে জানান মনসুর।

মাসুদ রানা

গ্রামের আরেক বাসিন্দা বিলের জমির মালিক রফিকুল ইসলাম বলেন, “মাছ ধরতে গেলেই টুটুলের সন্ত্রাসীরা আমাদের জাল নষ্ট করে দেয়। তাদের হুমকির কারণে আমরা নিজস্ব জমিতে যাওয়ারও সাহস পাই না।”

সম্প্রতি নিজের জমিতে মাছ ধরেন কৃষক মাসুদ রানা।

এরপর টুটুলের লোকজন অস্ত্রের মুখে সাঁথিয়া বাজার থেকে মাসুদকে তুলে নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে রাতভর নির্যাতনের পর বাজারে ফেলে দিয়ে যায় বলে মাসুদের অভিযোগ।

এই ঘটনায় সাঁথিয়া থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে পুলিশ তা গ্রহণ না করে তালবাহানা করছে বলে অভিযোগ মাসুদের।

ভুক্তভোগী মাসুদ রানা বলেন, গত ১৯ অক্টোবর সাঁথিয়া সদরের সাঁথিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে থেকে কয়েকজন যুবক মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে তাকে জোরপূর্বক মোটরসাইকেলে উঠিয়ে নিয়ে যায় নন্দনপুরে আশরাফুল আলম টুটুলের ডিশ লাইন অফিসে।

“যুবলীগ নেতা আশরাফুলের নির্দেশে তারা মারপিট করে আমার কাছ থেকে ৫৭ হাজার ২০০ টাকা কেড়ে নেয় এবং ঘরে আটকে রেখে মারপিট করে। এরপর টুটুলের তেঁতুলিয়া গ্রমের বাড়িতে নিয়ে টুটুলসহ সবাই মিলে আবার মারপিট করে।”

মাসুদ রানা বলেন, ঘটনার পর তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। কিছুটা সুস্থ হলে তার ভাই মিল্টনের সঙ্গে থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে গেলে অভিযোগ মামলা হিসেবে নথিভুক্ত না করে বার বার ঘোরাচ্ছে পুলিশ।

এ ব্যাপারে সাঁথিয়া থানার ওসি আসাদুজ্জামান বলেন, “এই বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি; মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে। অভিযোগ আমলে নিতে আমরা কোনো গাফিলতি করিনি।”

এদিকে সাঁথিয়া যুবলীগ সভাপতি আশরাফুল আলম টুটুল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “নন্দনপুর গ্রামের কালীপদ হালদার, সুনীল হালদার এবং গ্রামের কয়েকজন জেলে জলাশয়ের খালটি ইজারা নিয়ে নিয়েছে। আমি গ্রামবাসীকে বাধা দিচ্ছি না।”

মাসুদ রানাকে নির্যাতনের বিষয়ে জানতে চাইলে টুটুল বলেন, “আমি কাউকে অপহরণ কিংবা নির্যাতন করিনি; বরং যারা তুলে এনেছিল তাদের বুঝিয়ে মাসুদকে উদ্ধার করেছি।”

সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম জামাল আহমেদ বলেন, “কারো নিজস্ব জমিতে মাছ ধরতে বাধা দেওয়া বেআইনী। আধিপত্যের জোরে সোনাই বিলে একটি মহল এমন ঘটনা ঘটিয়েছে বলে শুনেছি।”

কোনো পক্ষই তার কাছে অভিযোগ নিয়ে আসেনি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, স্থানীয় একজন নেতা উভয়পক্ষের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করছেন বলে তিনি শুনেছেন।