স্থানীয় কৃষক ও কৃষি বিভাগ জানায়, যমুনার চরাঞ্চল ও বাঙালি নদীর আশপাশ এলাকার ফসলের মাঠ ও ঘাস নষ্ট হয়ে গেছে। এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে সারিয়াকান্দী উপজেলার যমুনার বোহাইল, কাজলাসহ অন্যান্য চরাঞ্চল ও বাঙালি নদীর দুধারে সারিয়াকান্দী, গাবতলী, ধুনট, শেরপুর উপজেলার ফসলী মাঠ। এসব এলাকায় বিপুল বিদেশি জাতের নেপিয়ার ঘাস নষ্ট হয়ে গেছে।
এই অবস্থায় ঘাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় পশু পালনকারীরা বিপাকে পড়েছেন।
ঘাসের সংকট মোকাবেলায় জেলার কয়েকটি উপজেলায় বিদেশি জাতের নেপিয়ার ঘাস উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে।
বগুড়ার সবচেয়ে বড় ঘাসের হাট ও সবচেয়ে বেশি বিদেশি জাতের নেপিয়ার ঘাস উৎপাদন এলাকা ধুনটের গোসাইবাড়ীতে গিয়ে ঘাস চাষি ও পশু পালনকারীদের সঙ্গে কথা হয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে।
গোসাইবাড়ীর ঘাস ও খড়ের বাজারে গিয়ে কথা হলো ঘাস চাষি ও বিক্রেতা মিনহাজ উদ্দীন ফিরোজ ও হৃদয় শেখের সঙ্গে।
তারা জানান, বন্যায় গোচারণ ভূমি ও ফসলের মাঠ ডুবে ঘাস নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঘাস ও খড়ের দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
নিজেকে ওই এলাকার সবচেয়ে পুরানো ঘাস চাষি দাবি করে তিনি আরও বলেন, এক মাস আগে ছোট ঘাসের আঁটি প্রতি কুড়ি ৮০ টাকা দরে বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে দেড়শ টাকা কুড়ি। জমির ঘাস প্রায় শেষ হয়ে গেছে।
শুকনো খড় বিক্রেতা চিথুলিয়া গ্রামের বাদশা মিয়া বলেন, প্রতি বোঝা খড় একমাস আগে ২৫০ টাকা বিক্রি করলেও এখন বিক্রি করছি ৫শ টাকা বোঝা। বিক্রির পর এখন আর খড় নেই তার।
ওই গ্রামের আনোয়ার হোসেন বলেন, তিনি দুটি গরু পালন করছেন। আগে একশ টাকার ঘাস কিংবা খড় হলেই হতো। এখন দাম বেড়ে যায়ও দুশ টাকা লাগে। গরু পালন করাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আগাম জাতের ধানের খড় বিক্রেতা কোরবান আলী বলেন, “ধান বিক্রি করে যে টাকা পাব, খড় বিক্রি করেও সেই টাকা উঠবে ঘরে। ধানের খড় প্রতি কুড়ি আগে ৭০ টাকা হলেও হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে দেড়শ টাকায়।
বেসরকারি পর্যায়ে বগুড়ার সবচেয়ে বড় খামারি প্রেসিডেন্ট ও বঙ্গবন্ধু পুরস্কার প্রাপ্ত আব্দুস সবুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার খামারে একশর বেশি গরু রয়েছে। ঘাস ও খড়ের দাম আকাশচুম্বী। টাকা দিয়েও মিলছে না। এ রকম ঘাস ও খড়ের দাম থাকলে খামারীরা পথে বসবে। বিষয়টি সরকারি পর্যায়ে গুরুত্ব দিয়ে খামারিদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে।
বগুড়া জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রফিকুল আলম তালুকদার বলেন, বন্যায় দেশি জাতের ঘাস নষ্ট হওয়ায় এবং গোচারণ ভুমি পানিতে ডুবে যাওয়ায় বিদেশি জাতের নেপিয়ার ঘাস উৎপাদন হলেও গো খাদ্যের সংকট বেড়েছে।
তিনি আরও জানান, ইরি-বোরোর খড় বৃষ্টির কারণে কৃষকরা শুকাতে পারেনি। বেশির ভাগ পচে গেছে। তাই খড়ের সংকট দেখা দিয়েছে। সংগত কারণে দামও বেড়ে গেছে।
সারিয়াকান্দী, ধুনট, গাবতলী, শেরপুর উপজেলায় ঘাসের সংকট বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই কয় উপজেলায় ৬৭৮ একর জমিতে বিদেশি জাতের নেপিয়ার ঘাস উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।