কুড়িগ্রাম ও শেরপুরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ বিষয়ে জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল বলে জানিয়ে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড।
কুড়িগ্রামের পানি উন্নয়ন বোর্ডে নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, উজানে অতিবৃষ্টির কারণে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
কুড়িগ্রামের মানুষ চতুর্থ দফা বন্যার কবলে পড়েছে উল্লেখ করে বিভিন্ন জায়গায় ভাঙন দেখা দেওয়ার কথাও বলেন তিনি।
“এ মুহূর্তে তীব্র স্রোতের কারণে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি অনুকূলে আসলেই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ভাঙন ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার বিকালে জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলা নদীর পানি ১৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিস্তা, ব্রহ্মপূত্র, দুধকুমরসহ সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেও তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে, ব্রহ্মপূত্র নদের পানি চিলমারীতে ২৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং নুনখাওয়া পয়েন্টে ৬০ সেন্টিমিটার বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল কুমার জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রামে ১২৮মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
এ অবস্থা আরো তিন থেকে চার দিন বিরাজ করবে বলছেন তিনি।
অপরদিকে কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মোস্তাফিজার রহমান জানান, গত দুই দিনে নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে দুই হাজার ১০৪ হেক্টর ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। এর মধ্যে আমন এক হাজার ৮৪০ হেক্টর, মাসকালাই ১২৭ হেক্টর, শাকসবজি ১২৭ হেক্টর ও বাদাম ১০ হেক্টর।
ফুলবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী বলেন, “আমার উপজেলায় চারটি ইউনিয়নে প্রায় আট হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
এছাড়াও ভুরুঙ্গামারী উপজেলা চেয়ারম্যান নুরন্নবী খোকন চৌধুরী জানান, গত কয়েকদিনে অতিবৃষ্টির কারণে দুধকুমর ও ফুলকুমর নদীতে অস্বভাবিক পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী তীরবর্তী এলাকায় প্রায় সাত হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়েছে।
ঝিনাইগাতী উপজেলা শহরে সরকারি অফিস প্লাবিত
আগের রাত থেকে প্রবল বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে শেরপুরের রামেরকুড়া এলাকায় মহারশী নদীর বাঁধ তলিয়ে আকস্মিকভাবে পানি ঢুকে পড়েছে ঝিনাইগাতী উপজেলা শহরে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদ বলেন, “অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে মহারশী নদীর বাঁধের কিছু অংশ তলিয়ে পাহাড়ি ঢলের পানিতে ঝিনাইগাতী উপজেলা শহরসহ কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।”
উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার রাত থেকে থেমে থেমে ঝিনাইগাতীতে মুষলধারে বৃষ্টি হয়। পাশাপাশি প্রবল বেগে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি মহারশি নদীর রামেরকুড়া এলাকার বেড়িবাঁধের বিভিন্ন অংশ দিয়ে ঝিনাইগাতী বাজারে প্রবেশ করে।
এতে উপজেলা পরিষদ ভবন, ডাকঘর, সাব রেজিস্ট্রার, নলকুড়া ভূমি কার্যালয়, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের চারপাশের এলাকা প্লাবিত হয়।
এছাড়াও ঝিনাইগাতী-রাংটিয়া সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। মহারশি নদীর রামেরকুড়া এলাকার অর্ধশত বাড়ি পানিতে প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা।
“কৃষকদের আমন ধান, বিভিন্ন সবজি ফসল ও পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে।”
ঝিনাইগাতী বণিক সমিতির সভাপতি আবু বাহার জানান, ঝিনাইগাতী সদর বাজারের মসজিদ রোডসহ বাজারের একাংশ হাঁটু পানিতে তলিয়ে গেছে।
কিছু দোকান-পাটে পানি প্রবেশ করেছে, পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে বলে জানান তিনি।
তবে পাহাড়ি ঢলের পানি বিভিন্ন এলাকায় প্রবেশ করলেও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির আশা করছেন, আর বৃষ্টি না হলে বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যে পানি নেমে যাবে।
“আশা করছি ফসলের কোনো ক্ষতি হবে না।”