গাইবান্ধায় বন্যায় ২ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট, দিশেহারা কৃষক

তৃতীয় দফা বন্যায় গাইবান্ধার ছয়টি উপজেলায় ২ হাজার হেক্টরের বেশি জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে বলে জেলার কৃষি বিভাগ জানিয়েছে।

গাইবান্ধা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 August 2020, 05:43 AM
Updated : 26 August 2020, 07:05 AM

এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের কৃষিজীবীরা।     

সাদুল্লাপুর হাটে মঙ্গলবার বিকালে কথা হয় গাইবান্ধা সদর উপজেলার লেঙ্গাবাজার গ্রামের কৃষক সুলতান মিয়ার (৫৫) সঙ্গে।

তিনি বলেন, তার চার জনের সংসার; চারবিঘা জমিতে চাষাবাদ করে খাওয়া-দাওয়া ও দুই ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাতে হয়। কিন্তু এ বছর বন্যায় তার সব বেছন (চারা ধান) নষ্ট হয়েছে।

ধারদেনা করে চারা ধান সংগ্রহ করে এখন পর্যন্ত দুই বিঘা জমিতে ধান রোপন করতে পারলেও চারা ধানের অভাবে অবশিষ্ট দুই বিঘায় এখনও রোপন করতে পারেন নি বলে জানান সুলতান।   

গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের মধ্যউড়িয়া গ্রামের কৃষক আমজাদ মিয়া (৪৫) বলন, ‘তিনবিগে জমির আমোন ধান নষ্টে হচে। বানের পর বেছনের (চারা) জন্নে চেরমেনের (চেয়ারম্যান) কাচে গেচিনো, তিনি কয় সোরক্যার না দিলে ক্যামনকরি দেমো। পরে দ্যানাকরি একবিগে জমিত ধান নাগাচি। দুইবিগে পড়ি আচে, বেছনের (চারার) জন্নে নাগব্যার পাচ্চি নে।

“ক্যামন করি চারা কিনমো; দাম বেশি। বেশি দামোত বেছন (চারা) কিনি নাগালেধান বেচি খরোচ উঠপ্যার নোয়ায়। তাই সাদুল্লাপুর হাটোত বেছন কিনবার আসিয়া, দাম বেশি দেখি বাড়ি ফেরত যাচ্ছি।”” 

সুলতান ও আমজাদের মত চারা ধানের অভাবে এবার জেলার অনেক কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। গাইবান্ধার বিভিন্ন হাটে আমনের চারা উঠলেও দাম অনেক বেশি। এ পরিস্থিতিতে উপায় না দেখে অনেক কৃষক চড়াদামে চারা কিনে রোপন করছেন।

মঙ্গলবার বিকালে সাদুল্লাপুর হাটে গিয়ে দেখা গেল, সাদুল্লাপুর বহুমূখি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে হাট বসেছে। আমনের চারা বেচাকেনা হচ্ছে। উচু এলাকার কৃষকরা চারা বিক্রি করছেন আর বন্যাকবলিত এলাকার কৃষকরা কিনছেন। দুর দুরান্ত থেকে আসা পাইকাররাও চারা কিনছেন। প্রতি ৮০টি আটি (স্থানীয় ভাষায় এক পোন) আমনের চারা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের কুন্দেরপাড়া গ্রামের কৃষক আশরাফুল ইসলাম (৫৮) বলেন, “হামার দুইবিগে জমির ভুট্টে, মরিচ নষ্ট হচে। জমি তৈয়ারি করব্যার নাগচি। কিনতো একনো সোরকার থাকি কোনো বিজ পানো না।”

সাদুল্লাপুরের হাটোত বেছন (চারা) কিনব্যার আচ্চি। কিনতো বেছনের (চারা)  দাম বেশি। দুইবিগে জমিত ৬ পোন বেছন (চারা) নাগে। ট্যাকার অভাবে কিনব্যার পাচ্চিনা।”

একই গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম (৪৬) বলেন, “এ্যাকনে ছাগোল বেচি দুইবিগা জমিত ধান, একবিগা জমিত ভুটটে নাগাচিনো। বানোত সোগ শ্যাষ। বেছন (চারা) অভাবে এখনও জমিত আমন ধান নাগব্যার পাই নাই। হাটোত চারার দাম বেশি, তাই কিনব্যার পাই নাই। বেশি দামে বেছন (চারা) কিনে আমন ধান নাগালে যে খরচ হবে, সেই খরোচ উঠপ্যার নোয়ায়’।“ 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান বলেন, এবারের ৩’দফা বন্যায় গাইবান্ধার ছয়টি উপজেলায় ২ হাজার ৫৩৩ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়। এরমধ্যে আমন বীজতলা ৮৫ হেক্টর, শাক-সবজি ২৬০ হেক্টর, রোপা আমন ১৬০ হেক্টর, পাট ১ হাজার ৯০০ হেক্টর, তিল ৪০ হেক্টর, চীনা বাদাম ৪০ হেক্টর। সবমিলিয়ে ২৭ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়।

এবার জেলার ৭ উপজেলায় ১ লাখ ২৬ হাজার হেক্টর জমিতে আমন রোপনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। মঙ্গলবার (২৫ অগাষ্ট) পর্যন্ত চাষ হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ২০০ হেক্টর। আমন রোপনের উপযুক্ত সময় ১৫ জুলাই থেকে ১৫ অগাষ্ট পর্যন্ত।

তিনি বলেন, এবার বন্যা ও আমন ধানের চারার অভাবে ১৫ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে এখনও আমন রোপন সম্ভব হয়নি। তবে বিলম্ব হলেও কৃষকরা আমন রোপন অব্যাহত রেখেছেন। এজন্য জেলায় সরকারিভাবে ৪২ হেক্টর জমিতে আমন ধানের বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। যা দিয়ে ৯৩৩ হেক্টর জমিতে আমন লাগানো যাবে এবং অচিরেই এগুলো বিতরণ করা হবে।