যে বৌভাতে মূল অতিথি সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীরা

করোনাভাইরাসের সংকটের বিধিনিষেধের মধ্যে নীলফামারীতে দরিদ্র সুবিধাবঞ্চিত শিশু শিক্ষার্থীদের নিয়ে এক বৌভাত আয়োজন করা হয়েছে।

নীলফামারী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 August 2020, 01:34 PM
Updated : 23 August 2020, 01:34 PM

রোববার দুপুরে নীলফামারী সদরের কচুকাটা ইউনিয়নের কোরাণীপাড়া আশা শিক্ষা কেন্দ্র চত্বরে এ বৌভাত অনুষ্ঠিত হয়। এ বৌভাত আয়োজন করে পৌরশহরের শাহীপাড়া মহল্লার নবদম্পতি নিরাদ-ফারজানা।

অনুষ্ঠানে আসা প্রত্যেক শিশুকে নতুন জামা-প্যান্ট উপহার দিয়ে বরণ করে নেন নব দম্পতি। এই অতিথিদের নিজহাতে বেড়ে খাওয়ান এই বর-বউ।

খাবারের তালিকায় ছিল ভাত, মাংস, ডাল, ডিম, মিস্টি ও কোমল পানীয়।

জীবনে এমন আনন্দ এটিই প্রথম জানায় অনুষ্ঠানের অতিথি দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী হুমায়ুন কবীরসহ তার বন্ধুরা। তারা বলল, অনেক দিনপর ‘ভালো খাবার খেলাম।’

হুমায়ুন বলে, “নতুন জামা পরে আনন্দও করলাম। সবাই মিলে বিয়ার গীত গাইলাম।”

প্রত্যেক শিশুর সঙ্গে একজন করে অভিভাবককেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এক শিশুর অভিভাবক মুক্তা বেগম এ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে আনন্দিত।

তিনি বলেন,“এলাকায় শিশুদেরকে নিয়ে এমন অনুষ্ঠান আর কখনো দেখিনি। বৌভাত অনুষ্ঠানে খাওয়া শেষে নতুন জামা-প্যান্ট পরে সব শিশু এক সাথে গাইল বিয়ের গীত।

“প্রাণভরে বিয়ের অনুষ্ঠান উপভোগ করল শিশুরা, এমনকি আমরা গ্রামবাসীরাও।”

বর নীলফামারী পৌর শহরের শাহীপাড়ার মহল্লার এটিএম মোস্তফা চৌধুরীর দ্বিতীয় ছেলে নিরাদ আল আশরাফি। আর নববধূ হলেন দিনাজপুর জেলার সুইহারির ব্যবসায়ী লূৎফর রহমানের মেয়ে ফারজানা ইয়াসমিন। গত ১৪ অগাস্ট পেশায় ফিল্ম মেকার নিরাদের সঙ্গে অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ফারজানার বিয়ে হয়। করোনাভাইরাসের পরিস্থিতে স্বল্প পরিসরে পারিবারিক আয়োজনে বিয়ে হওয়ায় তাদের মনের মতো করে আনন্দ করতে পারেননি তারা। সে কারণেই ব্যতিক্রমী এই বৌভাতের আয়োজনের উদ্যোগ বলে জানান নব দম্পতি।

বর নিরাদ বলেন, “করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই গত ১৪ অগাস্ট আমি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। পারিপারিক আয়োজনে বিবাহ হলেও করোনার কারণে বৌভাত আয়োজন হয়নি। বিষয়টি মাথায় নিয়ে আমরা ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বৌভাত আয়োজনের পরিকল্পনা করি। সেখান থেকেই আমার বিয়ের বৌভাত অনুষ্ঠানে অসহায় শিশু শিক্ষার্থীদের খাওয়ানোর চিন্তা আসে।

তিনি জানান, করোনাভাইরাস সংকটের মধ্যে নীলফামারীর বাড়িতে অবস্থান কালে সেইফ ফাউন্ডেশন নামে এক সংগঠনের বিভিন্ন মানবিক কাজে অংশ নিচ্ছিলেন তিনি। সেই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথে সহযোগিতায় এই বৌভাতের আয়োজন তার।

নববর্ধ ফারজানা বলেন,“ জন্মের পর থেকে থেকে শহরে মানুষ হয়েছি। গ্রামের শিশুদেরকে নিয়ে এমন এক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারব তা কখনো ভাবিনি।

“এটি আমার জীবনে মাইলফলক হয়ে থাকবে।”

সেইফ ফাউন্ডেশনের প্রধান সমন্বয়কারী রাসেল আমীন স্বপন বলেন, “করোনাভাইরাসের মধ্যে শিশুরা এক ধরণের মানসিক চাপে রয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এমন অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্য দিয়ে তাদের সে চাপ কিছুটা লাঘব হবে।”

এই বৌভাত ওই এলাকায় ‘উদাহরণ হয়ে থাকবে’ বলে মনে করেন স্থানীয় আশা শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষক আয়শা সিদ্দিকা।

তিনি বলেন,“অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে শিশুরা অনেক আনন্দ করেছে। স্বাস্থ্য বিধি মেনে আমরা অনুষ্ঠানটি শেষ করেছি।”

অনুষ্ঠানে শিশু অতিথি ও অভিভাবক মিলিয়ে ‘দুইশ জন অংশ নেন’ বলে জানায় আয়োজকরা।