সোমবার বিকাল ৪টার দিকে বাঁধের ভেঙে পড়া এ অংশটি গত ১৯ জুলাইও ভেঙে গিয়েছিল। তখন বালুভর্তি ব্যাগ ফেলে পরিস্থিতি সামলানো হয়।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ বলেন, “প্রকৃতির শক্তির কাছে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। গত ১৯ জুলাই থেকে কাজ করেও বাঁধটি টিকিয়ে রাখতে পারিনি।”
পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণের পরামর্শ দিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিজাইন বিভাগকে খবর দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
সদরের আলীয়াবাদ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আখতারুজ্জামান বলেন, আলিয়াবাদ ইউনিয়নের সাদীপুরের বিল গজারিয়া এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের শহর রক্ষা বাঁধের ৪৫ মিটার অংশটি সোমবার বিকাল ৪টার দিকে ভেঙে পড়ে। ওই ভাঙা অংশ দিয়ে তীব্র বেগে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে, পদ্মার পানি অব্যহত বৃদ্ধি ফলে গত কয়েকদিনে ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার চারটি ইউনিয়নের প্রায় সব এলাকা প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি বন্যা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়েছে।
বন্যা কবলিত কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বাড়ি-ঘর পানিতে ডুবে যাওয়ায় বিভিন্ন উঁচু স্থানে গবাদি পশু ও পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে তারা।
উপজেলার বিভিন্ন বেড়িবাঁধ, হেলিপ্যাড ও আশ্রয়কেন্দ্রের উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে চরম দুর্ভোগে থাকা চরাঞ্চল ও বিভিন্ন এলাকার পানিবন্দি মানুষ।
চর ঝাউকান্দা ইউনিয়নের চর কল্যাণপুর লস্কর ডাঙ্গী হতে আসা সুখজান (৫০) ও নাছিমা আক্তার (৪৫) জানান, তাদের বাড়িতে পানি ওঠায় ২৫ জুলাই ১৫টি গরু ও ৮টি ছাগল নিয়ে হেলিপ্যাডে আশ্রয় নিয়েছেন তারা। তবে গো-খাদ্য সংকটসহ নানা সমস্যায় রয়েছেন তারা।
চরভদ্রাসন উপজেলার চারটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা জানান, প্রায় ১৫ হাজর পরিবার পানিবন্দি রয়েছে।
“উপজেলার প্রধান কয়েকটি সড়ক বাদে মাটির ও পাকা সড়কগুলোর বিভিন্ন স্থান ক্ষতি হয়েছে।”
গাজিরটেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইয়াকুব আলী জানান, তার ইউনিয়েনে তিন হাজার পরিবার নিমজ্জিত এবং এক হাজার ৫শ পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। ১৪টি সড়ক, ১৭টি মাটির রাস্তা ও কয়েকটি কালভার্ট ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া এ পর্যন্ত এক হাজার ৩৫০টি পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে।
চরভদ্রাসন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলভীর হোসেন জানান, বন্যায় এ পর্যন্ত ৫৩০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে আউস-২০৮ হেক্টর, বোনা আমন-২১০, সবজি-৩০, বীজতলা-৭ ও রোপা আমন রয়েছে ৭৫ হেক্টর।
চরভদ্রাসনের ইউএনও জেসমিন সুলতানা বলেন, সরকারিভাবে বন্যার্তদের সাহায্যের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ মুজুদ রয়েছে। বন্যার্তদের মাঝে আমাদের শুকনা খাবার, শিশু খাদ্যসহ ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত আছে। বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষকে সব রকমের সহায়তা করা হচ্ছে। এছাড়া বন্যার্তদের মাঝে পানি রাখার ক্যান, বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হচ্ছে।
“গো-খাদ্য সংকট মোকাবেলায় তালিকা তৈরি করে খুব শীঘ্রই সহায়তা প্রদান করা হবে।”
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মাহমুদুল হক বলেন, এ পর্যন্ত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জনপ্রতি ১০ কেজি করে ৫০ মেট্রিক টনসহ মোট সাড়ে ৬৯ মেট্রিক টন ত্রাণের চাল বিতরণের পাশাপাশি শুকনা খাবার এক হাজার ৪১০ প্যাকেট ও গর্ভবতী মায়েদের জন্য একশ প্যাকেট শিশু খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে।