করোনাভাইরাসে মন্দায় বগুড়ার দইয়ের বাজার

করোনাভাইরাসের প্রভাবে বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী দইয়ের বাজারে ব্যাপকভাবে ক্রেতা কমে গেছে।

জিয়া শাহীন বগুড়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 July 2020, 11:33 AM
Updated : 25 July 2020, 11:33 AM

যেসব দোকানে ক্রেতাদের ভিড় লেগে থাকত সেখানে লোকই নেই বলতে গেলে। ক্রেতাদের পানে চেয়ে দিন কাটছে দোকানিদের। এখন এই পেশায় জড়িত কয়েক হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।

বগুড়া জেলার বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন থেকে জানা যায়, দেশের অন্যান্য জেলা কিংবা অঞ্চলে দই উৎপাদিত হলেও কিছু বিশেষত্বের কারণে ‘বগুড়ার দই’-এর খ্যাতি দেশজুড়ে। উৎপাদন ব্যবস্থার প্রতিটি পর্যায়ে কারিগরদের বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণের পাশাপাশি মান নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে যত্নবান হওয়ায় বগুড়ার দই স্বাদে-গুণে তুলনাহীন।

প্রায় দেড়শ বছর আগে জেলার শেরপুর উপজেলার ঘোষ পরিবারের হাত ধরে বগুড়ায় দইয়ের উৎপাদন শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে বগুড়ার নওয়াব আলতাফ আলী চৌধুরীর [পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলীর বাবা] পৃষ্ঠপোষকতায় শেরপুরের ঘোষ পরিবারের অন্যতম সদস্য গৌর গোপাল বগুড়া শহরে দই উৎপাদন শুরু করেন।

প্রতিদিন বগুড়ার দই দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। এখানে আসা কিংবা এ জেলার উপর দিয়ে যা্ওয়া মানুষও সঙ্গে দই নিয়ে যান। তবে প্রতিদিন কী পরিমাণ দই এখানে উপাদিত হয়, কী পরিমাণ দই এখান থেকে জেলার বাইরে যায় কিংবা এই খাত থেকে কী পরিমাণ আয় হয় তার কোনো হিসাব পাওয়া যায়নি।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বাভাবিক সময়ে সকাল থেকেই দইয়ের বিভিন্ন দোকানে ভিড় শুরু হতো। বগুড়া থেকে বাস, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, ট্রেন প্রভৃতি যানবাহনে যারাই যেত তাদের বেশিরভাগ মানুষের হাতে দইয়ের প্যাকেট থাকত।

এছাড়াও দই বিক্রেতারা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার দোকানে প্রতিদিন দই পাঠাতেন। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারী শুরু হওয়ার পর সে দৃশ্য আর নেই।

বগুড়া জেলা শহরের বিভিন্ন দইয়ের দোকানে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে তাদের হতাশার কথা জানা যায়।

‘শেরপুর দই ঘরের’ কর্মচারী আব্দুল মজিদ বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে এখন দই বিক্রি একেবারেই কমে গেছে। ২০ জন কর্মচারী আগে কাজ করত। সেখানে এখন পাঁচ জন কর্মচারী দিয়ে দই বানানো হচ্ছে। বিক্রি নেই বললেই চলে।

‘গৌর গোপাল দধি ও মিষ্টান্ন ভাণ্ডার’, করোনাভাইরাস মহামারীতে এখন ক্রেতার ভিড় নেই 

শহরের সাতমাথার ‘চিনি পাতা দই’ প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম বলেন, “আগে দিনে সাড়ে ছয়শ গ্রাম ওজনের পাঁচশ সড়া দই বিক্রি হলেও এখন একশটি বিক্রি করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই মালিক অনেক কর্মচারীকে ছাঁটাই করেছে।”

‘আদি মহরম দই ঘর’-এর কর্মচারী পটু মিয়া বলেন, সাত দিন করে ছুটি দিয়ে পর্যায়ক্রমে ‘ডিউটি’ করানো হচ্ছে। এতে যে বেতন পাওয়া যায় তা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী আকবিয়া গ্রান্ড হোটেলের দই মিষ্টি বিষয়ের ম্যানেজার আলমগীর হোসেন বলেন, ১২০ জন কর্মচারীর বেতন দেওয়াই এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগে প্রতিদিন দুইশ টাকা দামের প্রতিটি সাড়ে ছয়শ গ্রাম ওজনের পাঁচশ সড়া বিক্রি হতো। এখন সেখানে ৫০টির বেশি বিক্রি সম্ভব হচ্ছে না।

“করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে সামাজিক অনুষ্ঠান, বাইরে দই নিয়ে যাওয়া প্রভৃতি একেবারে কমে গেছে। আগে যেখানে পঁচিশ মণ দুধ লাগত এখন সেখানে লাগে পাঁচ মণ।”

করোনাভাইরাসের মহামারীর আগে তাদের দোকানে দৈনিক প্রায় এক লাখ টাকার দই বিক্রি হতো বলে তিনি জানান।

উত্তরাঞ্চলীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সদস্য সচিব আব্দুল মোমিন জানান, জেলায় বড় ও মাঝারি মিলে মোট ২৪০টি দই কারখানা আছে। এছাড়া প্রায় তিনশ ছোটো ছোটো দই কারখানা গড়ে উঠেছে। ওইসব কারখানায় পাঁচ হাজারের মতো শ্রমিক কাজ করত। করোনাভাইরাস মহামারী শুরুর পর ওইসব শ্রমিকদের প্রায় চার হাজারই বেকার হয়ে পড়েছে।

জেলা থেকে প্রতিদিন কী পরিমাণ দই অন্যান্য জেলায় যায় এবং এ থকে কী পরিমাণ উপার্জন হয় জিজ্ঞেস করা হলে তিনি কোনো তথ্য দিতে পারেননি।

একই প্রশ্ন বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. জিয়াউল হককে করা হলে তিনি বলেন, তিনি নতুন এসেছেন। এ বিষয়ে তার কাছে আপাতত কোনো তথ্য নেই। তবে বিষয়টি তিনি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন।

আগামীতে বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়নের বগুড়া জেলা পাতায় এই তথ্যটি তিনি যুক্ত করবেন বলে জানান।