‘বাস্তবে রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি’

যশোর অঞ্চলে করোনাভাইরাস রোগীর শনাক্ত হওয়া সংখ্যার চাইতে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি বলে ধারণা করছেন অণুজীব বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন।

যশোর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 June 2020, 05:58 PM
Updated : 27 June 2020, 05:59 PM

অণুজীব বিজ্ঞানী ড. আনোয়ার যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমানে উপাচার্য। এ অঞ্চলের মানুষের করোনাভাইরাস শনাক্তে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে পরীক্ষা হয়ে আসছে।

ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, “এখনো পর্যন্ত যত নমুনা পজেটিভ ফল দিচ্ছে, বাস্তবে তার চেয়ে রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি।”

গত এক সপ্তাহে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগারে যশোর জেলার ৬৬১টি নমুনা পরীক্ষা করে ২০১টিতে করোনাভাইরাসের অস্তিত শনাক্ত করা হয়।

তবে পর্যাপ্ত পরীক্ষার অভাবে আসলে কত লোক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তা জানা যাচ্ছে না বলে মনে করছেন প্রফেসর আনোয়ার। এছাড়া নমুনা যেভাবে সংরক্ষণ, পরিবহন ও পরীক্ষা করা হচ্ছে, তার মধ্যেও গলদ রয়েছে বলছেন এ বিজ্ঞানী।

তিনি বলছেন, ফলে ‘ফলস নেগেটিভ’ রেজাল্টের সংখ্যাও কম না।

“আবার, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের ৭০ থেকে ৮০ ভাগের মধ্যে কোনো শারীরিক উপসর্গ দেখা যায় না। উপসর্গ বিহীন এসব মানুষ মূলত নমুনা পরীক্ষা কার্যক্রমের বাইরেই থেকে যাচ্ছেন। কিন্তু তাদের কাছ থেকে অন্যরা সংক্রমিত হচ্ছেন ঠিকই।”

এ অঞ্চলের বর্তমান পরিস্থিতিকে যশোর মেডিকেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. গিয়াস উদ্দিন ‘ফুল কমিউনিটি ট্রান্সমিশন’ হিসাবে দেখছেন।

তার বক্তব্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “যদি কোনো উপজেলা বা জনপদ বাদ থাকত, তাহলে তাকে সীমিত কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বলা যেত। কিন্তু যশোরের আটটি ছাড়াও এ অঞ্চলের সব উপজেলায় করোনা রোগীদের অবস্থান শনাক্ত হয়েছে। ফলে এখনকার পর্যায় হল-ফুল কমিউনিটি ট্রান্সমিশন।”

তবে যশোরের সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীন বলেন, “যখন কোনো ব্যক্তির করোনা আক্রান্ত হওয়ার নির্দিষ্ট সোর্স খুঁজে পাওয়া যায় না, তখন তাকে সামাজিক সংক্রমণ বলা যেতে পারে।”

তবে যশোরাঞ্চলে সামাজিক সংক্রমণ হচ্ছে কি-না তা নির্দিষ্ট করতে না পারলেও তিনি বলেন, “আমি তো জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ না, ফলে আমার পক্ষে বলা কঠিন। তবে ধারণা করতে পারি সামাজিক সংক্রমণ হচ্ছে।”

আবার যশোরের প্রথম শনাক্ত মণিরামপুর উপজেলার স্বাস্থ্যকর্মী কোথা থেকে আক্রান্ত হয়েছিলেন তা উদ্ধার করতে পারেনি স্বাস্থ্য বিভাগ।

সে কথা তুললে সিভিল সার্জন বলেন, “এমন আরো কয়েকটি ঘটনা আছে, যেগুলোর উৎস সম্বন্ধে আমরা জানতে পারিনি।”

এদিকে শনিবার যশোর জেলায় করোনাভাইরাস শনাক্তের সংখ্যা সরকারি হিসাবে পাঁচশ ছাড়িয়েছে।

নতুন ৪৪ জন শনাক্ত হওয়ায় শনিবার সকাল ১১টা পর্যন্ত জেলায় ৫১০ জন করোনাভাইরাস রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। আগের দিন শুক্রবার বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত জেলায় ৪৬৬ জন শনাক্ত রোগী ছিল বলে জানান সিভিল সার্জন।

গত ঈদের আগে কড়াকড়ি শিথিল করায় গ্রামে ফেরা বিপুল সংখ্যক মানুষের মাধ্যমে প্রত্যন্ত এলাকায় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বলে মনে করেন করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও যশোরের ডিসি এবং মোহাম্মদ শফিউল।

“আমরা সুনির্দিষ্ট এলাকা লকডাউন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। আক্রান্ত ব্যক্তিকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলছি।”

অভয়নগর উপজেলায় কড়াকড়ি করায় সুফল পাওয়া গেছে বলেও জানান তিনি।

এ জেলায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন সাতজন এবং নিরাময় লাভ করেছেন ১৫৭ জন।