আম্পানে শার্শার আশ্রয়হীনরা ঘর তুলতে সহায়তা চান

ঘূর্ণিঝড় আম্পানে বসতঘর ভেঙে যশোরের শার্শা উপজেলায় অনেক মানুষ আশ্রয়হীন হয়েছেন। এদের কেউ বাস করছেন রেললাইনের পাশে; আবার কেউবা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে। আর্থিক সহায়তা পেলে ঘর মেরামত করতে পারবেন বলে তারা জানান।

আসাদুজ্জামান আসাদ, বেনাপোল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 June 2020, 05:09 PM
Updated : 3 June 2020, 05:09 PM

সরকারি খাদ্য সহায়তা পেলেও ঘর তোলার অর্থ পাননি বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী অনেক পরিবার।

তবে খুব শিগগিরই তাদের সরকারি সহায়তা দেওয়া হবে বলে শার্শা উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে। 

শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক কুমার মন্ডল বলেন, আম্পানে উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে বাগআচড়া, কায়বা, গোগা ও বেনাপোল ইউনিয়নে ক্ষতির পরিমাণ একটু বেশি।

“মোট ক্ষতিগ্রস্তদের পরিসংখ্যান দিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রাণালয়ে সাহায্যের জন্য প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। খুব শিগগিরই তারা সহযোগিতা পাবে।” 

তিনি জানান, উপজেলায় মোট কাঁচা ও আধাপাকা বাড়ির সংখ্যা ৬২ হাজার ৩৫৭। এর মধ্যে তিন হাজার ৭৪৫টি বাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে এবং ১৫ হাজার ৪২৫টি বাড়ির আংশিক ক্ষতি হয়েছে। 

বেনাপোল পৌরসভার ভবেরবেড় গ্রামের রেললাইনের ধারে বসবাস করেন খায়রুন নাহার, সুফিয়া বেগম, পিক্কা খান, রাবেয়া বেগম, ছালমন বিবির মত গোটা পঞ্চাশের মত মানুষ।

তারা বিভিন্ন বাসাবাড়ি, হোটেল রেস্তোরাঁ ও মজুরি করে সংসার চালান। আম্পান তাদের মাথাগোঁজার ঠাঁই কেড়ে নিয়েছে।

ছালমন বিবি (৫০) বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঝড়ে ঘর ভেঙে গেছে। রেললাইনের উপর থাকছি। খুব কষ্টে আছি। সরকার থাকার ব্যবস্থা করলি বেঁচে যাতাম।”

বাগআঁচড়া ইউনিয়নের সামটা গ্রামের মুশফিকুর রহমান বাচ্চু (৫২) বলেন, “সরকারি খাদ্য পাচ্ছি। খাওয়ার সমস্যা নেই। রোজ ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে, থাকতি হচ্ছে অন্য লোকের বাড়ি। ঝড়ে সব খ্যায় করে দিয়ে গেছে। সাহায্য না পালি ঘর তুলতি পারছি নে।”

খাল বিলে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন শাখারিপোতা গ্রামের প্রহলাদ বিশ্বাস (৪৫)। আম্পানে তিনি আশ্রয়হীন হয়েছেন।

প্রহলাদ বলেন, “ঝড়ে আমার ঘরের পরে একটা শিশু গাছ ভেঙে পড়েল। সেদিন থেকেই আমরা আশ্রয়হীন। পরের বাড়িতে থাকছি। ঘরটা জুত (ঠিক) করব তার টাকা কই!” 

শার্শা উপজেলার ৮ নম্বর বাগআঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইলিয়াছ কবির বকুল বলেন, “আম্পান ঝড়ে এই ইউনিয়নের ২৮০টি বাড়ি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে। আংশিক নষ্ট হয়েছে ৮৭০টি বাড়ি। সরকারিভাবে সাহায্য সহযোগিতার জন্য উপজেলা পরিষদে তালিকা দেওয়া হয়েছে। 

"ঘূর্ণিঝড় আম্পানে কোনো সহযোগিতা দেওয়া হয়নি। তবে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত খাদ্য সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। ইউনিয়নে ঘরচাপা পড়ে নিহত দুজনকে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া অর্থ সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে।"

সরকারি সহায়তায় বিষয়ে ইউএনও পুলক কুমার মন্ডল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পান তাণ্ডবের সময় বসত ঘরের উপর গাছ ভেঙে পড়ে মারা যান মুক্তার আলি (৬৫) ও ময়না বেগম (৩৫)।আর ঘর চাপা পড়ে মারা যান গোপাল বিশ্বাস (৬৫) ও মিজানুর রহমান (৬০)।

“তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বজনদের হাতে প্রধানমন্ত্রীর অনুদানের ২০ হাজার টাকার চেক, নগদ টাকা ও ত্রাণ সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়েছে। এরা প্রত্যেকেই যাতে ঘর পান তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে।”