নিন্ম আয়ের অসহায় মানুষের মুখে কষ্টের ছায়া। একদিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণে কর্মহীন অবস্থা; অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব ও জলোচ্ছ্বাস। তাই এবার বিষণ্নতায় ঈদ কাটবে অনেকের।
শনিবার সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে এই চিত্র পাওয়া গেছে।
তবে ঈদ উপলক্ষ্যে করোনাভাইরাস ও আম্পানে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করা হবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
মাঝিডাঙা ও পোলঘাট গ্রামের জাহানারা, মর্জিনা বেগম, আনজিরা বেগম ও মুজিবর শেখের সঙ্গে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদকের কথা হয়।
আম্পানের সময় মাঝিডাঙা ও পোলঘাট গ্রাম জলোচ্ছ্বাসে পানিতে তলিয়ে যায়। ভেসে যায় শতশত মাছের ঘেরসহ নানা সহায়-সম্বল।
আনজিরা বেগম বলেন, “ঝড় আমাদের সব ভাসায়ে নিয়ে গেছে। আমরা খুব কষ্টের মধ্যে আছি। আয়রোজগার না থাকায় হাতে কোনো টাকা নেই। এবার ঈদ ঠিকই হবে, তবে তাতে আমাদের কোনো আনন্দ থাকবে না।”
সদরের গোটাপাড়া ইউনিয়নের কান্দাপাড়া গ্রামের ভ্যান চালক মামুন শেখ বলেন, “গত মার্চ মাস থেকে রিকশা চালানো বন্ধ রেখেছিলাম। বাড়িতে বসে সরকারি কিছু খাদ্য সহায়তা পাইছি। কিন্তু আয়রোজগার বন্ধ থাকায় হাতে কোনো টাকা নেই। ছোট দুটি ছেলেমেয়ে আছে, তাদের এই ঈদে নতুন পোশাক কিনে দিতে পারিনি। তাদের মূখে দিকে তাকিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পথে নেমেছি। আয় ভালো হলে চাঁদরাতে ওদের নতুন পোশাক কিনে দেব।”
করোনাভাইরাসে কর্মহীন হয়ে পড়া অনেক নিন্ম ও মধ্যবিত্ত পরিবার সরকারের কাছ থেকে কোনো সহায়তা পায়নি বলে অনেকের অভিযোগ।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মামুনুর রশিদ এই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পর বাগেরহাট জেলার এক লাখ ৮২ হাজার ৭৪০ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা, সমপরিমাণ পরিবারকে নগদ ৯২ লাখ ৭০ হাজার টাকা, আট হাজার ৩৮০ শিশুর জন্য খাদ্য কেনার নগদ ১৮ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
“এছাড়া করোনাভাইরাসের কারণে জেলার অসহায় ৭৫ হাজার পরিবারকে প্রধানমন্ত্রী আড়াই হাজার টাকা করে দিয়েছেন; যা অনেকেই ইতিমধ্যে পেয়ে গেছেন।”
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি হয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ২০০ মেট্রিক টন চাল এবং বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি মেরামতের জন্য ৫০০ বান্ডিল ঢেউটিন বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। ইতিমধ্যে এলাকার ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে বিতরণ করা হচ্ছে।
করোনাভাইরাস ও ঝড়ে মানুষের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “স্বাস্থ্যবিধির কারণে সবাইকে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আশাকরি, নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য এবছর আত্মীয়-স্বজন শুভানুধ্যায়ীদের বাড়িতে যাওয়া-আসা থেকে বিরত থাকবেন।”
জেলা প্রশাসক জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে জেলার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মৎস্যখাতে। মাছের ঘের ভেসেছে বেশি মোংলা, রামপাল, মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলায়। জেলায় চার হাজারের অধিক মাছের ঘের ভেসে গেছে। সরকারের যে বিদ্যমান ত্রাণ সহায়তা রয়েছে তা ঈদের আগেই আরও জোরদার করা হয়েছে এবং তা ঈদের আগেই মানুষের ঘরে পৌঁছে দেওয়া হবে।
এই এলাকার মানুষ স্বস্তিতে ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে পারবে বলে আশা জেলা প্রশাসকের।