ত্রাণ: কুড়িগ্রামে বিক্ষোভে ইউএনও’র গাড়িতে হামলা

কুড়িগ্রাম সদরে ত্রাণের দাবিতে কুড়িগ্রাম-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে স্থানীয়রা। এ সময় ইউএনওর গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 May 2020, 11:16 AM
Updated : 9 May 2020, 11:24 AM

উপজেলার কাঁঠালবাড়ি চৌরাস্তায় শনিবার সকাল ৯টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত এ বিক্ষোভে তিন থেকে চার শতাধিক নারী-পুরুষ অংশ নেয়।এ সময় রাস্তার দুই পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা দুপুর ১২টার দিকে কুড়িগ্রাম সদরের ভারপ্রাপ্ত ইউএনও ময়নুল ইসলাম ও কাঁঠালবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান রেদওয়ানুল হক দুলাল ঘটনাস্থলে গেলে বিক্ষোভকারীরা তাদের উপর চড়াও হয়। পরে পুলিশ তাদের সড়িয়ে নিলে বিক্ষোভকারীরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে শুরু করে। এতে ইউএনও’র গাড়ির পেছনের অংশ ভেঙ্গে যায়।

বিক্ষোভকারী মমিন বলেন, কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ৪/৫ দফা তাদের আইডি কার্ডের ফটোকপি নেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত তারা কোন ত্রাণ সহায়তা পায়নি। এ কারণেই তারা ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রশাসনের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভকারী বেলাল ও আনোয়ার জানান, কোন সমস্যা নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে গেলে চেয়ারম্যান রেদওয়ানুল হক দুলাল তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, “একটি চক্র সরকারকে বিব্রত করতে এ বিক্ষোভ নাটক সাজিয়েছে। এর নেপথ্যে সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য মর্জিনা বেগম ও কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমান উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু জড়িত রয়েছে। ইউএনও ও আমার উপর হামলার নেতৃত্বদানকারী বাঁধন, আতাউর, দুলালসহ অন্যরা উপজেলা চেয়ারম্যানের ক্যাডার।”

তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ১ হাজার ৩৬১ দুস্থ পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। এছাড়া যারা ত্রাণের জন্য লাইনে দাঁড়ান না এমন পরিবারকে ৪০০ প্যাকেট খাদ্য বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের বিশেষ অর্থ সহায়তার আওতায় কার্ড বিতরণ করা হয়েছে ১ হাজার ৩৪২ জনকে।

“এর বাইরেও কেউ বাদ পরলে তাদেরকে বরাদ্দ প্রাপ্তি সাপেক্ষে সহযোগিতা করা হবে।”

হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ময়নুল বলেন, অবরোধের বিষয়টি জানার পর ইউপি চেয়ারম্যানসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলি। এ সময় ইউপি চেয়ারম্যান তাদের মধ্যে ৭/৮ জনকে শনাক্ত করেন যারা ইতোমধ্যে ত্রাণ পেয়েছেন। এর এক পর্যায়ে একদল লোক আমাদের উপর চড়াও হয়।

পরে পুলিশ পাহাড়ায় আমরা গাড়িতে উঠলে তারা গাড়ির সামনে গাছের গুঁড়ি ফেলে দেয়। তারা এসময় পেছন থেকে গাড়ির উপর ইট-পাটকেল ছুঁড়লে গাড়ির গ্লাস ভেঙে যায়। ”

সরকারি কাজে বাঁধা ও সরকারি সম্পত্তি বিনষ্ট করায় একটি মামলা দায়েরের প্রস্ততি চলছে বলে জানান ইউএনও।

অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমান উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু বলেন, “রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতেই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে ইউপি চেয়ারম্যান দুলালের প্রতি এলাকার মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস নেই। সে তার পরিষদে এমনকি উপজেলা পরিষদের সঙ্গে কোন সমন্বয় করে না। ফলে ত্রাণ বঞ্চিত মানুষ খাদ্যের দাবিতে রাস্তায় নেমেছে।”

কুড়িগ্রাম সদর থানার ওসি বলেন, সরকারি কাজে বাঁধা ও সম্পত্তি বিনষ্টের ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি। ইউএনও যেভাবে সহযোগিতা চাইবেন পুলিশ সেভাবে তাকে সহযোগিতা করবে।

বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।