ত্রাণ দিয়ে হিন্দুদের মুসলমান হতে বলা সেই যুবক ক্ষমা চাইলেন

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে প্রায় অবরুদ্ধ দেশে খেটে খাওয়া অসহায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ত্রাণ দিয়ে মুসলমান হওয়ার আহ্বান জানানো সেই যুবক শেষমেশ ক্ষমা চেয়েছেন।

মৌলভীবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 April 2020, 06:16 PM
Updated : 28 April 2020, 06:59 PM

মঙ্গলবার মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের ইউএনও, সদর ইউপি চেয়ারম্যান ও পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে বসা ওই বৈঠকে ‘ভুল হয়েছে’ বলে এমন কাজ আর না করার প্রতিজ্ঞাও করেন সেই যুবক।

তার এ ঘটনা নিয়ে সোমবার রাত ১০টার দিকে শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষেদের কনফারেন্স হলে বেঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, পুলিশ প্রশাসন ও সনাতন ধর্মালম্বী নেতারা উপস্থিতি ছিলেন।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, “শ্রীমঙ্গল সম্প্রীতির উপজেলা। এখানে সব ধর্মের মানুষ একে অন্যের সাথে সম্প্রীতি বজায় রেখে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন। এখানে যদি কেউ সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করে তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

“ওই সভায় সুমন তার ভুল স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং তার অনুতপ্তের বিষয়টি বিবেচেনায় নিয়ে ভবিষ্যতে এ রকম কোনো ঘটনার না ঘটনানোর শর্তে তাকে ক্ষমা করা হয়।”

শ্রীমঙ্গল উপজেলা চেয়ারম্যান রনধীর কুমার দেব জানান, বিষয়টি শোনার পর শ্রীমঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে উপজেলা কনফারেন্স হলে বসে তারা বিষয়টি শেষ করেছেন। ওই যুবক তার পরিবারসহ বৈঠকে এসে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

পূজা পরিষদের নেতারা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাকে ক্ষমা করার জন্য সভায় জানালে ‘ভবিষ্যতে এমন ঘটনা না ঘটানোর জন্য সতর্ক করে তাকে ক্ষমা করা হয়।

শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সার্কেল এর সিনিয়র এএসপি আশরাফুজ্জামান বলেন, “দেশের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে তিনি যে কাজ করছেন, এটি অব্যশই একটি জঘন্য এবং আইন বিরোধী কাজ।

“শ্রীমঙ্গল একটি সম্প্রীতির এলাকা এখানে ধর্মীয় উস্কানি প্রশাসন কঠোর হাতে দমন করবে।”

ঘটনার বিবরণ দিয়ে শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ভানুলাল রায় জানান, গত ২৩ এপ্রিল ‘বাংলা এইড’ নামের এক সংগঠনের পক্ষে তার ইউনিয়নের নোয়াগাও এলাকায় সুমন মিয়া দুস্থ শব্দকর সম্প্রদায়ের লোকজনকে ত্রাণ দেন। এ সময় তিনি তা ফেইসবুকে লাইভ সম্পচারও করেন। সেখানে তিনি সুবিধাবঞ্চিত ওই হিন্দু পরিবারগুলোকে মুসলাম হওয়ার আহ্বানও জানান।

এ ফেইসবুক লাইভ ছড়িয়ে পড়লে সোশাল মিডিয়ায় ব্যাপক নিন্দা ও প্রতিবাদ হয়। অনেকে আইনের আওতায় এনে তার শাস্তির দাবিও করেন।

এরপর তার পরিবারের সদস্যরা মীমাংসার জন্য শ্রীমঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদে আসেন বলে জানান এ পরিষদের চেয়ারম্যান ভানু লাল রায়।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও সনাতন ধর্মালম্বীনেতাদের সমন্বয়ে গত সোমবার রাতে শ্রীমঙ্গল উপজেলা কনফারেন্স হলে এ নিয়ে বৈঠক হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলামের সভাপত্বিতে ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন পরিষদের চেয়ারম্যান রনধীর কুমার দেব, শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ থানার এএসপি সার্কেল আশরাফুজ্জামান, শ্রীমঙ্গল থানার ওসি আব্দুল ছালেক, ৩নং শ্রীমঙ্গল সদর ইউপি চেয়ারম্যান ভানুলাল রায়, পূজা পরিষদ শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখার সভাপতি স্বপন রায়, সহ-সভাপতি স্বাস্থ্য বিভাগের সাবেক
সিলেট বিভাগীয় প্রধান ডা. হরিপদ রায়,
সাধারণ সম্পাদক সুশীল শীল, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক দ্বিজেন্দ্র লাল রায়সহ আরো অনেকে।

এদিকে ওই বৈঠকে বসার আগেই ওই যুবক তার ফেইসবুক আইডি থেকে তার ভুল স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশও করেন।