আশুলিয়ায় কারখানায় ৭শ শ্রমিককে ছাঁটাইয়ের বিজ্ঞপ্তি

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিতে অবরুদ্ধ অবস্থায় ঢাকার আশুলিয়ায় একটি তৈরি পোশাক কারখানায় ৭০৩ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

সেলিম আহমেদ সাভার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 April 2020, 01:07 PM
Updated : 26 April 2020, 01:24 PM

শনিবার সকালে ধনাইদ এলাকায় ‘সিগমা ফ্যাশনস লিমিটেড’ কারখানার মূল ফটকের দেওয়ালে এই ছাঁটাই বিজ্ঞপ্তি দেখতে পান শ্রমিকরা।

বিজ্ঞপ্তি ১৮ এপ্রিল লেখা রয়েছে বলে শ্রমিকরা জানান।

আচমকা এই বিজ্ঞপ্তি দেখে অসহায় বোধ করা শ্রমিকরা তাৎক্ষণিকভাবে কারখানার সামনে বিক্ষোভ করেছেন।

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারীতে সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে দেশে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এই অবস্থায় শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বকেয়া থাকায় সম্প্রতি ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জসহ কয়েকটি এলাকায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন। তাৎক্ষণিক তাদের পাওনা পরিশোধের আশ্বাস দিয়ে ঘরে ফেরানো হয়। 

শিল্প পুলিশ-১-এর সহকারী পুলিশ সুপার জানে আলম খান বলেন, ৭০৩ জন শ্রমিক ছাঁটাই করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। মহামারী করোনা পরিস্থিতির মধ্যে সকল কারখানার মালিক পক্ষকে বলা হয়েছে তারা যেন কোনো শ্রমিক ছাঁটাই না করে। তারপরও তারা শ্রমিক ছাঁটাই করেছে। বিষয়টি মালিক পক্ষের সাথে আলোচনা করে সমন্বয় করা হবে।

স্বাধীন বাংলা গামের্ন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি আল কামরান বলেন, রাতের কোনো এক সময় কর্তৃপক্ষ শ্রমিক ছাঁটাইয়ের নোটিশ লাগিয়েছে। হঠাৎ শ্রমিক ছাঁটাইয়ের কারণে এই করোনার দূযোর্গের মধ্যে আরেকটি দুর্যোগ শ্রমিকদের মাথায়। ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদের মধ্যে অনেকেই দেশের বাড়িতে আছে। যারা এখানে রয়েছে তারা কারখানার সামনে এসে বিক্ষোভ করেছে।

“মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে আশুলিয়া শিল্প পুলিশের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে কলকারখানা পরিদর্শককেও। ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদের পুনর্বহাল না করা পর্যন্ত আগামীকাল (রোববার) থেকে কারখানার সামনে কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলন করা হবে।”

কারখানাটির মহাব্যবস্থাপক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি বলা হয়, বিশ্বজুরে মহামারী করোনাভাইরাস সংক্রমিত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানের সকল রপ্তানিজাত পণ্যের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে এবং আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের সকল ক্রয়াদেশও বাতিল হয়েছে।

“এই পরিপ্রেক্ষিতে গত পহেলা এপ্রিল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত কারখানা লে-অফ ঘোষণা করা হয়। এ অবস্থায় আগামী দিনগুলোতে কারখানা পূর্ণ মাত্রায় পরিচালনা করার সম্ভাবনা না থাকায় ১৮ এপ্রিল ২০২০ অপরাহ্ন থেকে ছাঁটাই করা হলো।”

সরকারি ডাক বিভাগ খোলা সাপেক্ষে ছাঁটাইকৃত কর্মচারীর স্থায়ী ঠিকানায় ছাঁটাই সম্পর্কিত পত্র পাঠানো হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

করোনা পরিস্থিাত স্বাভাবিক হওয়া সাপেক্ষে ছাঁটাইকৃত শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের আইনানুগ পাওনাদি ট্রাস্ট ব্যাংক এর মাধ্যমে প্রত্যেকের ব্যক্তিগত হিসাব নম্বরে ৭ মের মধ্যে দেওয়ার কথঅও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।

এই বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদের একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে।

কারখানার সামনে উপস্থিত ছাঁটাই হওয়া শ্রমিক শোভা, মনোয়ারা, সামছুন্নাহার, ফাতেমা, আশরাফুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম, কাজলী বেগমসহ একাধিক শ্রমিক বলেন, হঠাৎ শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই মালিকপক্ষের এই বিজ্ঞপ্তিতে তারা হতবাক ও বিস্মিত হয়েছেন। কারখানাটিতে শ্রমিকদের দুই মাসের বেতন-ভাতা বকেয়া রয়েছে বলে তারা জানান।

চাকরি হারিয়ে কীভাবে তাদের সংসার চলবে এই চিন্তায় অনেক শ্রমিক কান্নায় ভেঙে পড়েন গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে।

এ বিষয়ে সিগমা ফ্যাশনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যেটা আমি পারব সেইটুকু পর্যন্ত লোড নেওয়া উচিত। আমি চালাতে পারছি না-তাই বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। কাউকে বঞ্চিত করার কোনো ব্যাপার নাই। নোটিশেও সবকিছু বলা আছে।”

দুই মাসের বেতন বকেয়ার অভিযোগটি সত্য নয়; মার্চের সবার বেতন দিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সাধারণত মাসের ৭ তারিখের মধ্যে আমরা শ্রমিকদের বেতন দিয়ে দেই। বর্তমানে যেহেতু একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি, তাই মার্চের বেতন দিতে একটু দেরি হয়েছে। কিন্তু ১৬ এপ্রিলের মধ্যে সবাই বেতন পেয়ে গেছে। ৭ মের মধ্যে সবার বাকি পাওনাও ব্যাংক হিসাবে চলে যাবে, যা বিজ্ঞপ্তিতেও বলা আছে।”

তিনি বলেন, “আমাদের ট্র্যাক রেকর্ড ভালো। কোনো সময়েই দেরি করি নাই। আমরা আসলেই আমাদের কর্মীদের যত সুবিধা সম্ভব দিয়ে এসেছি।”