কিশোরগঞ্জের হাওরের ধান: শ্রমিক সমস্যায় দুশ্চিন্তায় কৃষক

কিশোরগঞ্জের চারটি প্রধান হাওর উপজেলা ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও নিকলীতে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও কেটে তুলতে পারবেন কিনা জানা নেই কৃষকের।

মারুফ আহমেদ কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 April 2020, 04:28 PM
Updated : 22 April 2020, 04:28 PM

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে সরকারের সাধারণ ছুটির মধ্যে শ্রমিকদেরও যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। এতে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় কিংবা একই জেলায় এক উপজেলা থেকে আরেক উপজেলায় মানুষের যাতায়াত বন্ধ রয়েছে।

এ কারণে বোরো মৌসুমে বরাবরের মতো ধানকাটা শ্রমিকরা যেতে পারছে না কাজের সন্ধানে। কৃষকরা পাচ্ছে না শ্রমিক।

এদিকে, চলে এসেছে বন্যার সময়। এই অবস্থায় বন্যা দেখা দিলে হাওর থেকে আর ধান ঘরে নিতে হবে না; হাওরেই থেকে যাবে।

কৃষি বিভাগ জানিযেছে, ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও নিকলীতে চলতি মৌসুমে ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে এবার বোরো আবাদ হয়েছে। এ থেকে এক কোটি ৪০ লাখ মন বোরো ধান উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।

ভালো ফলন হলেও কৃষকদের খুশি ম্লান হয়ে যাচ্ছে ধান কাটা নিয়ে দুশ্চিন্তায়। ধান এখনও পেকে ওঠেনি; সেই মুহূর্তে পানি উন্নয়ন বোর্ড আগামী ২২ এপ্রিল থেকে ভারি বৃষ্টিপাতসহ উজান থেকে পাহড়ি ঢল নেমে আসার আশঙ্কা করছে। তাই তাড়াতাড়ি ধান কাটার তাগাদা দিচ্ছে। পাহড়ি ঢলের পানিতে বছরের একমাত্র ফসল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় চোখে অন্ধকার দেখছে হাওরের কৃষক।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কিশোরগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী বলেন, সম্প্রতি ভারত ও বাংলাদেশের আবহাওয়া বিভাগ যৌথভাবে পূর্ভাভাস দিয়েছে যে ২২ এপ্রিল থেকে ভারি বৃষ্টিপাত শুরু হতে পারে এবং এর পরপরই উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নামার আশ্কা রয়েছে।

“সেক্ষেত্রে দ্রুত ধান কেটে ফেলতে হবে; যথাসম্ভব মে মাসের ৭ তারিখের মধ্যেই ধান কাটা সম্পন্ন করতে হবে।”

  কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কিশোরগঞ্জের উপ-পরিচালক ছাইফুল আলম বলেন, “আবহাওয়ার বিষয়টি আমাদেরকেও অবহিত করা হয়েছে। আবহাওয়া বিভাগের দেওয়া ভারি বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের পূর্বাভাস মাথায় রেখে আমরা কৃষকদেরকে দ্রুত ধান কাটতে অনুরোধ করছি। ধানের ৮০ ভাগ শীষ পাকামাত্রই ধান যেন কেটে ফেলেন সেজন্য কৃষকদেরকে আমরা পরামর্শ দিচ্ছি।”

পানি উন্নয়ন বোর্ড ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের তাড়াতাড়ি ধান কাটার পরামর্শ দিলেও কৃষকদের পক্ষে তা সহজসাধ্য নয়। ইতিমধ্যে শুধু উচ্চ ফলনশীল জাতের হাইব্রিড জাতের ব্রি-২৮ ধান পাকতে শুরু করায় কৃষকরা সীমিতভাবে ধান কাটা শুরু করছে। পুরোদমে ধান কাটতে পারছে না শ্রমিক সংকটের কারণে।

কৃষকরা জানান, তাদের উৎপাদিত ধান কাটার জন্য ৮০ ভাগ নির্ভরশীল থাকেন জেলার বাইরে থেকে আসা কৃষি শ্রমিকদের উপর। কিন্তু চলমান করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় ও রোগ সংক্রমণের ভয়ে শ্রমিকরা ধান কাটতে হাওর এলাকায় আসতে পারছেন না। তার উপর ব্রি-২৯সহ অন্যান্য জাতের ধান পাকতে ও কাটা শুরু হতে আরও দুই সপ্তাহ লেগে যাবে এবং ধান কাটা সম্পূর্ণ করতে আরও দেড় মাস বা মে মাস পেরিয়ে যাবে।

মিঠামইন উপজেলার গোপদীঘি গ্রামের গৃহস্থ রুহুল আমীন ভুঁইয়া বলেন, একদিকে শ্রমিকের দেখা মিলছে না। মে মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ব্রি-২৮ জাতের ধানই কাটা শেষে হবে না। পুরো ধান কাটা মে মাসের মধ্যে সম্ভবপর হবে না। 

কৃষকদের মতে ভারি বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢল নামার পূর্বাভাস যদি সত্যি হয়ে যায় তবে বোরো ধান কাটার আগেই ফসল ঢলের পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর ফলে তারা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়বেন।

ইটনা উপজেলার শিমুলবাক গ্রামের কৃষক মিনহাজ উদ্দিন বলেন, “আমরা এখন ত্রিমুখী সংকটে। একদিকে শ্রমিক নেই, তার উপর না পাকার কারণে ধান কাটা যেমন সম্ভব না, এবং তাতে ফসল তলিয়ে যাওয়ার আশংকা। এ অবস্থায় বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল যেন না হয় সেজন্য সৃষ্টিকর্তার উপর নির্ভর করা ছাড়া আমাদের আর কোনো পথ নেই।”    

অবশ্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কিশোরগঞ্জের উপ-পরিচালক, ছাইফুল আলম বলেন, সব মহলের সমবেত প্রচেষ্টায় সমস্যা থেকে উত্তরণের চেষ্টার করতে হবে। দ্রুত ধান কাটা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসনের সহায়তায় অন্যান্য জেলা থেকে কৃষি শ্রমিকদের আনার চেষ্টা চলছে। অনেক শ্রমিক ইতিমধ্যে এসেও পড়েছে।