করোনাভাইরাসে হোঁচট খায়নি রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র

নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় দেশ প্রায় অচল হলেও থেমে নেই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ।

সৈকত আফরোজ আসাদ পাবনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 April 2020, 08:25 PM
Updated : 5 April 2020, 08:25 PM

২০২৩ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে লাগাতার কাজ করছেন আটটি দেশের প্রায় তিন হাজার নিরলস কর্মী; যাদের মধ্যে বাংলাদেশিও রয়েছেন।

দেশের অগ্রাধিকারভুক্ত এ প্রকল্পর পরিচালক ড. শৌকত আকবর বলেন, “দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতেও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ কাজ আগের মতোই চলমান রয়েছে।

“করোনাভাইরাস যাতে এ প্রকল্পের কাজে কোনো বাধা হতে না পারে সেজন্য সরকারি নির্দেশনা মেনে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”

তিনি জানান, প্রকল্প সাইটের সব প্রবেশ পয়েন্টসহ অফিস বিল্ডিং এবং ক্যান্টিনে প্রবেশের সময় কর্মীদের তাপমাত্রায় স্ক্যান করা হচ্ছে।

সাইটের সব জায়গায় প্রতিদিনই পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলছে। দেশি-বিদেশি সব কর্মীকে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজেশন সরবরাহ করে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সব স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ করা হচ্ছে।

প্রকল্পের সাইট ইনচার্জ রুহুল কুদ্দুস বলেন, “প্রকল্পের প্রবেশ পথে একটি মেডিকেল ক্যাম্প বসানো হয়েছে। সেখানে প্রকল্পের নিজ্স্ব চিকিৎসক এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের লোকজন প্রকল্পের সবার নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন।

“বিদেশিদের হোম কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।”

রাশিয়ার আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় দেশে প্রথম নির্মিত এ প্রকল্প ২০২৩ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা রয়েছে। ফলে সতর্কতা অবলম্বন করেই প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলেন তিনি।

এদিকে, রুশ রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি কর্পোরেশন-রসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচোভ এক বিবৃতিতে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসজনিত পরিস্থিতিতে কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সাধারণ জনগণের জীবন ও স্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দিয়ে জরুরি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার কথা জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে পদক্ষেপের কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, বেশি সংখ্যক কর্মীকে দূর থেকে কাজ করার সুযোগ দেওয়া, প্রচুর পরিমাণে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী ও হাইজিন পণ্য সংগ্রহ, কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বাতিল করা।

এছাড়াও সব স্থাপনা ও যানবাহন অব্যাহতভাবে জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

লিখাচোভ বলেন, “করোনাভাইরাস সঙ্কটকালেও বিদেশে নির্মাণাধীন প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশের রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের নির্দেশনা বিশেষভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে।”

এ বিবৃতিতে আরো বলা হয়, “রূপপুর প্রকল্পে সম্প্রতি যারা বিদেশ থেকে এসেছেন তাদেরকে প্রকল্প সাইটে প্রবেশের ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।”

এ ধরনের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন কঠোরভাবে পালনের কথাও বলা হয়।

প্রায় পৌনে দুইশ বিদেশি নাগরিককে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়, যাদের মধ্যে শুধু বেলারুশের এক নাগরিকের গলাব্যাথা ও জ্বরের উপসর্গ দেখা গিয়েছিল।

গলায় অস্ত্রোপচার হওয়া ওই ব্যক্তির প্রসঙ্গে প্রকল্পের চিকিৎসক ডা. সের্গেই মারজভস জানান, গত ২৬ মার্চ স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের তত্ত্বাবধানে ঢাকায় পাঠিয়ে তার করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হয়।

ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আসমা খাতুন জানান, পরীক্ষায় বেলারুসের ওই ব্যক্তির দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি।

রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে রাশিয়া, চীন. ইরান, ভারত ও বেলারুসসহ আট দেশের প্রায় তিন হাজার বিদেশি নাগরিক কাজ করছেন। সেখানে অনেক বাংলাদেশি শ্রমিকও কাজ করেন।