টাঙ্গাইলে গৃহবধূকে যৌতুকের দাবিতে খুনের অভিযোগ

টাঙ্গাইলে যৌতুকের দাবিতে এক গৃহবধূকে নির্যাতনের পর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যার ঘটনা বলে চালানোর চেষ্টার অভিযোগ নিহতের পরিবারের।

টাঙ্গাইল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 April 2020, 07:32 PM
Updated : 3 April 2020, 07:32 PM

শুক্রবার টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিহতের ময়না তদন্ত শেষে সন্ধ্যায় তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। তিনি সাতদিন ধরে চিকিৎসাধীন থেকে মারা যান।

নিহত সুমা আক্তার (২৩) এ উপজেলার জাঙ্গালিয়া দক্ষিণপাড়া গ্রামের আহত মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের মেয়ে।

নিহতের বাবা যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম অভিযোগ করে সাংবাদিকদের জানান, পাঁচ বছর আগে একই এলাকার শহীদুল ইসলাম লুলুর ছেলে সাব্বির হোসেনের সাথে তার মেয়েরে বিয়ে হয়।

“বিয়ের পর থেকে আমার কাছে যৌতুকের টাকা দাবি করে আসছে। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন সময় নগদ অর্থ ও স্বর্ণলঙ্কার দেওয়া হয়। সর্বশেষ বিদেশ যাওয়ার সময় সাব্বিরকে নগদ চার লাখ টাকা দেওয়া হয়।

“তার কিছুদিন পর থেকে সুমার শ্বশুর ও স্বামী আরো টাকা দাবি করে। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে অনেক ঝামেলা সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে আমার মেয়ে আমাদের কাছে চলে আসে।”

ঘটনার কয়েকদিন আগে ছেলের পরিবারের লোকজন এসে সব সমস্যার সমাধান করার কথা বলে তার মেয়েকে নিয়ে যায় বলে জানান তিনি।

“তারপর তাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। গত ২৬ মার্চ রাতে আমার মেয়েকে অত্যাচার করে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঘরের সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে হত্যার চেষ্টা করে।”

তিনি জানান, খবর পেয়ে প্রথমে তারা সুমাকে উদ্ধার করে দেলদুয়ার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যান। সেখান থেকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে তার অবস্থা অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান সুমাকে।

“পরে সাভার সুপার ক্লিনিকে ভর্তি করি। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাতদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে আমার মেয়ে মারা যায়।”

সুমার ফুপাতো ভাই সাজিদ সাংবাদিকদের বলেন, “ঘটনার দিন রাতে আমি ও আমার সাথে থাকা আরো কয়েকজন সুমা আপার শ্বশুর বাড়ির পাশ দিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম। তখন ওই বাড়ির লোকজনদের চিৎকার শুনে আমরা এগিয়ে যাই। বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে দেখি সুমা আপার চাচা শ্বশুর সাঈদ, সুইট ও শ্বশুর শহীদুল দাঁড়িয়ে রয়েছেন।

“আর সুমা আপার গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় ঝুলছে।”

পরে তারা সুমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন বলে জানান।

এ বিষয়ে সুমার শ্বশুর শহীদুল ইসলাম লুলুর সাথে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তার মেয়ে জানান, ‘বাবা বাসার বাইরে। যা কিছু বলা আমার সাথে কথা বলেন।’

দেলদুয়ার থানার উপ-পরিদর্শক মনোয়ার হোসেন সাংবদিকদের বলেন, গত ২৬ তারিখ রাতে সুমা আক্তার নামে এক গৃহবধূ তার শ্বশুরবাড়িতে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। পরে তাকে উদ্ধার করে টাঙ্গাইল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।

এ বিষয়ে একটি অপমৃত্যর মামলা নেওয়া হয়েছে এবং লাশের ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

ময়না তদন্তের প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।