সবজিতে ‘লোকসানের মুখে’ যশোরের চাষিরা

যশোরের সবজিভাণ্ডার নামে পরিচিত সাতমাইল এলাকার চাষিরা জানিয়েছেন, সবজির দাম না পেয়ে তারা লোকসানের মুখে পড়েছেন।

শিকদার খালিদ যশোর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 April 2020, 05:43 AM
Updated : 3 April 2020, 05:43 AM

বিশ্বব্যাপী মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসের আতঙ্কের মুখে দেশের অন্য প্রায় সবকিছুর মত যানচলাচলও প্রায় বন্ধ রয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে কৃষিপণ্য দূরের বাজারে নেওয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। ব্যাপারিরা বলছেন, সবজি বহনে তাদের খরচ বেড়েছে প্রায় দেড় গুণ। আবার পাইকারি বাজারে নিয়ে তারা দাম পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ।

বৃহস্পতিবার সাতমাইল বাজারে পটল নিয়ে আসা আলী হোসেন বলেন, অন্য বছর এ সময় এক কেজি পটল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হত। এর কম হলে চাষের খরচ ওঠে না।

কিন্তু করোনাভাইরাসের ধাক্কায় সেই পটল ২৫ থেকে ২৮ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে বলে জানান যশোর সদর উপজেলার নাটুয়াপাড়া গ্রামের এই কৃষক।

বড় হৈবতপুর গ্রামের শুকুর আলী বলেন, “বাঁধাকপি বেচতে হল প্রতিটা ছয় টাকায়। এতে সার-কীটনাশক ও তেলের খরচই উঠবে না।”

এর কারণ হিসেবে ব্যাপারিরা বলছেন, যান-চলাচল প্রায় বন্ধ থাকায় তাদের পরিবহন খরচ বেড়েছে। আবার বড় বড় শহরের পাইকারি বাজারে তারা দাম পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার সবজি ব্যাপারি আনোয়ার হোসেন বলেন, গত রোববার হাটে ৩২ টাকা কেজি পটল কিনে ঢাকার কেরাণীগঞ্জে ২৫ টাকা করে বেচতে হয়েছিল। কারণ বড় পাইকাররা দাম দিচ্ছেন না।

সাতমাইলের সবজি ব্যাপারি আবদুর রহমান জানালেন পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ার কথা।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আগে ঢাকায় যেতে ট্রাকভাড়া লাগত ১৩-১৪ হাজার টাকা। এখন ভাড়া নিচ্ছে ১৮ হাজার টাকা। এতে মালের দাম বেশি পড়লেও আমরা ঢাকায় সবজি নিয়ে দাম পাচ্ছি না। সাতমাইল থেকে তরকারি কিনে ঢাকাসহ বাইরের জেলাগুলোয় নিয়ে দাম পাচ্ছি না। খুচরা বাজারে ক্রেতা সংকট দেখিয়ে কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে তরকারি দাম।”

যশোরে সারা বছর সবজি আবাদ হয়। এ জেলায় বছরে গড়ে আট হাজার মেট্রিকটনের বেশি সবজি উৎপাদন হয় বলে যশোর আঞ্চলিক কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আক্তারুজ্জামান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, প্রতি হেক্টরে গড়ে ২৩-২৫ মেট্রিকটন করে সবজি উৎপাদন হয়। সম্প্রতি কৃষি বিভাগ সবজি উৎপাদনে যশোরকে প্রথম ঘোষণা  করেছে। কিন্তু এখন করোনাভাইরাসের কারণে সবজির দাম কম পাচ্ছেন চাষিরা।

বৃহস্পতিবার সাতমাইল বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতি কেজি পটল ২৫ থেকে ২৮ টাকা, মুলো ১৮ টাকা, উচ্ছে ৩০ টাকা, বেগুন আট টাকা, ঢ্যাঁড়শ ১০ টাকা, শিম ১৫ টাকা, লাউ প্রতিটি ১০ থেকে ১২ টাকা, বাঁধাকপি প্রতিটি ছয় টাকায় বিক্রি হয়েছে।