বৃহস্পতিবার বিকালে আরিফুলের পক্ষে অভিযোগের কপি দাখিল করেন বাংলা ট্রিবিউনের ঢাকার সিনিয়র রিপোর্টার নুরুজ্জামান লাবু। এ সময় আরিফুলের স্বজন ও স্থানীয় সাংবাদিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
অভিযোগে ওই রাতের নির্মম নির্যাতনের বর্ণনাসহ সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীন ও তিন সহকারী কমিশনারসহ অজ্ঞাত ৩৫/৪০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
রিগ্যান অভিযোগে জানান, ‘কাবিখার টাকায় পুকুর সংস্কার করে ডিসির নামে নামকরণ’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ এবং জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ নিয়ে রিপোর্ট করার উদ্দেশ্যে ফেইসবুকে ‘মুজিববর্ষের প্রাক্কালে কুড়িগ্রামে ব্যাপক নিয়োগ বাণিজ্যের জনশ্রুত চলছে, ঘটনা কী সত্য?’ শীর্ষক একটি স্ট্যাটাস দেন তিনি।
‘এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৪ মার্চ মধ্যরাতে সিনিয়র সহকারী কমিশনার নাজিম উদ্দিন ও আরো দুইজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ৩৫/৪০ জনের একটি দল তাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। এ সময় নাজিম উদ্দিন বলেন, কেউ তোকে বাঁচাতে পারবে না, ডিসি স্যার বলেছে তোকে উচিত শিক্ষা দিতে।’ এরপর জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ম্যাজিস্ট্রেটরা তাকে ডিসি অফিসে নিয়ে গিয়ে বিবস্ত্র করে নির্যাতন চালায়। পরে তার চোখবাঁধা অবস্থায় চারটি স্বাক্ষর নেয় এবং কারাগারে পাঠায়।’
নুরুজ্জামান লাবু বলেন, আরিফুল ইসলাম রিগ্যানের উপর যে ভয়াবহ নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছিল, সে ঘটনায় একটি ফৌজদারি মামলা রেকর্ড করার জন্য থানায় অভিযোগ দাখিল করেছি।
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসাধীন আরিফুল বলেন, আমাকে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে বিচার দাবি করছি।
গত ১৪ মার্চ রাত সোয়া ১২টায় অভিযুক্ত ব্যাক্তিরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আরিফুলের বাড়িতে ভাংচুর চালিয়ে মারধর করে তাকে তুলে নিয়ে আসেন। তাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে এনকাউন্টারের চেষ্টা চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে। পরে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে নিয়ে আবারো নির্যাতন করে মাদকের মামলা দিয়ে এক বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে কারাগারে পাঠানো হয় তাকে।
আরিফুলকে সাজা দেওয়ার পর দেশ জুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদ শুরু হয়। মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত করে দ্রুত পরিস্থিতির সামাল দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। চাপের মুখে আরিফ জামিনে মুক্তি পান। তদন্তে আরিফের প্রতি অন্যায় আচরণের প্রমাণ পাওয়ায় সোমবার কুড়িগ্রামের সেই জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভিনকে প্রত্যাহার করা হয়।
এছাড়া ওই আদেশে একই সঙ্গে তার এ কাজের সঙ্গী জেলা প্রশাসকের কার্যায়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার নাজিম উদ্দিন, সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা ও এস এম রাহাতুল ইসলামকে সরিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে নেওয়া হয়েছে।
কুড়িগ্রাম সদর থানার ওসি মাহফুজার রহমান জানিয়েছেন, অভিযোগটি অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় ব্যস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, মোহাম্মদ রেজাউল করিম বৃহস্পতিবার দুপুরে কুড়িগ্রামে জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগ দেন।
বিকালে এক অনুষ্ঠানে আরিফুল প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন,“সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছি। আইন সবার জন্য সমান এবং তা নিজস্ব গতিতে চলবে।”