খুলনায় চিকিৎসকের অবহেলায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ

সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনার কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক না থাকায় বিনা চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠছে।

খুলনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Jan 2020, 10:44 AM
Updated : 11 Jan 2020, 10:44 AM

বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আহত একজনকে শুক্রবার দুপুরে এ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তখন কর্তব্যরত চিকিৎসক জরুরি বিভাগে না থাকায় বিনা চিকিৎকায় এ মৃত্যু হয় বলে নিহতের স্বজনদের অভিযোগ।

নিহত মনি শংকর ওই উপজেলার আমাদি গ্রামের নিরঞ্জন সরকারের ছেলে।

এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে বিক্ষোভ করলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

তবে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রজ্ঞা লাবনী জানিয়েছেন, জরুরি বিভাগে আনার আগেই ওই রোগীর মৃত্যু হয়।

মনি শংকরের স্ত্রী মিনতি সরকার বলেন, “শুক্রবার আমাদি গ্রামের এক চিংড়ি হ্যাচারিতে ঝুলে থাকা বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে মনি শংকর আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হলে সেখানে কোনো চিকিৎসককে পাওয়া যায়নি।

“আমি হাসপাতালে উপস্থিত নার্সসহ অন্যান্য কর্মকর্তার পায়ে ধরি কিন্তু কেউ আমার স্বামীর পাশে আসেননি।'

মনি শংকরের ভাই ভবতোষ সরকার বলেন, “মনি শংকর কথা বলতে বলতে আমাদের সামনেই মারা গেছে।

“আমরা এক ডাক্তারের বাসায় গেলে তিনি আমাদের বলেন, ‘এটা আমাদের কাজ না’, স্যারের সঙ্গে কথা বলেন।”

“ঘণ্টাখানেক পর অবশ্য একজন ডাক্তার আসেন কিন্তু তিনি কিছু না বলেই চলে যান।”

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. পার্থ প্রতিম চিকিৎসকের অভাবে রোগী মৃত্যুর অভিযোগ নাকচ করে করে বলেন, “হাসপাতালে নিয়ে আসার পথে হয়ত ওই রোগী মারা যেতে পারেন।”

প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে প্রতিষ্ঠিত এ হাসপাতালে প্রায়ই ডাক্তার থাকেন না বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয় বাসিন্দা নিশিত রঞ্জন মিস্ত্রী।

তিনি বলেন, এখানে আগত রোগীদের ডাক্তারা বিভিন্ন অজুহাতে শহরের ক্লিনিকে পাঠান। ওইসব ক্লিনিক মালিকদের সঙ্গে ডাক্তারদের গোপন কমিশন চুক্তি রয়েছে বলে তার অভিযোগ।

তিনি বলেন, “হাসপাতালটির ইতিহাসে মাত্র এক বছরের (২০১৩-১৪) জন্য একজন গাইনি চিকিৎসক এসেছিলেন। তিনি বদলি হওয়ার পর আর কেউ আসেননি।

এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা সব ধরনের চিকিৎসা সেবা দিতে সক্ষম বলে দাবি করেন সেখানকার এক চিকিৎসক।

“কিন্তু প্রয়োজনীয় উপকরণ ও জনবল না থাকায় সেটা সম্ভব হয় না।”

আক্ষেপ করে তিনি বলেন,  যে কারণে জেলা শহরের বড় হাসপাতালে রেফার করতে হয়। অথচ অভিযোগ করা হয়, যোগ্যতার অভাবে আমরা সঠিকভাবে চিকিৎসাসেবা দিতে পারি না।

হাসপাতালটিতে জনবল সংকট কথা স্বীকার করে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. পার্থ প্রতিম বলেন, “এখানে চিকিৎসকের পদ রয়েছে ২৯টি। এর মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কর্মকর্তাও রয়েছেন। মেডিকেল কর্মকর্তা আছেন দুইজন। এছাড়া একজন করে রয়েছেন জুনিয়র কনসালট্যান্ট মেডিসিন, মেডিকেল কর্মকর্তা (আয়ুর্বেদিক), ডেন্টাল সার্জন ও মেডিকেল কর্মকর্তা (উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র) পদে।

আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা পদটি শূন্য। জুনিয়র কনসালট্যান্ট সার্জারি, গাইনি, শিশু, ইএনটি, অর্থোপেডিক্স, কার্ডিওলজি, চক্ষু ও চর্ম চিকিৎসকের পদগুলো শূন্য। সহকারী সার্জন, মেডিকেল কর্মকর্তা (সমমান), ইনডোর মেডিকেল কর্মকর্তা, ইমার্জেন্সি মেডিকেল কর্মকর্তা, প্যাথলজিস্ট ও এনেসথেটিস্ট পদও খালি। চিকিৎসা সহকারীসহ তৃতীয় শ্রেণির ১২২টি পদের ৪৭টিই খালি। চতুর্থশ্রেণির ৪৭ জনের স্থলে আছেন মাত্র আট জন বলে জানান তিনি।

এছাড়া  হাসপাতালটিতে অনেক যন্ত্রপাতি না থাকার কথা পেড়ে তিনি জানান,  ১৫ বছর ধরে একমাত্র এক্স-রে মেশিনটি নষ্ট। আল্ট্রাসনোগ্রাম করার জন্য প্যাথলজিস্ট নেই। ভবনটির অবস্থাও ঝুঁকিপূর্ণ।

এ ব্যাপারে খুলনার সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদের মুঠোফোনে কয়েক দফা যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়ায় বক্তব্য জানা সম্ভাব হয়নি।