ঋত্বিকের বাড়িতে চলচ্চিত্র কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার দাবি

চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক কুমার ঘটকের পৈত্রিক বাড়ি সংরক্ষণ করে সেখানে চলচ্চিত্র কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন হয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Jan 2020, 12:55 PM
Updated : 1 Jan 2020, 12:55 PM

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে চলচ্চিত্রবিষয়ক সংগঠন ম্যাজিক লণ্ঠন ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ বুধবার বেলা ১২টার দিকে এ কর্মসূচির আয়োজন করে।

মানববন্ধনে ঋত্বিক কুমার ঘটক চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি এফএমএ জাহিদ বলেন, “আমাদের শিক্ষিত হয়ে কী লাভ, যদি আমরা ঋত্বিক ঘটকের পৈতৃক ভিটা রক্ষা করতে না পারি?

“আমরা চাই চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটকের পৈতৃক ভিটায় চলচ্চিত্র কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হোক। আমরা প্রায় ১২ বছর ধরে এই আন্দোলন করছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন অব্যাহত রাখব।”

দাবির সঙ্গে সংহতি জানান নাট্যব্যক্তিত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মলয় কুমার ভৌমিক।

তিনি বলেন, “আমরা এ ধরনের আয়োজন শহরে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে এর আগেও বহুবার করেছি। কিন্তু কষ্টের বিষয় হচ্ছে এই, যখন প্রাজ্ঞ ব্যক্তিরা রাজশাহীতে আসেন তারা পঞ্চকবির এক কবি রজনীকান্ত সেনের বাড়িটি দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। উপমহাদেশের বিজ্ঞানসম্মত ইতিহাস সূচনা করা অক্ষয় কুমার মৈত্রেয়ের বাড়িটি দেখতে চান।

“উপমহাদেশের খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক কুমার ঘটকের বাড়িটি দেখতে চান। কিন্তু আমরা যারা এখানে দীর্ঘদিন ধরে সংস্কৃতিচর্চার সঙ্গে জড়িত, আমরা তাদের সেই বাড়িগুলোয় নিয়ে যাই বটে, কিন্তু যখন তারা বাড়িগুলোর চেহারা দেখে তখন লজ্জায় আমাদের মাথা নিচু হয়ে যায়। আমি জানি না আমাদের দেশে যারা সরকারে আছেন, তাদের লজ্জা লাগে কিনা। আমরা সংস্কৃতিকর্মীরা রাজনৈতিক কর্মীদের সঙ্গে একসঙ্গে চলতে পারি না বলেই আজকের এই দুর্দশা।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক আ-আল মামুন মানববন্ধনে যোগ দেন।

তিনি বলেন, “আমি মনে করি, ঋত্বিক কুমার ঘটক শুধু একা নন, এ রকম যে স্মৃতি, স্থাপনাগুলো আমাদের জাতীয় জীবনকে পরিগঠন করতে পারে, সে রকম সব স্মৃতির প্রতি যে একধরনের সর্বসম্মত ভুলে যাওয়ার সংস্কৃতি আছে, সেখান থেকে বেরিয়ে আসা দরকার।

“আশা করছি, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আমাদের এই দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করবে এবং ঋত্বিক কুমার ঘটকের বাড়ি পুনরুদ্ধার করে সেখানে অন্তত একটা করবে। ইনস্টিটিউট, স্টুডিও বা কিছু একটা, যেটা চলচ্চিত্রচর্চার সঙ্গে যুক্ত মানুষের কাজে লাগবে।”

বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক সাজ্জাদ বকুল, নাট্যকলা বিভাগের সভাপতি রহমান রাজু, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার, ফোকলোর বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অমিরুল ইসলাম, বরেন্দ্র ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি সুলতানুল ইসলাম, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী রাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক রনজু হাসান, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন রাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক মহব্বত হোসেন মিলন, বিশ্ববিদ্যায়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদ সাকী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি আব্দুল মজিদ অন্তর মানববন্ধনে ছিলেন।

রাজশাহী শহরের মিঞাপাড়ায় চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক কুমার ঘটকের বাড়ি ভেঙে সেখানে সাইকেল গ্যারেজ নির্মাণ করছিল রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ। পরে জেলা প্রশাসন কাজ বন্ধ করে দেয়।

ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি জাহিদ জানান, ওই বাড়িটি এরশাদ সরকারের আমলে ১৯৮৯ সালে রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজকে ইজারা দেওয়া হয়। ৯৯ বছরের জন্য ইজারা নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ বাড়িটি ব্যবহার করছে। পরে বাড়িটির এক অংশে বহুতল ভবন করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। আরেক অংশে যেসব কক্ষে ঋত্বিকরা থাকতেন সেসব কক্ষও ব্যবহার করছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। তারই এক অংশ ভেঙে অস্থায়ী বাইসাইকেল গ্যারেজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কলেজ কর্তৃপক্ষ। তারা ইতোমধ্যেই বাড়ির একটি অংশ ভেঙে ইট-সুরকি সরিয়ে ফেলেছে।

জাহিদ জানান, ঋত্বিক একসময় তার এই পৈত্রিক বাড়িতে থাকতেন। তিনি রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল ও রাজশাহী কলেজে পড়েছেন। তার শৈশব, কৈশোর ও তারুণ্যের একটি সময় কেটেছে এখানে। এই বাড়িতে কিছু সময় বসবাস করেছেন কথাসাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীও।

ঋত্বিক ১৯২৫ সালের ৪ নভেম্বর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ভারতের কলকাতা মৃত্যু বরণ করেন।

মেঘে ঢাকা তারা (১৯৬০), বাড়ি থেকে পালিয়ে (১৯৫৮), কমলগান্ধার (১৯৬১), তিতাস একটি নদীর নাম (১৯৭৩), যুক্তি তক্ক আর গল্প (১৯৭৪) তার বিশিষ্ট চলচ্চিত্র।