রাজশাহীর সেই আমবাগানে পাখির জন্য অভয়ারণ্য

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের আমবাগানে পাখির বাসা সংরক্ষণে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

বদরুল হাসান লিটন রাজশাহী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Nov 2019, 08:13 AM
Updated : 18 Nov 2019, 08:13 AM

উচ্চ আদালতের নির্দেশের পর ওই আমবাগানসহ দশ বিঘা জমি অধিগ্রহণের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ এসেছে বলে রাজশাহী জেলা প্রশাসক হামিদুল হক জানিয়েছেন।

তিনি জানান, এ ১০ বিঘা জমি নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এ জমির মালিক কারা তা-ও খোঁজ নেওয়া সম্পন্ন হয়েছে।

এ কাজ এখনও ‘প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, কয়েক দিনের মধ্যে পাখির এই অভ্যায়রণ্যর জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হবে।

খোর্দ্দ বাউসা গ্রামে সরেজমিনে দেখা যায়, কয়েশ বাচ্চা নিয়ে গাছে গাছে উড়ে বেড়াচ্ছে কয়েক হাজার শামুকখোল পাখি। অনবরত পাখির কিচিরমিচিরে চারপাশ মুখরিত।

আর এ পাখির কারণে খোর্দ্দ বাউসা গ্রামর এখন ‘পাখির গ্রাম’ বলে পরিচিতি পেয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, গত চার বছর ধরে শামুকখোল পাখিরা এই গ্রামের একটি আম বাগানে বাসা বেঁধে আছে। বর্ষার শেষে এসে তারা এখানে বাচ্চা ফোটায়। শীতের শুরুতে আবার চলে যায়। তবে এখন প্রায় সারা বছরই পাখিদের দেখা যায়।

সস্প্রতি খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের ওই আমবাগানের পাখিদের উচ্ছেদ নিয়ে সংবাদ আদালতের নজরে আসার পর পাখির বাসা না ভাঙার নির্দেশ দেয়।

বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীন রেজা বলেন, খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের আম ব্যবসায়ীরা বাগান পরিচর্যা করতে গিয়ে কয়েকটি গাছের বাসা ভেঙে দিলে হুমকির মুখে পড়ে হাজারো শামুকখোল পাখি। সে সময় স্থানীয়দের বাঁধার মুখে পিছিয়ে এলেও পাখির বাসা ছাড়তে ১৫ দিনের সময় বেঁধে দেন আম ব্যবসায়ীরা।

“বিষয়টি নিয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে গত ৩০ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রজ্ঞা পারমিতা একটি রিট আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই এলাকাকে কেন অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হবে না- তা জানাতে রুল জারি করে হাইকোর্ট।”

একই সঙ্গে পাখির বাসা ভাঙা যাবে না এবং ক্ষতির পরিমাণ জানতে চেয়ে চল্লিশ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য জেলা প্রশাসক ও তাকে হাইকোর্ট নির্দেশ দেয় বলে জানান শাহীন।

ওই নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। র‌্যাবসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা ওই বাগান নজরদারিতে রেখেছে বলেও জানান তিনি। 

জেলা প্রশাসক হামিদুল বলেন,“বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীন রেজা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বাগানে গিয়ে জরিপ করে দেখেছেন- সেখানে ৩৮টি আমগাছে পাখি বাসা বেঁধেছে। তারা এই গাছগুলোর আমের সম্ভাব্য দাম ও পরিচর্যার ব্যয় নিরূপণ করেন।

“এরপর গত ৫ নভেম্বর বাগানে পাখির বাসা রাখার জন্য বছরে ৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা বাগান মালিককে দেওয়ার বরাদ্দ চেয়ে- কৃষি মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল।

“এর প্রেক্ষিতে গত বুধবার মন্ত্রণালয় থেকে চলতি বছরের জন্য এ অর্থ বরাদ্দ দেয়। একই সঙ্গে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব পাখিদের জন্য স্থায়ীভাবে আমবাগানটি অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাবনা পাঠাতে চিঠি দিয়েছেন।”

তিনি বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ওই এলাকা পাখিদের জন্য অভয়ারণ্য করা যায় কিনা- সেটিসহ ওই বাগান ও আশপাশের ১০ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করার জন্য জরিপ করতে উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

“তাদের প্রতিবেদন পাওয়া গেলে পরিবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”

স্থায়ী অভয়ারণ্য করা গেলে পাখিরা আর অন্য কোথাও যাবে না। পাখিদের স্থায়ী আবাসন তৈরি করা হলে তাদের কেউ বিরক্তও করবে না বলে মনে করেজেলা প্রশাসক। 

বাঘা উপজেলা চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দিন লাভলু বলেন, “সাত বছর ধরে পাখিগুলো এ বাগানে আসা যাওয়া করে। জুন মাসের দিকে পাখিগুলো আসে। সেখানে বাসা বেঁধে বাচ্চা ফুটিয়ে আবার ডিসেম্বরের দিকে চলে যায়।

“গত চার বছর ধরে বেশ কিছু পাখি সারা বছর এখানে থাকছে। এই পাখি আমাদের অতিথি। তাদের আমরা তাড়িয়ে দিতে পারি না। তারা যেন বিরক্ত না হয় সে জন্য জমি অধিগ্রহণ করে বাগানটি অভয়ারণ্য করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।” 

বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, এই পাখিরা প্রতি বছর একই গাছে বাসা বাঁধে না। চার বছর আগে এই গ্রামের আমবাগানে এসেছে। আগামী বছর আবার অন্য কোথাও চলে যেতে পারে।

“এ জন্য অভয়ারণ্য ঘোষণা করা ঠিক হবে কি না সেটা বিবেচনায় রাখা উচিত।”

চার বছর আগে বাঘার পাশের পুঠিয়া উপজেলার শিলমাড়িয়া গ্রামের আমবাগানে বাসা বেঁধেছিল বলে জানান এই কর্মকর্তা।