ট্রেন দুর্ঘটনা: এসএসসির ফরম পূরণ হলো না ফারজানার

খালাত বোনের বিয়ের অনুষ্ঠানে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল গিয়েছিলেন এসএসসি পরীক্ষার্থী ফারজানা আক্তার। ফরম পূরণ করতে তাই তড়িঘড়ি চাঁদপুর বাড়ি ফিরছিলেন।

আল ইমরান শোভন চাঁদপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Nov 2019, 05:30 PM
Updated : 12 Nov 2019, 05:33 PM

কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ফারজানার সবকিছুর পরিসমাপ্তি ঘটেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে সোমবার রাত পৌনে ৩টার দিকে দুর্ঘটনায় পড়ে আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ও আন্তঃনগর তূর্ণা নিশীথা। এই দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ফারজানাও (১৫) রয়েছেন।

ফারজানার স্বজনরা জানান, মঙ্গলবার বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের শেষদিন হওয়ায় তড়িঘড়ি করে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শ্রীমঙ্গল থেকে উদয়ন এক্সপ্রেসে চাঁদপুরে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন।

ট্রেনটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মন্দবাগ রেলস্টেশন অতিক্রম করার সময় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী তূর্ণা নিশীথা এক্সপ্রেস ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই ফারজানা আক্তারের মৃত্যু হয়।

ফারজানা আক্তার

দুর্ঘটনায় তার মাসহ পরিবারের আরও সাত সদস্য আহত হন। ফারজানা চাঁদপুর সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের কাতার প্রবাসী বিল্লাল হোসেন বেপারীর মেয়ে। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে ফারজানা সবার ছোট। তিনি বাগাদী গনি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন।

ফারজানার বোন শামু বেগম (২৩) জানান, গত ৬ নভেম্বর  খালতো বোন ঝুমার বিয়েতে মা বেবী বেগম, নানু ফিরোজা বেগম, ভাই হাসান বেপারী, মামি সাহিদা বেগম, মামাত বোন মিতু আক্তার, মিতুর ছেলে দ্রুব, মামাত বোন ইবলিসহ আট জন সিলেটের শ্রীমঙ্গলে যান।

“তূর্ণা নিশীথা ও উদয়ন এক্সপ্রেসের সংঘর্ষে ট্রেনে থাকা ফারজানার পরিবারের আট সদস্য আহত হন। ঘটনাস্থলে মারা যান ফারজানা। দুর্ঘটনায় ফারজানার হাত পা দিখণ্ডিত হয় যায়। তার বড় ভাই হাসান বেপারীর দুটি পা দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। ফারজানার আহত স্বজনদের উদ্ধার করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

বাড়িতে শোকের ছায়া

ফারজানার কফিনের পাশে স্বজনের কান্না

দুপুরে ফারজানার লাশ তার গ্রামের বাড়ি বালিয়ায় এলে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। গ্রামবাসী ও স্কুলের সহপাঠীরা ফারজানাকে একনজর দেখতে তার বাড়িতে ভিড় করেন।

ফারজানার সহপাঠী বিলকিস আক্তার বলেন, “মঙ্গলবার বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলাপের শেষ দিন ছিল। ফরম ফিলাপের জন্য সে উদগ্রীব ছিল সে। তাই পরিবারের সদস্যদের সাথে সিলেট থেকে রওনা হয়। বিদ্যালয়ের টেস্ট পরীক্ষায় ফারজানা সকল বিষয়ে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়েছিল।”

বালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ফারজানার মৃতদেহ তাদের পারিবারিক কবরাস্থানে দাফন করা হয়েছে। সে অনেক মেধাবী ছাত্রী ছিল। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল ফারজানার।