ঐতিহ্যের বাঘিয়ার নৌকা বাইচে মেতেছে গোপালগঞ্জ

শতাধিক বছর থেকে চলে আসা ঐতিহ্যের বাঘিয়ার নৌকা বাইচ উৎসব শুরু হয়েছে গোপালগঞ্জে।

মনোজ সাহা গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Oct 2019, 06:04 AM
Updated : 15 Oct 2019, 06:04 AM

আবহমান গ্রাম বাংলার কৃষ্টি ধরে রাখতে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার বাবুর খালে কালিগঞ্জ বাজার থেকে খেজুরবাড়ি পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সোমবার শুরু হওয়া এ উৎসব শেষ হবে বুধবার।

দক্ষিণাঞ্চলের ‘সবচেয়ে বড়’ এই নৌকার উৎসবে গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, পিরোজপুর, নড়াইল, বরিশাল জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের দুই শতাধিক সরেঙ্গা, ছিপ, কোষা, চিলাকাটা, জয়নগর বাচারী নৌকা অংশ নিচ্ছে বলে জানিয়েছে আয়োজকরা।

লক্ষ্মী পূজার পর দিন থেকে প্রতিদিন দুপুর থেকে সন্ধ্যা চলে নানা বাহারের নৌকা অংশ নিচ্ছে এই উৎসবে।

কলাবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাইকেল ওঝা বলেন, “জলাভূমি বেষ্টিত কোটালীপাড়ার জীবন-জীবিকার প্রধান অবলম্বন ছিল নৌকা।

“প্রায় দুই শত বছর আগে লক্ষ্মী পূজার সময় নৌকা নিয়ে এলাকার মানুষ জমিদার শিবরাম চৌধুরীর বাড়িতে যেতেন।

“পূজা দেখে ফেরার সময় নৌকায় নৌকায় পাল্লা হতো। নৌকার মাধ্যমে চিত্তবিনোদনের চিন্তা থেকে নৌকা বাইচের প্রচলন শুরু হয়। সে থেকেই লক্ষ্মী পূজার পরের দিন থেকে এ অঞ্চলের নৌকা বাইচ হয়ে আসছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে। ”

ঐতিহ্যবাহী বিল বাঘিয়ার নৌকা বাইচ হিসেবে পরিচিত তিন দিনব্যাপী উসবে অংশ নিতে প্রতি বছরের মত এবারও লাখো মানুষের মিলন মেলা বসেছে কালিগঞ্জে। খালে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে একের পর এক নৌকা বাইচের পালা।

ঠিকারী ও কাঁশির বাদ্যের তালে জারি সারি গান গেয়ে-হেইও হেইও রবে বৈঠা চালাচ্ছে মাঝি-মল্লারা। দুইকূলে দাঁড়িয়ে মানুষজন হাততালি দিয়ে উৎসাহ যোগাচ্ছে।

ছোট বেলা থেকেই এ বাইচ দেখার অভিজ্ঞতা রয়েছে কোটালীপাড়া উপজেলার নলুয়া গ্রামের আইনজীবী বিজন বিশ্বাসের। তিনি বলেন, “এখানে কখনোই কাউকে বিশেষ দায়িত্ব নিয়ে বাইচের আয়োজন করতে হয় না। স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ এলাকার বাইচ হয়ে আসছে।”

কালিগঞ্জের নৌকা বাইচ দেখতে আসা মাদারীপুর জেলার কদমবাড়ি গ্রামের অপূর্ব বিশ্বসি বলেন, “জীবনে অনেক স্থানের নৌকা বইচ দেখেছি। কিন্তু এখানকার মত এত বড়, কালার ফুল ও রাজকীয় ঢং-এর নৌকা বাইচ আমি দেখিনি।”

গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার মানুষ নৌকাবাইচ উপভোগ করতে আসে উল্লেখ করে কোটালীপাড়া থানার ওসি শেখ লুৎফর রহমান জানান, এ মিলন মেলায় দর্শনার্থীদের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশ মোতায়েনসহ নৌকা বাইচ নির্বিঘ্নে শেষ করতে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস.এম মাহফুজুর রহমান বলেন, নদী মাতৃক এ অঞ্চলের দুইশ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী বাঘিয়া বিলের নৌকা বাইচ টিকিয়ে রাখতে উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব রকম সহযোগিতা করা হবে।

এবার এই উৎসবে বাড়তি আকর্ষণ যোগ হয়েছে-নৌকায় নৌকায় পসরা সাজিয়ে বসা মেলা।