জাবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সানোয়ার সিরাজের বিরুদ্ধে এক শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগের তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Sept 2019, 12:32 PM
Updated : 28 Sept 2019, 12:32 PM

এ দাবিতে শনিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ‘ মানববন্ধন করেছে।

অর্ধশতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর নিজ বিভাগের শিক্ষক সানোয়ার সিরাজের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলেন সরকার ও রাজনীতি বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির এক ছাত্রী। বিচার চেয়ে বিভাগের সভাপতির কাছে একটি অভিযোগও দায়ের করেন তিনি।

পরে অভিযোগ দেওয়ার ঘটনা নিয়ে ওই শিক্ষকসহ বিভাগের বিভিন্ন শিক্ষক কর্তৃক ‘অব্যাহত হয়রানির’ শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করছেন ওই শিক্ষার্থীর সহপাঠীরা। 

ওই শিক্ষার্থীর কয়েকজন সহপাঠী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রায় এক বছর আগের এই নিপীড়নের ঘটনা ঘটলেও কয়েকবার মৌখিক অভিযোগ দিয়ে কোনো বিচার পাননি ওই ছাত্রী। বরং শিক্ষক সানোয়ার সিরাজের ‘অব্যাহত হয়রানির’ ফলে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন তিনি।

মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে তিনি ‘২৬টি ঘুমের বড়ি খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা’ করেন বলেও তার এই সহপাঠীরা জানান।

তারা বলেন, গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ওই শিক্ষার্থীকে সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার পর কিছুটা সুস্থ হলে তাকে বাড়ি নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা।

এরপর ওই ছাত্রীকে যৌন হয়রানির এই ঘটনা প্রকাশ্যে এলে তা নিয়ে সরব হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

মানববন্ধনে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রুনু বলেন, “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান পূর্বেও ছিল, এখনও আছে। আমরা শিক্ষক হিসেবে সানোয়ারের আচরণে লজ্জা বোধ করছি। আমরা মনে করি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এ ধরনের নিপীড়ককে কোনোভাবেই ক্ষমা করবে না। এই কাজের জন্য সানোয়ারকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।”
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ জাবি শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন শিশির বলেন, “সানোয়ার সিরাজ শুধু যৌন নিপীড়ক, কিন্তু যৌন নিপীড়নের পর ওই ছাত্রীকে আরও যে নিপীড়ন করেছেন বিভাগের শিক্ষকরা তার জন্য সানোয়ারের সাথে সাথে তাদেরও শাস্তি পেতে হবে। কারণ, যৌন নিপীড়নের ঘটনা প্রকাশ করার পর ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে নিপীড়ন করছেন তারা। আমরা তাদের প্রতি ধিক্কার জানাই।”

ছাত্রফ্রন্ট বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সুস্মিতা মরিয়ম বলেন, “একজন শিক্ষক হওয়ার আগে একজন মানুষ হতে হয়। শিক্ষক সানোয়ার সিরাজ যে লাম্পট্যের পরিচয় দিয়েছেন, তাতে আমরা কোনোভাবেই তাকে একজন মানুষ বলতে পারি না। যৌন নিপীড়নের ঘটনা প্রকাশ করে ওই শিক্ষার্থী সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। এর জন্য আমরা তাকে সাধুবাদ দিতে চাই।”

“জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় মানিককে প্রশ্রয় দেয়নি; ঠিক তেমনি মানিকের উত্তরসূরী সানোয়ার সিরাজদের প্রশ্রয় দেবে না। যেকোনো মূল্যে তাকে ক্যাম্পাস ছাড়া করা হবে।“

ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সদস্য রাকিবুল রনি বলেন, “যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনের ফলে সারা দেশে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল হয়েছে, সেই বিদ্যাপীঠের কোনো শিক্ষকের কাছ থেকে এমন ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। এই ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। শাস্তি তাকে পেতেই হবে।”