গোপালগঞ্জে ছাত্র আন্দোলন: পদত্যাগী সহকারী প্রক্টরের নিরাপত্তা চেয়ে জিডি

গোপালগঞ্জে ভিসি পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে পদত্যাগ করা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চেয়েছেন।

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Sept 2019, 06:04 AM
Updated : 24 Sept 2019, 06:48 AM

সোমবার গভীর রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদত্যাগী সহকারী প্রক্টর মো. হুমায়ুন কবীর গোপালগঞ্জ সদর থানায় এই সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেন।

গত ১১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাতেমা-তুজ-জিনিয়াকে সময়িক বহিষ্কার করার পর সমালোচনার মুখে ১৮ সেপ্টেম্বর সেই আদেশ প্রত্যাহার করে নেয়  বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ভিসি প্রফেসর খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলন ঠেকাতে শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেন উপাচার্য। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে নামলে বহিরাগত একদল হামলা চালায় শিক্ষার্থীদের উপর।

জিডিতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক হুমায়ুন কবীর লেখেন, ‘গত ২১ সেপ্টেম্বর সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীর ওপর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন কর্তৃক হামলার প্রতিবাদে আমি সহকারী প্রক্টর পদ থেকে পদত্যাগ করি। এ জন্যে হুমায়ুন কবীর (Humayun kabir) নাম দিয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তি/ব্যক্তিরা ফেইসবুক আইডি খুলে সেটির মাধ্যমে বিভিন্ন উসকানিমূলক, চারিত্রিক ও মানহানিকর বিভিন্ন স্ট্যাস্টাস দিচ্ছে।

‘অজ্ঞাতনামা (ভিসিপন্থি) ব্যক্তিরা উক্ত ফেইসবুক আইডির মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার করছে। যাতে আমার সামাজিক ও পারিবারিক এবং শিক্ষকতা পেশায় সম্মানহানি হচ্ছে।’

গত ২১ সেপ্টেম্বর দুপুর ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিপন্থিরা তাকে গ্যারেজে পেয়ে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেয় বলেও জিডিতে লেখেন হুমায়ুন কবীর। 

জিডিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘যে কোনো সময় ভিসিপন্থিরা ফেইসবুক আইডির মাধ্যমে অপপ্রচার করে আমার বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে।’

পদত্যাগী সহকারী প্রক্টর মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ২১ সেপ্টেম্বর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ভিসি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ‘পরিকল্পিত হামলা’ করে।

“আগের দিন তারা এ ব্যাপারে বৈঠক করে। এ বৈঠকে আমি উপস্থিত ছিলাম। আমি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করি। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পর আমি সহকারী প্রক্টর পদ থেকে পদত্যাগ করি।”

তার এই বক্তব্যর প্রতিবাদে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সাংবাদিকদের কাছে পাঠায়।

কয়েকজন শিক্ষক নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশে শিক্ষার্থীদের অহিংস আন্দোলনের মধ্যে সহিংস রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা জানতে পেরেছি যে মো. হুমায়ুন কবীর আমাদের কমলমতি শিক্ষার্থীদের প্রশাসনের বিরুদ্ধে উসকে দেবার জন্য অনবরত বিভিন্ন রকম মিথ্যাচারের আশ্রয় নিচ্ছেন।

‘হুমায়ুন কবীর প্রশাসনের যে মিটিংয়ের কথা উল্লেখ করেছেন তা সম্পূর্ণ বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ ধরনের কোনো মিটিং বা সিদ্ধান্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে হয়নি।’

এছাড়া গত কয়েক মাস ধরে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য হিসেবে হুমায়ুন কবীর মিটিংয়ে অনুপস্থিত ছিলেন বলেও দাবি করেন তারা।

এ ব্যাপারে সহকারী প্রক্টর হুমায়ুন কবীর জানান, পদত্যাগ করার পর থেকে ভিসিপন্থি শিক্ষকদের হুমকির মুখে রয়েছেন তিনি।

“কয়েকজন শিক্ষক আমাকে মোবাইল ফোন করে গালিগালাজ করেছেন।

“নৈতিকভাবে আমাকে ছোট করার জন্য প্রক্টরিয়াল টিম এ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। কারণ ওই টিমের সব সদস্যই ভিসি সমর্থক শিক্ষক।”

ভিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের বিরুদ্ধে তার বক্তব্য শতভাগ সত্য বলেও দাবি করেন তিনি।

এদিকে ছাত্র আন্দোলন মঙ্গলবারও অব্যাহত রয়েছে। ভিসির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও কেলেঙ্কারি নিয়ে গান, কবিতা, ছড়া পরিবেশন করা হচ্ছে ‘আমরণ অনশন মঞ্চে’। একই সাথে এই হামলার ঘটনারও বিচার দাবি করছেন তারা।